পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5FT এই সকলে যে সময় লাগিয়াছিল, ততক্ষণে দিবতীয় নৌকার লোকেরা বজরার নিকটে আসিতে র নাই। কিন্তু তাহারাও আসিল। আসিয়া দেখিল, নৌকা প্ৰতাপের কৌশলে বাহির-জলে গিয়াছে। একজন সাঁতার দিয়া নৌকা ধরিতে আসিল, প্ৰতাপ একটা লাগি তুলিয়া তাহার মস্তকে মারিলেন। সে ফিরিয়া গেল। আর কেহ অগ্রসর হইল না। সেই লাগিতে জলতল সপলিস্ট করিয়া প্ৰতাপ আবার নৌকা ঠেলিলেন। নৌকা ঘরিয়া গভীর স্রোতোমধ্যে পড়িয়া বেগে পাকবাভিমখে ছটিল। লাগি হাতে প্ৰতাপ ফিরিয়া দেখিলেন, আর একজন “তেলিঙগা” সিপাহী নৌকার ছাদের উপর জান, পাতিয়া, বসিয়া বন্দক উঠাইতেছে। প্রতাপ লাগি ফিরাইয়া সিপাহীর হাতের উপর মারিলেন ; তাহার হােত অবশ্য হইল—বন্দক পড়িয়া গেল। প্রতাপ সেই বন্দক তুলিয়া লইলেন। ফন্টরের হস্তচু্যত বন্দকও তুলিয়া লইলেন। তখন তিনি নৌকাস্থিত সকলকে বলিলেন, “শন, আমার নাম প্ৰতাপ রায়। নবাবও আমাকে ভয় করেন । এই দই বন্দক আর লগির বাড়ী— বোধ হয়, তোমাদের কয়জনকে একেলাই মারিতে পারি। তোমরা যদি আমার কথা শন, তবে কাহাকেও কিছ বলিব না। আমি হালে যাইতেছি, দাঁড়ীরা সকলে দাঁড় ধরাক। আর আর সকলে যেখানে যে আছ, সেইখানে থাক। নড়িলেই মরিবে—নচেৎ শওকা নাই।” এই বলিয়া প্ৰতাপ রায় দাঁড়ীদিগকে এক একটা লাগির খোঁচা দিয়া উঠাইয়া দিলেন। তাহারা ভয়ে জড়সড় হইয়া দাঁড় ধরিল। প্রতাপ রায় গিয়া নৌকার হাল ধরিলেন। কেহ আর কিছ বলিল না। নৌকা দ্রুতবেগে চলিল। ভড়ের উপর হইতে দই একটা বন্দকের আওয়াজ হইল, কিন্তু কাহাকে লক্ষ্য করিতে হইবে, নক্ষত্ৰলোকে তাহা কিছ, কেহ অবধারিত করিতে না পারাতে সে শবদ তখনই নিবারিত হইল। তখন ভড় হইতে জন কয়েক লোক বন্দক লইয়া এক ডিভিগতে উঠিয়া, বজরা ধরিতে আসিল। প্ৰতাপ প্রথমে কিছ: বলিলেন না। তাঁহারা নিকটে আসিলে, দাইটি বন্দকেই তাহাদিগের উপর লক্ষা করিয়া ছাড়িলেন। দই জন লোক আহত হইল। অবশিষ্ট লোক ভীত হইয়া, ডিঙগী ফিরাইয়া পলায়ন করিল। কসােড় বনে লক্কায়িত রামচরণ, প্রতাপকে নিম্পকন্টক দেখিয়া এবং ভড়ের সিপাহীগণ কসাড়বন খজিতে আসিতেছে দেখিয়া ধীরে ধীরে সরিয়া গেল। ষািঠ পরিচ্ছেদ ঃ বজ্ৰাঘাত সেই নৈশ-গঙগাবিচারিণী তরণীমধ্যে নিদ্রা হইতে জাগিল—শৈবলিনী । বজরার মধ্যে দাইটি কামরা—একটিতে ফন্টের ছিলেন, আর একটিতে শৈবলিনী এবং তাহার দাসী। শৈবলিনী এখনও বিবি সাজো নাই—-পরণে কালে পেড়ে সাড়ী, হাতে বালা, পায়ে মল— সঙ্গে সেই পােরন্দরপরের দাসী পাৰ্ব্বতী। শৈবলিনী নিদ্রিতা ছিল—শৈবলিনী সর্বপন দেখিতেছিল—সেই ভীমা পঙ্করিণীর চারি পাশে জলসংস্পৰ্শ প্রাথি শাখারাজিতে বাপনীতীর অন্ধকারের রেখায্যক্ত-শৈবলিনী যেন তাহাতে পদ্ম হইয়া মখ ভাসাইয়া রহিয়াছে। সরোবরের প্রান্তে যেন এক সাবণ নিমিত রাজহংস বেড়াইতেছে—তীরে একটা শেবত শািকর বেড়াইতেছে। রাজহংস দেখিয়া, তাহাকে ধরিবার জন্য শৈবলিনী যেন উৎসক হইয়াছে; কিন্তু রাজহংস তাহার দিক হইতে মািখ ফিরাইয়া চলিয়া যাইতেছে। শংকর শৈবলিনীপদ্মকে ধরিবার জন্য ফিরিয়া বেড়াইতেছে, রাজহংসের মািখ দেখা যাইতেছে না, কিন্তু শকরের মািখ দেখিয়া বোধ হইতেছে যেন, ফক্টরের মাখের মত। শৈবলিনী রাজহংসকে ধরিতে যাইতে চায়, কিন্তু চরণ মণাল হইয়া জলতলে বদ্ধ হইয়াছে—তাহার গতিশক্তি রহিত। এদিকে শািকর বলিতেছে, “আমার কাছে আইস, আমি হাঁস ধরিয়া দিব।” প্রথম বন্দকের শব্দে শৈবলিনীর নিদ্ৰা ভাঙিগয়া গেলতাহার পর প্রহরীর জলে পড়িবার শবদ শানিল। অসম্পপণ্য —ভগন নিদ্রার আবেশে কিছকাল বঝিতে পারিল না। সেই রাজহংস—সেই শােকর মনে পড়িতে লাগিল। যখন আবার বন্দকের শবদ হইল, এবং বড় গন্ডগোল হইয়া উঠিল, তখন তাহার সম্পপণ্য নিদ্রাভঙ্গ হইল। বাহিরের কামরায় আসিয়া দবার হইতে একবার দেখিল—কিছল বঝিতে পারিল না। আবার ভিতরে আসিল । ভিতরে আলো জবুলিতেছিল। পাব্বিতীও উঠিয়াছিল। শৈবলিনী পাৰ্ব্ববতীকে জিজ্ঞাসা করিল, “কি হইতেছে, কিছ বঝিতে পারিতেছ?” 8 NR NS