পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ বঙ্কিমচন্দ্রের সব্বোৎকৃষ্ণটি উপন্যাস ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ সম্পবন্ধে বিভিন্ন দিক হইতে এযাবৎ আলোচনা হইয়াছে। উপন্যাসখানির বিষয়বস্তুর মলে যে পারিবারিক বিরোধ রহিয়াছে, নানা জনের কথায় ও আভাসে-ইঙ্গিতে তাহাও জানা গিয়াছে। পিতা যাদবচন্দ্রের একটি উইল লইয়া বঙ্কিমচন্দ্র ও তাঁহার ভ্রাতৃদ্বগের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হয়। ইহার ফলেই মনে হয় বঙ্কিমচন্দ্ৰ "বংগদর্শন’ ১২৮২ সালের চৈত্র পর্যঢ়ত্ব প্রকাশ করিয়া তুলিয়া দেন এবং কাঁটালপাড়ার পাট তুলিয়া চুচুড়ায় বাস করিতে থাকেন। বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর নিশেনাক্ত কথোপকথনেও ইহার আভাস মিলিতেছে : “এক বৎসরের পর হঠাৎ আমাকে দেখিয়া তিনি [ বঙ্কিমচন্দ্ৰ ] খশী হইলেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “আপনি ত চুচূড়ায় বাসা করিয়াছেন, ইহার ভিতরে কি কিছ. কৃষ্ণকান্তী আছে ?” তিনি বলিলেন, “তুমি ঠিক বঝিয়ােছ। আমি বড় খশী হইলাম, তোমার কাছে আমার বিশেষ কৈফিয়ৎ দিতে হইল না।” (বঙ্কিম-প্রসঙ্গ, পঃ ১৬১) বঙ্কিমচন্দ্র সর্বাস্থ্যভঙ্গ হেতু মালদহের রোড সেসের কায্য হইতে ছয় মাসের ছটি লইয়া ১৮৭৫, জন মাসে কাঁটালপাড়ায় আসেন। এই সময় ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ রচনা করেন বলিয়া অনমিত হয়। ১২৮২ সালের পৌষ, মাঘ ও ফালগন সংখ্যা “বঙগদশ্যনে” এখানির কিয়দংশ প্রকাশিত হইল। চৈত্র সংখ্যায় কিছই বাহির হয় নাই। চৈত্র সংখ্যা প্রকাশের পর বঙ্কিমচন্দ্র “বঙ্গদর্শন’ বন্ধ করিয়া দিলেন। শচীশচন্দ্র। ইহার পরবত্তীর্ণকার ঘটনাদি সম্পবন্ধে বলেন, “বঙ্কিমচন্দ্রের হৃদয়ে ধৰ্ম্মমভােব বদ্ধমল হয়—আত্মীয়ের সহিত মনোমালিন্য বিদ্যুরিত হয়-- 'বঙ্গদর্শন’ পািনজজীবিত করিবার আয়োজন হয়।” (বঙ্কিম-জীবনী, ৩য় সং, পঃ ১১১)। ১২৮৪ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস হইতে ‘বঙ্গদশন’ পােনরায় বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যমাগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্রের সম্পাদনায় বাহির হইল। "কৃষ্ণকান্তের উইল’ ও বৈশাখ সংখ্যা হইতে পােনরায় বাহির হইয়া মাঘ সংখ্যায় সমাপত হইল। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ রচনাকালের দই একটি কৌতুকপণ অথচ জ্ঞাতব্য কাহিনী এখানে উল্লেখ করিব। কনিষ্ঠ সহোদর পণচন্দ্র লিখিতেছেন : “একদিন বঙ্কিমচন্দ্র কৃষ্ণকান্তের উইল-চুরি পরিচ্ছেদ লিখিতেছিলেন, এমন সময়ে পাঁচটার ট্রেনে কলিকাতা হইতে তাঁহার দটি বন্ধ আসিলেন। তিনি কাগজ কলম ফেলিয়া উঠিলেন। আমি তাঁহাকে অননুরোধ করিলাম, “কি লিখিতেছিলেন বলিয়া দিন, আমি উহা লিখিব।” তিনি আমার আবদার রক্ষা করিয়া হাসিতে হাসিতে লিখিতে অনমতি দিয়া, ঐ পরিচ্ছেদে কি লিখিতে হইবে, বলিয়া দিলেন। আমি তখন ঐ হাসির অর্থ বঝিতে পারি নাই, পরে লিখিতে বসিয়া বঝিলাম—দেখিলাম, 'ব্ৰহ্মার বেটা বিষ্ণ আসিয়া বােষভারঢ়ে মহাদেবের কাছে এক কৌটা। আফিং কর্তজা লইয়া এই দলিল লিখিয়া দিয়াই বিশবরহ্মান্ড বন্ধক রাখিয়াছিলেন, মহাদেব গাঁজার ঝোঁকে ফোরাক্লোজ কবিতে ভুলিয়া গিয়াছেন।” এই পৰ্যন্ত লিখিয়াছেন। এই সরে লেখা আমার অসাধ্য বঝিয়া আমি এই স্থানে রোহিণীকে আনিয! কৃষ্ণকান্তের সহিত সাক্ষাৎ করাইলাম, এবং তাঁহাদের উভয়ের কথোপকথন আমার সাধ্যমত লিখিলাম। পরদিন বন্ধগণ চলিয়া গেলে বণ্ডিকমচন্দ্র ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ লিখিতে বসিয়া ঐ পরিচ্ছেদে আমার লেখার প্রথমাংশ অর্থাৎ রোহিণীর সহিত কৃষ্ণকান্তের আফিমের ঝোঁকে কথোপকথন নতন করিয়া লিখিলেন, আমার লেখার অবশিস্ট অংশতে ‘দোমোটোমো” করিতে হয় নাই, তবে এক আধা সন্থানে ‘মাটি’ লাগাইয়াছেন।” (বঙ্কিম-প্রসঙ্গ, ৭৭-৮) ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ ১৮৭৮ সনে (ভাদ্র ১২৮৫) প্রথমে পস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। বঙ্কিমের জীবিতকালে ইহার চারিটি সংস্করণ হইয়াছিল। চতুর্থ সংস্করণ বাহির হয় ১৮৯২ সনে। বণ্ডিকমচন্দ্র এই উপন্যাসখানির বিশেষ সংস্কার সাধন করেন। ‘বওগদশন’ হইতে পােস্তকাকারে প্রকাশিত হইলে ইহার রোহিণী ও গোবিন্দলালের চরিত্র পরিবত্তিত করা হয়। প্রথম দিককার দশচরিত্রা, লোভী রোহিণী পরবত্তীর্ণ সংস্করণে আশ্চয্যরকম বদলাইয়া গিয়াছে; রোহিণী দশচরিত্রা নয়, লোভী মোটেই নয়। গোবিন্দলালের চরিত্র ‘বঙ্গদর্শন’ এবং প্রথম তিন সংস্করণের পস্তকে প্রায় অনােরােপ। চতুর্থ সংস্করণের শেষাংশে বঙ্কিমচন্দ্ৰ যে সংস্কার সাধন করিয়াছেন তাহাতে গোবিন্দলালের চরিত্রও পািব্বাপর বদলাইয়া গিয়াছে। আগেকার গোবিন্দলাল W)b"