পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दकाश ब्रष्न्बव्ी পা। কিছ না। লোকের কথায় বোধ হইতেছে, নৌকায় ডাকাত পড়িয়াছে-সাহেবকে মারিয়া ফেলিয়াছে। আমাদেরই পাপের ফল। শৈ। সাহেবকে মারিয়াছে, তাতে আমাদের পাপের ফল কি ? সাহেবেরই পাপের ফল । পা। ডাকাত পড়িয়াছে—বিপদ আমাদেরই। শৈ। কি বিপদৰ ? এক ডাকাতের সঙ্গে ছিলাম, না হয়। আর এক ডাকাতের সঙ্গে যাইব । যদি গোরা ডাকাতের হােত এড়াইয়া কালা ডাকাতের হাতে পড়ি, তবে মন্দ কি ? এই বলিয়া, শৈবলিনী ক্ষদ্র মস্তক হইতে পঠোপরি বিলম্বিত বেণী আন্দোলিত করিয়া, একটা হাসিয়া, ক্ষদ্র পালঙ্কের উপর গিয়া বসিল। পাব্বিতী বলিল, “এ সময়ে তোমার হাসি আমার সহ্য হয় না।” শৈবলিনী বলিল, “অসহ্য হয়, গঙ্গায় জল আছে, ডুবিয়া মর। আমার হাসির সময় উপস্থিত হইয়াছে, আমি হাসিব । একজন ডাকাতকে ডাকিয়া আন না, একটা জিজ্ঞাসা-পড়া করি।” পাৰ্ব্ববতী রাগ করিয়া বলিল, “ডাকিতে হইবে না; তাহারা আপনারাই আসিবে।” কিন্তু চারি দণ্ডকাল পর্যন্ত অতিবাহিত হইল, ডাকাত কেহ আসিল না। শৈবলিনী তখন দঃখিত হইয়া বলিল, “আমাদের কি কপাল! ডাকাতেরাও ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করে না।” পাঝবতী কাঁপিতেছিল। অনেকক্ষণ পরে নৌকা আসিয়া এক চরে লাগিল। নৌকা সেইখানে কিছশক্ষণ লাগিয়া রহিল। পরে, তথায় কয়েক জন লাঠিয়াল এক শিবিকা লইয়া উপস্থিত হইল। আগ্ৰে অগ্ৰে রামচরণ | শিবিকা, বাহকেরা চরের উপর রাখিল । রামচরণ বজরায় উঠিয়া প্ৰতাপের কাছে গেল । পরে প্রতাপের উপদেশ পাইয়া সে কামরার ভিতর প্রবেশ করিল। প্রথমে সে, পাৰ্ব্ববতীর মািখপ্রতি চাহিয়া শেষে শৈবলিনীকে দেখিল। শৈবলিনীকে বলিল, “আপনি নামনা।” শৈবলিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে,-কোথায় যাইবে ?” রামচরণ বলিল, “আমি আপনার চাকর। কোন চিন্তা নাই—আমার সঙ্গে আসন। সাহেব মরিয়াছে।” শৈবলিনী নিঃশবেদ গাত্ৰোথান করিয়া রামচরণের সঙ্গে আসিলেন। রামচরণের সঙ্গে সঙ্গে নৌকা হইতে নামিলেন । পার্ববর্তী সঙ্গে যাইতেছিল-- রামচরণ তাহকে নিষেধ করিল। পাববতী ভয়ে নৌকার মধ্যেই রহিল, রামচরণ শৈবলিনীকে শিবিকামধ্যে প্রবেশ করিতে বলিলে, শৈবলিনী শিবিকারঢ়ো হইলেন। রামচরণ শিবিকা সঙ্গে প্ৰতাপের গহে গেল। তখনও দলনী এবং কুলসমৰ সেই গহে বাস করিতেছিল। তাহাদিগের নিদ্রা ভঙ্গ হইবে বলিয়া যেখানে তাহারা ছিল, সেখানে শৈবলিনীকে লইয়া গেল না। উপরে লইয়া গিয়া তাঁহাকে বিশ্রাম করিতে বলিয়া, রামচরণ আলো জবালিয়া রাখিয়া শৈবলিনীকে প্ৰণাম করিয়া, দবার রদ্ধ করিয়া বিদায় হইল । শৈবলিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কাহার বাড়ী ?” রামচরণ সে কথা কাণে তুলিল না। রামচরণ আপনার বন্ধি খরচ করিয়া শৈবলিনীকে প্রতাপের গহে আনিয়া তুলিল, প্রতাপের সেরপ অনন্মতি ছিল না। তিনি রামচরণকে বলিয়া দিয়াছিলেন, “পাল্যকৰী জগৎশেঠের গাহে লইয়া যাইও ।” রামচরণ পথে ভাবিলে-“এ রাত্রে জগৎশেঠের ফটক খোলা পাইব কি না ? দবারবানেরা প্রবেশ করিতে দিবে কি না ? জিজ্ঞাসিলে কি পরিচয় দিব ? পরিচয় দিয়া কি আমি খনে বলিয়া ধরা পড়িব ? সে সকলে কাজ নাই; এখন বাসায় . যাওয়াই ভাল।” এই ভাবিয়া সে পালকী বাসায় আনিল । এদিকে প্রতাপ, পালকী চলিয়া গেল দেখিয়া, নৌকা হইতে নামিলেন। পর্ক্সেবাই সকলে কিছ বলিল না। প্রতাপ নৌকা হইতে অবতরণ করিয়া আত্মগাহাভিমখে চলিলেন। তিনি গহন্দীবারে আসিয়া দবার ঠেলিলে, রামচরণ দাবার মোচন করিল। রামচরণ যে তাহার আজ্ঞার বিপরীত কাৰ্য্য করিয়াছে, তাহা গহে আসিয়াই রামচরণের নিকট শনিলেন। শনিয়া কিছ: বিরক্ত হইলেন। বলিলেন, “এখনও তাঁহাকে সঙ্গে করিয়া জগৎশেঠের গহে লইয়া যাও । ডাকিয়া লইয়া আইস।” 8 SR SR