পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্ৰশেখর মনষ্যের ইন্দ্রিয়ের পথ রোধ কর—ইন্দ্রিয় বিলপতি কর—মনকে বাঁধ,-বাঁধিয়া একটি পথে ছাড়িয়া দাও—অন্য পথ বন্ধ কর—মনের শান্তি অপহৃত করা-—মন কি করিবে ? সেই এক পথে যাইবে—তাহাতে স্থির হইবে।--তাহাতে মজিবো। শৈবলিনী পঞ্চম দিবসে আহরিত ফল মল খাইল না-ষষ্ঠ দিবসে ফল মল আহরণে গেল না—সপতম দিবসে প্রাতে ভাবিল, সর্বামিদর্শন পাই না পাই—অদ্য মরিব । সপ্তম রাত্ৰে মনে করিল, হৃদয়মধ্যে পদ্মফল ফটিয়াছে—তাহাতে চন্দ্রশেখর যোগাসনে বসিয়া আছেন; শৈবলিনী ভ্রমর হইয়া পাদপদ্মে গণগণে করিতেছে। সপ্ততম রাত্রে সেই অন্ধকার নীরব শিলাককািশ গহামধ্যে, একাকী সর্বামিধ্যান করিতে করিতে শৈবলিনী চেতনা হারাইল। সে নানা বিষয় সর্বপন দেখিতে লাগিল। কখন দেখিল, সে ভয়ঙ্কর নরকে ডুবিয়াছে, অগণিত, শতহস্তপরিমিত, সপগণ অযত ফণা বিস্তার করিয়া, শৈবলিনীকে জড়াইয়া ধরিতেছে; অযত মন্ডে মািখব্যাদান করিয়া শৈবলিনীকে গিলিতে আসিতেছে, সকলের মিলিত নিশবাসে প্রবল বাত্যার ন্যায় শব্দ হইতেছে। চন্দ্রশেখর আসিয়া, এক বহৎ সপোের ফণায় চরণ সস্থাপন করিয়া দাঁড়াইলেন; তখন সাপ সকল বন্যার জলের ন্যায় সরিয়া গেল। কখন দেখিল, এক অনন্ত কুন্ডে পৰ্ব্ববতাকার অগিন জীবলিতেছে। আকাশে তাহার শিখা উঠিতেছে ; শৈবালিনী তাহার মধ্যে দগধ হইতেছে ; এমত সময়ে চন্দ্রশেখর আসিয়া সেই অগিনপৰ্ব্ববতমধ্যে এক গন্ডািষ জল নিক্ষেপ করিলেন, আমনি অগিনরাশি নিবিয়া গেল ; শীতল পবন বহিল, কুন্ডলমধ্যে সবচ্ছসলিলা তরতরবাহিনী নদী বহিল, তীরে কুসমে সকল বিকশিত হইল, নদীজলে বড় বড় পদ্মফল ফটিল—চন্দ্রশেখর তাহার উপর দাঁড়াইয়া ভাসিয়া যাইতে লাগিলেন। কখন দেখিল, এক প্রকান্ড ব্যাঘ্ৰ আসিয়া শৈবলিনীকে মাখে করিয়া তুলিয়া পৰ্ব্ববর্ততে লইয়া যাইতেছে ; চন্দ্রশেখর আসিয়া পাজার পশুপপাত্র হইতে একটি পক্ষপ লইয়া ব্যাঘ্রকে ফেলিয়া মারিলেন, ব্যাঘ্র তখনই ভিন্ন শিরা হইয়া প্রাণত্যাগ করিল, শৈবলিনী দেখিল, তাহার মািখ ফন্সটরের মাখের ন্যায়। রাত্রিশেষে শৈবলিনী দেখিলেন, শৈবলিনীর মাতু্য হইয়াছে অথচ জ্ঞান আছে। দেখিলেন, পিশাচে তাহার দেহ লইয়া অন্ধকারে শান্যপথে উড়িতেছে। দেখিলেন, কত কৃষ্ণমেঘের সমদ্র, কত বিদািদগিনরাশি পার হইয়া তাহার কেশ ধরিয়া উড়াইয়া লইয়া যাইতেছে। কত গগনবাসী অপসরা কিন্নরাদি মেঘতরঙ্গ মধ্য হইতে মখমন্ডল উত্থিত করিয়া, শৈবলিনীকে দেখিয়া হাসিতেছে। দেখিলেন, কত গগনচারিণী জ্যোতিৰ্ম্মময়ী দেবী সর্বণ-মেঘে আরোহণ করিয়া, সবণ কলেবর বিদ্যুতের মালায় ভূষিত করিয়া, কৃষ্ণকেশাবত ললাটে তারার মালা গ্রথিত করিয়া বেড়াইতেছে,- শৈবলিনীর পাপময় দেহসপ্যািট পবনস্পশে তাহদের জ্যোতিঃ নিবিয়া যাইতেছে। কত গগনচারিণী। ভৈরবী রাক্ষসী, অন্ধকারবৎ শরীর প্রকান্ড অন্ধকার মেঘের উপর হেলাইয়া ভীম বাত্যায় ঘরিয়া ক্ৰীড়া করিতেছে —শৈবলিনীর পতিগন্ধবিশিস্ট মতদেহ দেখিয়া তাহদের মাখের জল পড়িতেছে, তাহারা হাঁ করিয়া আহার করিতে আসিতেছে। দেখিলেন, কত দেব দেবীর বিমানের কৃষ্ণতাশন্যা উত্তজবলালোকময়ী ছায়া মেঘের উপর পাড়িয়াছে; পাছে পাপিষ্পঠা শৈবলিনীশবের ছায়া বিমানের পবিত্র ছায়ায় লাগিলে শৈবলিনীর পাপক্ষয় হয়, এই ভয়ে তাঁহারা বিমান সরাইয়া লাইতেছেন। দেখিলেন, নক্ষত্ৰসন্দরীগণ নীলাম্বরমধ্যে ক্ষদ্র ক্ষদ্র মািখগলি বাহির করিয়া সকলে কিরণময় অণ্ডগলির দবারা পরস্পরকে শৈবলিনীর শব্ব দেখাইতেছে—বলিতেছে—“দেখ, ভগিনি, দেখ, মনষ্যে-কীটের মধ্যে আবার অসতী আছে!” কোন তারা শিহরিয়া চক্ষ বজিতেছে ; কোন তারা লডজায় মেঘে মািখ ঢাকিতেছে; কোন তারা অসতীর নাম শানিয়া ভয়ে নিবিয়া যাইতেছে। পিশাচেরা শৈবলিনীকে লইয়া উদ্ধেব উঠিতেছে, তার পর আরও উদ্ধেব, আরও মেঘ, আরও তারা পার হইয়া আরও উদ্ধেব উঠিতেছে। অতি উদ্ধেব উঠিয়া সেইখান হইতে শৈবলিনীর দেহ নরককুন্ডে নিক্ষেপ করিবে বলিয়া উঠিতেছে। যেখানে উঠিল, সেখানে অন্ধকার, শীত,-মেঘ নাই, তারা নাই, আলো নাই, বায় নাই, শব্দ নাই। শব্দ নাই—কিন্তু অকস্মাৎ অতি দরে অধঃ হইতে অতি ভীম কলকল ঘরঘর শব্দ শনা যাইতে লাগিল—যেন অতিদারে, অধোভাগে, শত সহস্ৰ সমদ্র এককালে গজিতেছে। পিশাচেরা বলিল, ঐ নরকের কোলাহল শানা যাইতেছে, এইখােন হইতে শব ফেলিয়া দাও । এই বলিয়া পিশাচেরা শৈবলিনীর মস্তকে পদাঘাত করিয়া শব ফেলিয়া দিল। শৈবলিনী ঘারিতে ঘারিতে, ঘরিতে ঘারিতে, পড়িতে লাগিল। ক্ৰমে ঘণগতি বন্ধি পাইতে লাগিল, অবশেষে কুম্ভকারের চক্রের ন্যায় ঘারিতে লাগিল। শবের মাখে, নাসিকায়, রক্তবমন হইতে লাগিল। ক্ৰমে নরকের গডজনি নিকটে শনা। যাইতে 88CA