পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दकश ज्ञष्नाबव्ी চল, এখােন হইতে শীঘ্ৰ চল!” বলিয়াই, বিলম্ব না করিয়া, গৰুহােদবারাভিমখে ছাটিল, চন্দ্ৰশেখরের প্রতীক্ষা না করিয়া দ্রািতপদে চলিল। দ্রুত চলিতে, গাঁহার অস্পষ্ট আলোকে পদে শিলাখন্ড বাজিল ; পদস্খলিত হইয়া শৈবলিনী ভূপতিত হইল। আর শব্দ নাই। চন্দ্রশেখর দেখিলেন, শৈবলিনী আবার মচ্ছি তা হইয়াছে। তখন চন্দ্রশেখর, তাহাকে ক্লোড়ে করিয়া গহা হইতে বাহির হইয়া, যথায় পৰ্ব্ববতাঙ্গ হইতে অতি ক্ষীণা নিঝরিণী নিঃশব্দে জলোদগার করিতেছিল—তথায় আনিলেন—মখে জলসেক করাতে, এবং অনাবত স্থানের অনবরাদ্ধ বায়সােপশোঁ শৈবলিনী সংজ্ঞালাভ করিয়া চক্ষ চাহিল— বলিল, “আমি কোথায় আসিয়াছি ?” চন্দ্রশেখর বলিলেন, “আমি তোমাকে বাহিরে আনিয়াছি।” শৈবলিনী শিহরিল—আবােব ভীত হইল। বলিল, “তুমি কে ?” চন্দ্রশেখরও ভীত হইলেন। বলিলেন, “কেন। এরপ করিতেছ? আমি যে তোমার স্বামী— চিনিতে পারিতেছ না কেন ?" শৈবলিনী হা হা করিয়া হাসিল, বলিল, “স্বামী আমার সোণার মাছি বেড়ায় ফলে ফলে ; তেকাটাতে এলে, সখা, বঝি পথ ভুলে ? তুমি কি লরেন্স ফাস্টর ?” চন্দ্রশেখর দেখিলেন যে, যে দেবীর প্রভাবে এই মনষ্যদেহ সন্দির, তিনি শৈবলিনীকে ত্যাগ করিয়া যাইতেছেন-বিকট উন্মাদ আসিয়া তাঁহার সবর্ণমন্দির অধিকার করিতেছে! চন্দ্ৰশেখর রোদন করিলেন। অতি মদ স্বরে, কত আদরে আবার ডাকিলেন, “শৈবলিনি!” শৈবলিনী আবার হাসিল, বলিল, “শৈবলিনী কে ? রসো রসো ! একটি মেয়ে ছিল, তার নাম শৈবলিনী, আর একটি ছেলে ছিল, তার নাম প্ৰতাপ। এক দিন রাত্রে ছেলেটি সাপ হযে বনে গেল ; মেয়েটি ব্যাঙ হয়ে বনে গেল। সাপটি ব্যাঙটিকে গিলিয়া ফেলিল। আমি সবচক্ষে দেখেছি। হাঁ গা সাহেব! তুমি কি লরেন্স ফন্টর ?” চন্দ্রশেখর গদগদ কন্ঠে সকাতরে ডাকিলেন, “গরদেব ! এ কি করিলে ? এ কি করিলে ?” শৈবলিনী গীত গাইল, “কি করিলে প্ৰাণসখী, মনচোরে ধরিয়ে, ভাসিল পারিতি-নদী দাই কলে ভরিয়ে।” বলিতে লাগিল, “মনচোর কে ? চন্দ্রশেখর। ধরিল কাকে ? চন্দ্রশেখরকে। ভাসিল কে ? চন্দ্রশেখর। দাই কলে কি ? জানি না। তুমি চন্দ্ৰশেখরকে চেন ?” চন্দ্রশেখর বলিলেন, “আমিই চন্দ্রশেখর।” শৈবলিনী ব্যাঘীর ন্যায় ঝাঁপ দিয়া চন্দ্রশেখরেব কণঠলাগান হইল-—কোন কথা না বলিয়া, কাঁদিতে লাগিল—ক’ত কাঁদিল—তাহার অশ্রািজলে চন্দ্রশেখরের পীঠ, কন্ঠ, বক্ষ, বস্ত্র, বাহ পলাবিত হইল। চন্দ্রশেখরও কাঁদিলেন। শৈবলিনী কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতে লাগিল, “আমি তোমার সঙ্গে যাইব ।” চন্দ্রশেখর বলিলেন, “চল।” শৈবলিনী বলিল, “আমাকে মারিবে না!” চন্দ্রশেখর বলিলেন, “না।” দীঘ নিশবাস ত্যাগ করিয়া চন্দ্রশেখর গাত্ৰোখান করিলেন। শৈবলিনীও উঠিল! চন্দ্রশেখর বিষন্নবিদনে চলিলেন--উন্মাদিনী পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল—কখন হাসিতে লাগিল—কখন কাঁদিতে লাগিল—কখন গায়িতে লাগিল । 8GO