পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दकब ब्रष्नाबढी ফাস্টরের এই কথা সিথর হইল যে, যদি নবাব নৌকা ছাড়িয়া দেন ভালই; নচেৎ কাল প্রাতে ফন্ডটির অস্ত্রের নৌকা ফেলিয়া পাটনায় চলিয়া যাইবেন। ফন্টরের দইখানি নৌকা মঙ্গেরের ঘাটে বাঁধা। একখানি দেশী ভড়—আকারে বড় বহৎ --আর একখানি বজরা। ভড়ের উপর কয়েক জন নবাবের সিপাহী পাহারা দিতেছে। তীরেও কয়েক জন সিপাহী। এইখানিতে অস্ত্র বোঝাই—একখানি গরগণ খাঁ আটক করিতে চাহেন। বজরা খানিতে অস্ত্র বোঝাই নহে। সেখানি ভড় হইতে হাত পঞ্চাশ দরে আছে। সেখানে কেহ নবাবের পাহারা নাই। ছাদের উপর একজন “তেলিঙগা” নামক ইংরেজীদিগের সিপাহী বসিয়া নৌকা রক্ষণ করিতেছিল। রাত্ৰি সান্ধ-দিবপ্রহর। অন্ধকার রােত্র, কিন্তু পরিস্কার। বজরার পাহারাওয়ালারা একবার উঠিতেছে, একবার বসিতেছে, একবার ঢালিতেছে। তীরে একটা কসাড় বন ছিল। তাহার অন্তরালে থাকিয়া এক ব্যক্তি কাহাকে নিরীক্ষণ করিতেছে। নিরীক্ষণকারী স্বয়ং প্রতাপ রায় । প্ৰতাপ রায় দেখিলেন, প্রহরী ঢালিতেছে। তখন প্ৰতাপ রায় আসিয়া ধীরে ধীরে জলে নামিলেন। প্রহরী জলের শাৰদ পাইয়া ঢলিতে ঢলিতে জিজ্ঞাসা করিল, “হকুমদার ?” প্রতাপ রায় উত্তর করিলেন না। প্রহরী ঢালিতে লাগিল। নৌকার ভিতরে ফন্টর সতক হইয়া জাগিয়া ছিলেন। তিনিও প্রহরীর বাক্য শনিয়া, বজরার মধ্য হইতে ইতস্ততঃ দলিট করিলেন। দেখিলেন, একজন জলে সনান করিতে নামিয়াছে। এমত সময়ে কসাড় বন হইতে অকস্মাৎ বন্দকের শব্দ হইল। বজরার প্রহরী গলির দবারা আহত হইয়া জলে পড়িয়া গেল। প্ৰতাপ তখন যেখানে নৌকার অন্ধকার ছায়া পড়িয়াছিল, সেইখানে আসিয়া ওঠ পয্যন্ত ডুবাইয়া রহিলেন। বন্দকের শব্দ হইবামাত্র, ভড়ের সিপাহীরা “কিয়া হৈ রে?” বলিয়া গোলযোগ করিয়া ভুঞ্জ, নাকার অপরাপর লােক জাগরিত হইল। ফন্টর বদকে হাতে কািরয়া বাহির লরেন্স ফন্ডটির বাহিরে আসিয়া চারি দিক ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। দেখিলেন, তাঁহার “তেলিঙগা” প্রহরী অন্তহিত হইয়াছে—নক্ষত্ৰলোকে দেখিলেন, তাহার মতদেহ ভাসিতেছে। প্রথমে মনে রিলেন, নবাবের সিপাহীরা মারিয়াছে—কিন্তু তখনই কসােড় বনের দিকে অলপ ধােমরেখা দেখিলেন। আরও দেখিলেন, তাঁহার সঙ্গের দ্বিতীয় নৌকার লোক সকল বত্তান্ত কি জানিবার জন্য দৌড়িয়া আসিতেছে। আকাশে নক্ষত্র জীবলিতেছে ; নগরমধ্যে আলো জীবলিতেছে-গঙ্গাকালে শত শত বহত্তরণী’-শ্রেণী, অন্ধকারে নিদ্রিতা রাক্ষসীর মত নিশ্চেন্ট রহিয়াছে—কল কল রবে অনন্তপ্রবাহিণী গণ্ডগা ধাবিত হইতেছেন। সেই স্রোতে প্রহরীর শব ভাসিয়া যাইতেছে। পলকমধ্যে ফন্টর এই সকল দেখিলেন। কসােড় বনের উপর ঈষত্তরল ধর্মরেখা দেখিয়া, ফন্টের সবাহ সাতস্থিত বন্দক উত্তোলন করিয়া সেই বনের দিকে লক্ষ্য করিতেছিলেন। ফন্টের বিলক্ষণ বঝিয়াছিলেন যে, এই বনান্তরালে লক্কায়িত শত্র আছে। ইহাও বঝিয়াছিলেন যে, যে শত্র অদশ্য থাকিয়া প্রহরীকে নিপাত করিয়াছিল, সে এখনই তাঁহাকেও নিপাত করিতে পারে। কিন্তু তিনি পলাসীর যন্ধের পর ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন ; দেশী লোকে যে ইংরেজকে লক্ষ্য করবে, এ কথা তিনি মনে সথান দিলেন না। বিশেষ ইংরেজ হইয়া যে দেশী শত্রকে ভয় করিবে—তাহার মাতৃত্যু ভাল। এই ভাবিয়া তিনি সেইখানে দাঁড়াইয়া বন্দক উত্তোলন করিয়াছিলেন-কিন্তু তন্ম হত্তে কসাড় বনের ভিতর অগিনি-শিখা জবলিয়া উঠিল—আবার বন্দকের শবদ হইল—ফন্টের মস্তকে আহত হইয়া, প্রহরীর ন্যায়, গঙ্গাস্রোতোমধ্যে পতিত হইলেন। তাঁহার হস্তস্থিত বন্দক সশব্দে নৌকার উপরেই পড়িল । প্রতাপ সেই সময়ে, কটি হইতে ছরিকা নিস্কোষিত করিয়া, বজরার রন্ধনরজিজাসকল কাটিলেন। সেখানে জল অলপ, স্রোতঃ মন্দ বলিয়া নাবিকেরা নওগাঁর ফেলে নাই। ফেলিলেও লঘহস্ত, বলবান প্রতাপের বিশেয বিঘা ঘটিত না। প্রতাপ এক লাফ দিয়া বজরার উপর উঠিলেন। এই ঘটনাগলি বৰ্ণনায় যে সময় লাগিয়াছে, তাহার শতাংশ সময় মধ্যেই সে সকল সম্পন্ন হইয়াছিল। প্রহরীর পতন, ফন্টেরের বাহিরে আসা, তাঁহার পতন, এবং প্রতাপের নৌকারোহণ, 8 RO