পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ বিল আন্দোলনের (১৮৮৩) সর্বাচনা হয় নাই। উক্ত নবজাতীয়তী-বোধকে সপথে চালনা করা বিশেষ আবশ্যক ছিল। প্ৰভু ইংরেজকে অগ্রাহ্য করিলেও দেশের যথার্থ উন্নতির পথে ইংরেজী শিক্ষার প্রসার, পাশ্চাত্ত্য বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক প্রণালী অবলম্বন প্রভৃতির প্রয়োজনীয়তা চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ বিশেষভাবে অনভব করিতেছিলেন। বণ্ডিকমচন্দ্র ইহারও শতাধিক বৎসর পব্বেকার ঘটনা অবলম্বনে সবদেশবাসীকে এই কথাই যেন বিশেষ করিয়া বঝাইতেছিলেন। মাতৃভূমির মন্তি সাধনের উপায় নাতন যাগৈ যে নব নব রােপ পরিগ্রহ করিয়া থাকে একথা অমান সন্দর ও রসপািলত করিয়া আর কে বঝাইবে ? আনন্দমঠের ভাব-কলপনা ও রচনা সম্পবন্ধে নানা কথাই সমসাময়িকদের প্রমখাৎ আমরা জ্ঞাত হই। কনিষ্ঠ সহোদর পণচন্দ্র লিখিয়াছেন যে, তাঁহারা কয় ভ্রাতা খল্লপিতামহের নিকট ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কথা প্রথম শনেন। তাঁহার গলপ করিবার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। পণচন্দ্র বলেন : “সেকালের লোক ‘ফসল”, “অজন্মা’, এই সকল কথার সব্বদা আন্দোলন করিতে ভালবাসিত। মেজঠাকুরদা প্রথমে ফসলের কথা তুলিলেন। পরে কি প্রকারে তিল তিল করিয়া মন্বন্তর ভীষণ মাত্তি ধারণ করিয়া বঙ্গদেশ ছারখার করিল, তাহা বিবত করিলেন। তিন চার বৎসর পািকব হইতে অজন্মা হইল, আর ঐ বৎসর (১১৭৬ সালে) ফসল হইল না; এই কয় বৎসর অজন্মার ফলে নিম্নশ্রেণীর লোকদের আহার বন্ধ হইল, পরে মধ্য শ্রেণীর গহিসেথর, পরে ধনবানদেরও আহার বন্ধ হইল। এই শেষোক্তশ্রেণীর লোকদিগের কাহারও কাহারও লক্ষ লক্ষ টাকা পোতা থাকিত (সেকালে এইরপ টাকা সঞ্চিত থাকিত), তবও তাহারা অনাহারে মরিতে লাগিল, কেন না। টাকা খাইতে পারে না, টাকাতে ধানচাল কিনিবে, তাহা দেশে নাই। এই রােপ অবস্থাতে বঙ্গে নানাপ্রকার পীড়ার আবিভােব হইয়া, অবশেষে চুরি ডাকাতি আরম্ভ হইল। যাহাঁদের ঘরে টাকা পোতা ছিল, তাহারাও অন্নাভাবে চোর ডাকাত হইল।” (বঙ্কিম-প্ৰসঙ্গ, পঃ ৫১-৫২) ইহার পর পাণচন্দ্র লিখিয়াছেন, “তিনি এ গলপ ভুলিয়া গিয়াছেন, কিন্তু তাঁহার অগ্রজ বঙ্কিমচন্দ্র এ গলপ ভুলেন নাই। কেন না। ১৮৬৬ সনে উড়িষ্যার দাভিক্ষের সময়ে আবার তাঁহার মখে শনিয়াছিলেন।” তিনি বলেন, “আমার বোধ হয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের অবলম্বনে কোন উপন্যাস লিখিবার তাঁহার অনেক দিন ইচ্ছা ছিল, কিন্তু যৌবনে লেখেন নাই, কিঞ্চিৎ পরিণত বয়সে। ‘আনন্দমঠ' লিখিলেন।” ‘আনন্দমঠে” সন্নিবেশিত দই একটি কবিতা ও সঙ্গীত সম্পবন্ধেও পৰ্ণচন্দ্ৰ লিখিয়াছেন—“ধীর সমীরে তটিনীতীরে, বসতি বনে বরনারী। মা কুর, ধনদর্ধার, গমনবিলক্ষবন অতি বিধারা সংকুমারী” বল্যের এই প্রিয় কবিতাটি এবং “হরে মর্যারে মধকৈটভারে। গোপাল গোবিন্দ মকুন্দশৌরে। হারে মর্যারে মধকৈটভারে।” বাল্যে শ্রত এই সঙ্গীত কয়টি অগ্রজ বণ্ডিকমচন্দ্র ‘আনন্দমঠে” রাখিয়া গিয়াছেন। ‘আনন্দমঠে” সন্নিবেশিত ‘বন্দে মাতরম' সঙ্গীত সম্বন্ধে পৰ্ণচন্দ্রের উক্তি ‘জীবনী’ অধ্যায়েই উদ্ধত করা হইয়াছে। সঞ্জীবচন্দ্র সম্পপাদিত ‘বঙ্গদশ্যনে” ‘আনন্দমঠ” ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় (চৈত্র ১২৮৭— জ্যৈষ্ঠ ১২৮৯) । শেষোক্ত সালেই, ইং ১৮৮২ সনে ‘আনন্দমঠ” পাসন্তকাকারে প্রকাশিত হয়। বণ্ডিকমের জীবিতকালে ইহার পাঁচটি সংস্করণ বাহির হইয়াছিল। পঞ্চম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৮৯২ খ্রীস্টাব্দে। বঙ্কিমচন্দ্র অন্যান্য উপন্যাসের ন্যায় প্রতি সংস্করণেই ইহার সংস্কার ও সংশোধন করিয়াছেন। অভিন্ন হৃদয় সািহদা পরলোকগত দীনবন্ধ মিত্রের উদ্দেশে তিনি ‘আনন্দমঠ” উৎসগ করেন। উৎসগ পত্রে তিনি লেখেন : ক ন মাং ত্বদধীনজীবিতং বিনিকীয্য ক্ষণভিন্নষসৌহৃদঃ । নলিনীং ক্ষতসেতুবন্ধনো জলসংঘাত ইবাসি বিদ্রতঃ ॥ “সবগে মত্ত্যে সম্প্ৰবন্ধ আছে। সেই সম্প্ৰবন্ধ রাখিবার নিমিত্ত এই গ্রন্থের এরােপ উৎসগ হইল।” ‘আনন্দমঠের মািল ভাব বৰ্ব্বাইবার জন্য বঙ্কিমচন্দ্ৰ শ্ৰীমদভগবদগীতার দাবাদশ অধ্যায় হইতে নিম্নের শোলাক চতুৰ্লটয় উদ্ধত করেন : “যে তু সব্বণি কম্পমণি ময়ি সংন্যস্য মৎপরাঃ। অনন্যেনৈব যোগেন মাং ধ্যায়ন্ত উপাসতে ৷ 8良