পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্ৰশেখর সে ভৈরবী রাগিণীতে কাণের কাছে মদ বীণা বাজাইতেছে না। ক্ৰমে দেখিবে, বায়ার বড় গডজন বাড়িল-বড় হাহাঙ্কারের ঘটা ; তরঙ্গসকল হঠাৎ ফলিয়া উঠিয়া, মাথা নাড়িয়া আছড়াইয়া পড়িতে লাগিল, অন্ধকার করিল। প্রতিকােল বায় নৌকার পথ রোধ করিয়া দাঁড়াইল --নৌকার মািখ ধাঁরয়া জলের উপর আছড়াইতে লাগিল—কখন বা মািখ ফিরাইয়া দিল—তুমি ভােব বঝিয়া পবনদেবতাকে প্ৰণাম করিয়া, নৌকা তীরে রাখিলে। শৈবলিনীর নৌকার দশা ঠিক এইরাপ ঘটিল। অলপ বেলা হইলেই বায, প্রবল হইল। বড় নৌকা, প্ৰতিকােল বায়তে আর চলিল না। রক্ষকেরা ভদ্রহাটির ঘাটে নৌকা রাখিল । ক্ষণকাল পরে নৌকার কাছে, এক নাপিতানী আসিল। নাপিতনী সধবা, খাটো রাওগাপেড়ে সাড়ীপরা—সাড়ীর রাঙ্গা দেওয়া আচিলা আছে-হাতে আলতার চুপড়িী। নাপিতানী নৌকার উপর অনেক কাল কাল দাড়ী দেখিয়া ঘোমটা টানিয়া দিয়াছিল। দাড়ীর অধিকারিগণ অবাক হইয়া নাপিতনীকে দেখিতেছিল। একটা চরে শৈবলিনীর পাক হইতেছিল—“এখনও হিন্দয়ানি আছে-—একজন ব্রাহ্মণ পাক করিতেছিল। একদিনে কিছ বিবি সাজা যায় না। ফন্টর জানিতেন যে, শৈবলিনী যদি না পলায়, অথবা প্রাণত্যাগ না করে, তবে সে অবশ্য একদিনে টেবিলে বসিয়া যবনের কৃত পাক, উপাদেয় বলিয়া ভোজন করিবে। কিন্তু এখনই তাড়াতাড়ি কি ? এখন তাড়াতাড়ি করিলে সকল দিক নস্ট হইবে। এই ভাবিয়া ফন্টের ভূতাদিগের পরামর্শমতে শৈবলিনীর সঙ্গে ব্রাহ্মণ দিয়াছিলেন। ব্রাহ্মণ পাক করিতেছিল, নিকটে একজন দাসী দাঁড়াইয়া উদ্যোগ করিয়া দিতেছিল। নাপিতনী সেই দাসীর কাছে গেল, বলিল, “হাঁ গা—তোমরা কোথা থেকে আসচ গা ?” চাকরাণী রাগ করিল—বিশেষ সে ইংরেজের বেতন খায়—বলিল, “তোর তা কি রে মাগী ! আমরা হিল্লী, দিল্লী, মক্কা থেকে আসচি।” নাপিতনী অপ্রতিভ হইয়া বলিল, “বলি তা নয়, বলি। আমরা নাপিত—তোমাদের নৌকায় যদি মেয়ে ছেলে কেহ কামায়। তাই জিজ্ঞাসা করিতেছি।” চাকরাণী একটি নরম হইল। বলিল, “আচ্ছা জিজ্ঞাসা করিয়া আসি।” এই বলিয়া সে শৈবলিনীকে জিজ্ঞাসা করিতে গেল যে, তিনি আলতা পরিবেন কি না। যে কারণেই হউক, শৈবলিনী অন্যমন হইবার উপায় চিন্তা করিতেছিলেন, বলিলেন, “আলতা পরিব।” তখন রক্ষকদিগের অনািমতি লইয়া, দাসী নাপিতনীকে নৌকার ভিতর পাঠাইয়া দিল। সে স্বয়ং পািব্বমত পাকশালার নিকটে নিযন্ত রহিল। নাপিতনী শৈবলিনীকে দেখিয়া আর একটা ঘোমটা টানিয়া দিল। এবং তাঁহার একটি চরণ লইয়া আলতা পরাইতে লাগিল। শৈবলিনী কিয়ৎকাল নাপিতনীকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন। দেখিয়া দেখিয়া বলিলেন, “নাপিতনী, তোমার বাড়ী কোথা ?” లాగి কথা কহিল না। শৈবলিনী আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “নাপিতনী, তোমার নােম কি ?” তথাপি উত্তর পাইলেন না। “নাপিতনী, তুমি কাঁদচ ?” নাপিতনী মদ সাবরে বলিল, “না।” “হাঁ, কাঁদচ।” বলিয়া শৈবলিনী নাপিতনীর অবগঠিন মোচন করিয়া দিলেন। নাপিতনী বাসতবিক কাঁদিতেছিল। অবগ"ঠন মন্ত হইলে নাপিতনী একট, হাসিল। শৈবলিনী বলিলেন, “আমি আসতে মাত্র চিনেছি। আমার কাছে ঘোমটা! মরণ আর কি ? তা এখানে এলি কোথা হতে ?” নাপিতানী আর কেহ নহে—সন্দরী ঠাকুরঝি। সন্দরী চক্ষের জল মাছিয়া কহিল, “শীঘ্ৰ যাও ! আমার এই সাড়ী পর, ছাড়িয়া দিতেছি। এই আলতার চুপড়িী নাও। ঘোমটা দিয়া নৌকা হইতে চলিয়া যাও।” শৈবলিনী বিমনা হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি এলে কেমন করে ?” স। কোথা হইতে আসিলাম—কেমন করিয়া আসিলাম—সে পরিচয়, দিন পাই ত এর পর দিব। তোমার সন্ধানে এখানে আসিয়াছি। লোকে বলিল, পালকী গঙ্গার পথে গিয়াছে। আমিও প্রাতে উঠিয়া কাহাকে কিছ না বলিয়া, হাঁটিয়া গঙগাতীরে আসিলাম। লোকে বলিল, 8 OS,