পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b८२ বকাউল্লা তথায় আসিয়া দেখিল, কুঠিতে একটা বড় গোল পড়িয়া গিয়াছে। বজরার বক্তান্ত আমিয়ট সকল শনিয়াছেন। শনিল, আমিয়ট সাহেব বলিয়াছেন যে, যে অদ্য রাত্রেই অত্যাচারীদিগের সন্ধান করিয়া দিতে পরিবে, আমিয়ট সাহেব তাহাকে সহস্র মাদ্রা পারিতোষিক দিবেন। বকাউল্লা তখন আমিয়ট সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিল—তাঁহাকে সবিশেষ বত্তিান্ত বলিল,—বলিল যে, “আমি সেই দস্যর গহ দেখাইয়া দিতে পারি।” আমিয়ট সাহেবের মািখ প্রফতুল্ল হইল-কুঞ্চিত ভ্ৰ ঋজ হইল—তিনি চারি জন সিপাহী এবং একজন না।এককে বকাউল্লার সঙেগ যাইতে অননুমতি করিলেন। বলিলেন যে, দরোত্মাদিগকে ধরিয়া এখনই আমার নিকটে লইয়া আইস। বিকাউল্লা কহিল, “তবে দাই জন ইংরেজ সঙ্গে দিউন—প্ৰতাপ রায় সাক্ষাৎ সায়তান—এ দেশীয় লোক তাহাকে ধরিতে পরিবে না।” গলম্পটন ও জনসন নামক দাই জন ইংরেজ আমিয়টের আজ্ঞামত বকাউল্লার সঙ্গে সশস্ত্রে চলিলেন। গমনকালে গলন্ডটন বিকাউল্লাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি সে বাড়ীর মধ্যে কখন किाशछिंब्ल ?” বকাউল্লা বলিল, “না।” গলািম্পটন জনসনকে বলিলেন, “তবে বাতি ও দেশলাইও লও। হিন্দ, তেল পোড়ায় না। —খরচ হইবে।” জনসন পকেটে বাতি ও দীপশলাকা গ্রহণ করিলেন। তাঁহারা তখন, ইংরেজীদিগের রণ-যাত্রার গভীর পদবিক্ষেপে রাজপথ বহিয়া চলিলেন । কেহ কথা কহিল না। পশ্চাতে পশ্চাতে চারি জন সিপাহী, না এক ও বকাউল্লা চলিল। নগরপ্রহরিগণ পথে তাঁহাদিগকে দেখিয়া, ভীত হইয়া সরিয়া দাঁড়াইল৷ গলম্পটন ও জনসন সিপাহী লইয়া প্রতাপের বাসার সম্মখে নিঃশব্দে আসিয়া, দবারে ধীরে ধীরে করাঘাত করিলেন। রামচরণ উঠিয়া দবার খলিতে আসিল। রামচরণ অদ্বিতীয় ভৃত্য। পা টিপিতে, গা টিপিতে, তৈল মাখাইতে সশিক্ষিতহস্ত। বস্ত্ৰকুণ্ডনে, অঙ্গরাগাকরণে বড় পাট । রামচরণের মত ফরাশ নাই—তাহার মত দ্রব্যক্লেতা দিল্লভ। কিন্তু এ সকল সামান্য গণ্য। রামচরণ লাঠিবাজিতে মরশিদাবাদ প্রদেশে প্রসিদ্ধ-অনেক হিন্দ ও যবন তাহার হস্তের গণে ধরাশয়ন করিয়াছিল। বন্দকে রামচরণ কেমন অভ্রান্তলক্ষ্য এবং ক্ষিপ্ৰহসন্ত, তাহার পরিচয় ফভাটরের শোণিতে গঙ্গাজলে লিখিত হইয়াছিল। কিন্তু এ সকল অপেক্ষা রামচরণের আর একটি সময়োপযোগী গণ ছিল—ধত্তিতা । রামচরণ শগালের মত ধত্তি । অথচ অদ্বিতীয় প্রভুভক্ত এবং বিশ্ববাসী। রামচরণ দবার খলিতে আসিয়া ভাবিল, “এখন দয়ারে ঘা দেয় কে ? ঠাকুর মশায় ? বোধ কিন্তু যা হোক একটা কান্ড করিয়া আসিয়াছি—ব্রাত্রিকালে না দেখিয়া দয়ার খোলা হইবে না।” এই ভাবিয়া রামচরণ নিঃশব্দে আসিয়া কিয়ৎক্ষণ দবারের নিকট দাঁড়াইয়া শবদ শনিতে লাগিল। শনিল, দই জনে অসফটস্বরে একটা বিকৃত ভাষায় কথা কহিতেছে — রামচরণ তাহাকে “ইণিডেল মিনিডল” বলিত— এখনকার লোকে বলে, ইংরেজি। রামচরণ মনে মনে বলিল, “রসো, বাবা! দয়ার খালি ত বন্দক হাতে করিয়া—ইণ্ডিল মিনিডলে যে বিশ্ববাস করে, সে শ্যালা।” রামচরণ আরও ভাবিল, “বঝি একটা বন্দকের কাজ নয়, কৰ্ত্তাকেও ডাকি।” এই ভাবিয়া রামচরণ প্রতাপকে ডাকিবার অভিপ্ৰায়ে দাবার হইতে ফিরিল। এই সময়ে ইংরেজীদিগেরও ধৈৰ্য্য ফরাইল। জনসন বলিল, “অপেক্ষা কেন, লাথি মার, ভারতবষীয় কবাট ইংরেজি লাথিতে টিকিবে না।” গলণ্ডটন লাথি মারিল। দবার, খড় খড়, ছড় ছড়, ঝন ঝন করিয়া উঠিল। রামচরণ দৌড়িল। শবদ প্ৰতাপের কাণে গেল। প্রতাপ উপর হইতে সোপান অবতরণ করিতে লাগিলেন । সে বার কবাট ভাঙিগল না। পরে জনসন লাথি মারিল। কিবাট ভাঙ্গিয়া পড়িয়া গেল। “এইরপে ব্রিটিশ পদাঘাতে সকল ভারতবর্ষ ভাঙিগয়া পড়াক।” বলিয়া ইংরেজেরা গহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। সঙেগ সঙেগ সিপাহিগণ প্রবেশ করিল। 8之@