পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

basa খানসামা শৈবলিনীকে লইয়া প্রথমে সিপাহীদের কাছে গেল। সিপাহীদের নিকট কিছই ছিল না। তখন খানসামা, যে নৌকায় সেই ব্ৰাহ্মণ কয়েদী ছিল, শৈবলিনীকে সেই নৌকায় লইয়া গেল। ব্রাহ্মণ কয়েদী, প্রতাপ রায়। একখানি ক্ষদ্র পান সীতে, একা প্ৰতাপ। বাহিরে, আগে পিছে সান্ত্রীর পাহারা। নৌকার মধ্যে অন্ধকার । খানসামা বলিল, “ওগো ঠাকুর!” প্ৰতাপ বলিল, “কেন ?” খা। তোমার হাঁড়িতে ভাত আছে ? প্ৰ । কেন ? খা। একটি ব্রাহ্মণের মেয়ে উপবাসী আছে। দটি দিতে পাের ? প্রতাপেরও ভাত ছিল না। কিন্তু প্ৰতাপ তাহা স্বীকার করিলেন না। বলিলেন, “পারি। আমার হাতের হাতকড়ি খলিয়া দিতে বল।” খানসামা সান্ত্রিীকে প্রতাপের হাতকড়ি খলিয়া দিতে বলিল। সান্ত্ৰী বলিল, “হকুম び不ssTS l" খানসামা হাকুম করাইতে গেল। পরের জন্য এত জল বেড়াবেড়ি কে করে ? বিশেষ পীরবক্স সাহেবের খানসামা ; কখন ইচ্ছাপাকবািক পরের উপকার করে না। পথিবীতে যত প্রকার মনষ্যে আছে, ইংরেজীদিগের মসলমান খানসামা সব্বাপেক্ষা নিকৃস্ট। কিন্তু এখানে পীরবক্সের একটা সবাৰ্থ ছিল। সে মনে করিয়াছিল, এ সত্ৰীলোকটার খাওয়া দাওয়া হইলে ইহাকে একবার খানসামা মহলে লইয়া গিয়া বসাইব । পীরবক্স শৈবলিনীকে আহার করাইয়া বাধ্য করিবার জন্য ব্যস্ত হইল। প্রতাপের নৌকায় শৈবলিনী বাহিরে দাঁড়াইয়া রহিল—খানসামা হকুম করাইতে আমিয়ট সাহেবের নিকট গেল। শৈবলিনী অবগন্ঠনাব তা হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। সন্দর মাখের জয় সব্বত্র। বিশেষ সন্দর মখের অধিকারী যদি যাবতী সত্ৰী হয়, তবে সে মাখ অমোঘ অস্ত্র। আমিয়ট দেখিয়াছিলেন যে, এই “জেন্ট” সত্ৰীলোকটি নির পমা রপবতী-তাহাতে আবার পাগল শনিয়া একটা দয়াও হইয়াছিল। আমিয়ট জমাদার দ্বারা প্রতাপের হাতকড়ি খলিয়া দিবার এবং শৈবলিনীকে প্রতাপের নৌকার ভিতর প্রবেশ করিতে দিবার অনািমতি পাঠাইলেন। খানসামা আলো আনিয়া দিল। সান্ত্রী প্ৰতাপের হাতকড়ি খলিয়া দিল। খানসামাকে সেই নৌকার উপর আসিতে নিষেধ করিয়া প্ৰতাপ আলো লইয়া মিছামিছি। ভাত বাড়িতে বসিলেন। অভিপ্রায় পলায়ন। শৈবলিনী নৌকার ভিতর প্রবেশ করিল। সান্ত্রীরা দাঁড়াইয়া পাহারা দিতেছিল-নৌকার ভিতর দেখিতে পাইতেছিল না। শৈবলিনী ভিতরে প্রবেশ করিয়া, প্রতাপের সম্মখে গিয়া অবগগঠন মোচন করিয়া বসিলেন। প্ৰতাপের বিস্ময় আপনীত হইলে, দেখিলেন, শৈবলিনী অধর দংশন করিতেছে, মািখ ঈষৎ হষপ্ৰফল্লি,—মখমন্ডল সিথরপ্রতিজ্ঞার চিহ্নযক্ত। প্ৰতাপ মানিল, এ বাঘের যোগ্য বাঘিনী বটে। শৈবলিনী অতিলঘস্বরে, কাণে কাণে বলিল, “হােত ধোও—আমি কি ভাতের কাঙগাল ?” প্ৰতাপ হাত ধাইল। সেই সময়ে শৈবলিনী কাণে কাণে বলিল, “এখন পলাও। বাঁক ফিরিয়া যে ছিপ আছে, সে তোমার জন্য।” প্রতাপ সেইরােপ স্বরে বলিল, “আগে তুমি যাও, নচেৎ তুমি বিপদে পড়িবে।” শৈ। এই বেলা পলাও । হাতকড়ি দিলে আর পলাইতে পরিবে না। এই বেলা জলে ঝাঁপ দাও । বিলম্ব করিও না। একদিন আমার বন্ধিতে চল । আমি পাগল—জলে ঝাঁপি দিয়া পড়িব । তুমি আমাকে বাঁচাইবার জন্য জলে ঝাঁপ দাও। এই বলিয়া শৈবলিনী উচ্চৈহাস্য করিয়া উঠিল। হাসিতে হাসিতে বলিল, “আমি ভাত খাইব না।” তখনি আবার ক্ৰন্দন করিতে করিতে বাহির হইয়া বলিল, “আমাকে মসলমানের ভাত খাওয়াইয়াছে—আমার জাত গোল—মা গঙ্গা ধরিও ।” এই বলিয়া শৈবলিনী গঙ্গার স্রোতে ঝাঁপ দিয়া পড়িল । “কি হইল ? কি হইল ?” বলিয়া প্ৰতাপ চীৎকার করিতে করিতে নৌকা হইতে বাহির হইল। সান্ত্রী সম্মখে দাঁড়াইয়া নিষেধ করিতে যাইতেছিল। “হারামজাদা! সত্ৰীলোক ডুবিয়া