পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্ৰশেখর চন্দ্র। আছে ; কেন মরিতে চাও ? শৈবলিনী শিহরিল। বলিল, “মরিতে পারিব না—সেই নরকে পড়িব ।” চন্দ্র। প্ৰায়শিচত্ত করিলে নরক হইতে উদ্ধার হইবে। শৈ। এ মনোনরক হইতে উদ্ধারের প্রায়শিচত্ত কি ? চন্দ্র। সে কি ? শৈ। এ পৰ্ব্ববর্ততে দেবতারা আসিয়া থাকেন। তাঁহারা আমাকে কি করিয়াছেন বলিতে পারি না—আমি রাত্ৰিদিন নরক-স্বপন দেখি । চন্দ্রশেখর দেখিলেন, শৈবলিনীর দক্ৰিট গােহাপ্রান্তে স্থাপিত হইয়াছে—যেন দরে কিছ. দেখিতেছে। দেখিলেন, তাহার শীর্ণ বদনমন্ডল বিশস্ত্ৰক হইল।–চক্ষ বিসফারিত, পলাকরহিত হইল—-নাসারন্ধু সঙ্কুচিত, বিস্ফারিত হইতে লাগিল—শরীর কণাটকিত হইল-কাঁপিতে লাগিল! চন্দ্রশেখর জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি দেখিতেছি ?” শৈবলিনী কথা কহিল না, পৰ্ব্বব্যাবৎ চাহিয়া রহিল। চন্দ্রশেখর জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ভয় পাইতেছে ?” শৈবলিনী প্রস্তরবৎ। চন্দ্ৰশেখর বিস্মিত হইলেন—অনেকক্ষণ নীরব হইয়া শৈবলিনীর মািখপ্ৰতি চাহিয়া রহিলেন। কিছই বঝিতে পারিলেন না। অকস্মাৎ শৈবলিনী বিকট চীৎকার করিয়া উঠিল, “প্ৰভু! রক্ষা কর! রক্ষা কর! তুমি আমার স্বামী! তুমি না। রাখিলে কে রাখে ?” শৈবলিনী মচ্ছিত হইয়া ভূতলে পড়িল । চন্দ্রশেখর নিকটস্থ নিঝাির হইতে জল আনিয়া শৈবলিনীর মখে সিঞ্চন করিলেন। উত্তরীয়ের দবারা ব্যজন করিলেন। কিছকাল পরে শৈবলিনী চেতনাপ্রাপিত হইল। শৈবলিনী উঠিয়া বসিল । নীরবে বসিয়া কাঁদিতে লাগিল । চন্দ্রশেখর বলিলেন, “কি দেখিতেছিলে ?” শৈ। সেই নরক ! চন্দ্রশেখর দেখিলেন, জীবনেই শৈবলিনীর নরকভোগ আরম্ভ হইয়াছে। শৈবলিনী ক্ষণ পরে বলিল, “আমি মরিতে পারিব না—আমার ঘোরতর নরকের ভয় হইয়াছে। মরিলেই নরকে যাইব । আমাকে বাঁচিতেই হইবে। কিন্তু একাকিনী, আমি দাবাদশ বৎসর কি প্রকারে বাঁচিব ? আমি চৈতনে অচেতনে কেবল নরক দেখিতেছি।” চন্দ্রশেখর বলিলেন, “চিন্তা নাই—উপবাসে এবং মানসিক ক্লেশে, এ সকল উপস্থিত হইয়াছে। বৈদ্যেরা ইহাকে বায়রোগ বলেন । তুমি বেদগ্রামে গিয়া গ্রামপ্রান্তে কুটীর নিম্পমাণ কর । সেখানে সন্দেরী আসিয়া তোমার তত্ত্বাবধান করিবেন—চিকিৎসা করিতে পারিবেন।” সহসা শৈবলিনী চক্ষ মন্দিল—দেখিল, গহাপ্রান্তে সন্দিরী দাঁড়াইয়া, প্রস্তরে উৎকীর্ণা— অঙ্গলি তুলিয়া দাঁড়াইয়া আছে। দেখিল, সন্দরী অতি দীঘর্ষাকৃতা, ক্ৰমে তালব্যক্ষপরিমিতা হইল, অতি ভয়ঙ্করী ! দেখিল, সেই গহাপ্রান্তে সহসা নরক সভাট হইল—সেই পতিগন্ধ, সেই ভয়ঙ্কর অগিনগজন, সেই উত্তাপ, সেই শীত, সেই সপােরণ্য, সেই কন্দয্য কীটরাশিতে গগন অন্ধকার! দেখিল, সেই নরকে পিশাচেরা কণাটকের রক্তজহস্তে, বশিচকের বেত্ৰহস্তে নামিল— রজীতে শৈবলিনীকে বধিয়া, বশিচকবেত্রে প্রহার করিতে করিতে লইয়া চলিল; তালব্যক্ষপরিমিতা প্রস্তরময়ী সন্দরী হস্তোত্তোলন করিয়া তাহাদিগকে বলিতে লাগিল—“মার! মার! আমি বারণ করিয়াছিলাম! আমি নৌকা হইতে ফিরাইতে গিয়াছিলাম, শনে নাই! মার! মার! যত পারিস মার! আমি উহার পাপের সাক্ষী! মার! মার!” শৈবলিনী যক্তি করে, উন্নত আননে, সজল-নয়নে সন্দেরীকে মিনতি করিতেছে, সন্দরী শনিতেছে না; কেবল ডাকিতেছে, “মার! মার! অসতীকে মার! আমি সতী, ও অসতী মার মার!” শৈবলিনী, আবার সেইরােপ দাম্পিটস্থির লোচন বিসফারিত করিয়া বিশািস্ক মাখে, সন্তম্ভিতের ন্যায় রহিল। চন্দ্রশেখর চিন্তিত হইলেন—বঝিলেন, লক্ষণ ভাল নহে। বলিলেন, “শৈবলিনী! আমার সঙ্গে আইস!” প্রথমে শৈবলিনী শনিতে পাইল না। পরে চন্দ্রশেখর, তাহার অঙ্গে হস্তাপণ করিয়া দাই তিন বার সঞ্চালিত করিয়া ডাকিতে লাগিলেন, বলিতে লাগিলেন, “আমার সঙ্গে আইস।” সহসা শৈবলিনী দাঁড়াইয়া উঠিল, অতি ভীতসত্বরে বলিল, “চল, চল, চল, শীঘ্ৰ চল, শীঘ্র 88) Ràd