পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী হিব্রাহিম খাঁ উত্তর দিলেন। নবাব বলিলেন, “তোমার ন্যায় আমার বন্ধ জগতে নাই— তোমার কাছে আমার ভিক্ষা—তকি খাঁকে আমার কাছে লইয়া আইস।” হিব্রাহিম খাঁ অভিবাদন করিয়া, তাম্বর বাহিরে গিয়া আশাবারোহণ করিলেন। নবাব তখন বলিলেন, “আর কেহ আমার উপকার করিবে ?” সকলেই যোড়হাত করিয়া হকুম চাহিল। নবাব বলিলেন, “কেহ সেই ফন্টেরকে আনিতে ייל 4]]ק* আমীর হোসেন বলিলেন, “সে কোথায় আছে, আমি তাহার সন্ধান করিতে কলিকাতায় চলিলাম।” মহম্মদ ইরফান যন্ত করে নিবেদন করিল, “অবশ্য এত দিন সে দেশে আসিয়া থাকিবে, আমি তাহাকে লইয়া আসিতেছি।” এই বলিয়া মহম্মদ ইরফান বিদায় হইল। তাহার পরে নবাব বলিলেন, “যে ব্ৰহ্মচারী মঙেগরে বেগমকে আশ্রয় দান করিয়াছিলেন, তাঁহার কেহ সন্ধান করিতে পাের ?” মহম্মদ ইরফান বলিল, “হকুম হইলে শৈবলিনীর সন্ধানের পর ব্রহ্মচারীর উদ্দেশে মঙ্গের যাইতে পারি। “ শেষ কাসেম আলি বলিলেন, “গরগণ খাঁ কত দাির ?” অমাত্যবিগ বলিলেন, “তিনি ফৌজ লইয়া উদয়নালায় আসিতেছেন শনিয়াছি—কিন্তু এখনও পৌছেন নাই।“ নবাব মদ, মদ বলিতে লাগিলেন, “ফৌজ! ফৌজ! কাহার ফৌজ!” একজন কে চুপিচুপি বলিলেন, “তাঁর !" অমাতােবগ বিদায় হইলেন। তখন নবাব রত্নসিংহাসন ত্যাগ করিয়া উঠিলেন, হীরক-খচিত উষ্ণীষ দরে নিক্ষেপ করিলেন--মাক্তার হার কন্ঠ হইতে ছিাড়িয়া ফেলিলেন—রত্নখচিত বেশ অঙ্গ হইতে দীর করিলেন।--তখন নবাব ভূমিতে অবলন্ঠিত হইয়া দলনী! দলনী!’ বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন। এ সংসারে নবাবি এইরােপ। চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ ঃ জন স্ট্যালকাট পািব্ব পরিচ্ছেদে প্রকাশ পাইয়াছে যে, কুলসমের সঙ্গে ওয়ারেন হেস্টিংস সাহেবের সাক্ষাৎ হইয়াছিল। কুলসম আত্মবিবরণ সবিস্তারে কহিতে গিয়া, ফণ্টরের কার্য্যসকলের সবিশেষ পরিচয় দিল । ইতিহাসে ওয়ারেন হেস্টিংস পরপীড়ক বলিয়া পরিচিত হইয়াছে। কমন্ঠ লোক কত্ত ব্যানরোধে অনেক সময়ে পরপীড়ক হইয়া উঠে। যাঁহার উপর রােজ্যরক্ষার ভার, তিনি স্বয়ং দয়াল, এবং ন্যায়পর হইলেও রাজ্য রক্ষার্থ পরপীড়ন করিতে বাধ্য হন। যেখানে দাই এক জনের উপর অত্যাচার করিলে, সমাদয় রাজ্যের উপকার হয়, সেখানে তাঁহারা মনে করেন যে, সে অত্যাচার কৰ্ত্তব্য। বস্তুতঃ যাঁহারা ওয়ারেন হেস্টিংসের ন্যায় সাম্রাজ্য-সংস্থাপনে সক্ষম তাঁহারা যে দয়াল এবং ন্যায়নিষ্পষ্ঠ নহেন, ইহা কখনও সম্পভব নহে। যাঁহার প্রকৃতিতে দয়া এবং ন্যায়পরতা নাই—তাঁহার দ্বারা রাজ্যস্থাপনাদি মহৎ কায্য হইতে পারে না—কেন না, তাঁহার প্রকৃতি উন্নত নহে—ক্ষদ্র। এ সকল ক্ষদ্রচেতার কাজ নহে। ওয়ারেন, হেস্টিংস, দয়াল ও ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন। তখন তিনি গবৰ্ণর হন নাই। কুলসমকে বিদায় করিয়া তিনি ফন্টরের অন্যসন্ধানে প্রবত্ত হইলেন। দেখিলেন, ফন্টের পীড়িত। প্রথমে চিকিৎসা করাইলেন। ফন্টের উৎকৃষ্ঠািট চিকিৎসকের চিকিৎসায় শীঘ্রই আরোগ্য লাভ করল। তাহার পরে, তাহার অপরাধের অন্যসন্ধানে প্রবত্ত হইলেন। ভীত হইয়া, ফন্টের তাঁহার নিকট অপরাধ স্বীকার করিল। ওয়ারেন হেস্টিংস কৌন্সিলে প্রস্তাব উপস্থিত করিয়া ফন্ডটরকে পদচ্যুত করিলেন। হেস্টিংসের ইচ্ছা ছিল যে, ফন্টেরকে বিচারালয়ে উপস্থিত করেন; কিন্তু S 8