পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bकgs2दू সিপাহী বলিল, “কেহ নহে। কেবল এক হিন্দ বড় যাদ্ধ করিয়াছে।” স্বামী জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কোথা ?” সিপাহী বলিল, “গড়ের সম্মখে দেখােন।” এই বলিয়া সিপাহী পলাইল । রমানন্দ স্বামী গড়ের দিকে গেলেন। দেখিলেন, যন্ধ নাই, কয়েক জন ইংরেজ ও হিন্দর মতদেহ একত্রে সত্যুপাকৃত হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে। স্বামী তাহার মধ্যে প্রতাপের অন্যসন্ধান করিতে লাগিলেন। পতিত গের মধ্যে কেহ গভীর কাতরোক্তি করিল। রমানন্দ স্বামী তাহাকে টানিয়া বাহির করিলেন, দেখিলেন, সেই প্রতাপ ! আহত, মতপ্রায়, এখনও জীবিত। রমানন্দ সবামী জল আনিয়া তাহার মখে দিলেন। প্ৰতাপ তাঁহাকে চিনিয়া প্ৰণামের জন্য, হসেতাত্তোলন করিতে উদ্যোগ করিলেন, কিন্তু পারিলেন না। স্বামী বলিলেন, “আমি আমনিই আশীৰ্ব্ববাদ করিতেছি, আরোগ্য লাভ কর।” প্রতাপ কম্পেট বলিলেন, “আরোগ্য ? আরোগ্যের আর বড় বিলম্ব নাই। আপনার পদরেণ। আমার মাথায় দিন।” রমানন্দ সবামী জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমরা নিষেধ করিয়াছিলাম, কেন এ দতেজয় রণে আসিলে ? শৈবলিনীর কথায় কি এরাপ করিয়াছ ?” প্রতাপ বলিল, “আপনি কেন এরপ আজ্ঞা করিতেছেন ?” স্বামী বলিলেন, “যখন তুমি শৈবলিনীর সঙ্গে কথা কহিতেছিল, তখন তাহার আকারেঙ্গিত দেখিয়া বোধ হইয়াছিল যে, সে আর উন্মাদগ্ৰস্তা নহে। এবং বোধ হয়, তোমাকে একেবারে বিস্মত হয় নাই।” প্ৰতাপ বলিলেন, “শৈবলিনী বলিয়াছিল যে, এ পথিবীতে আমার সঙ্গে আর সাক্ষাৎ না হয়। আমি বঝিলাম, আমি জীবিত থাকিলে শৈবলিনী বা চন্দ্ৰশেখরের সখের সম্পভাবনা নাই। যাহারা আমার পরম প্রীতির পাত্র, যাহারা আমার পরমোপকারী, তাহাদিগের সখের কণাটকস্বরপ এ জীবন আমার রাখা অকৰ্ত্তব্য বিবেচনা করিলাম। তাই আপনাদিগের নিষেধ সত্ত্বেও এ সমরক্ষেত্রে, প্রাণত্যাগ করিতে আসিয়াছিলাম। আমি থাকিলে, শৈবলিনীর চিত্ত, কখন না। কখন বিচলিত হইবার ঢাবনা । অতএব আমি চলিলাম।” রমানন্দ স্বামীর চক্ষে জল আসিল; আর কেহ কখন রমানন্দ স্বামীর চক্ষে জল দেখে নাই। তিনি বলিলেন, “এ সংসারে তুমিই যথাৰ্থ পরহিতৱতধারী। আমরা ভান্ডমাত্র। তুমি পরলোকে অনন্ত অক্ষয় সবগ ভোগ করবে। সন্দেহ নাই।” ক্ষণেক নীরব থাকিয়া, রমানন্দ স্বামী বলিতে লাগিলেন, “শন বৎস! আমি তোমার অন্তঃকরণ বঝিয়াছি। ব্ৰহ্মাণডজয় তোমার এই ইন্দ্রিয়জয়ের তুল্য হইতে পারে না—তুমি শৈবলিনীকে ভালবাসিতে ?” সপত সিংহ যেন জাগিয়া উঠিল। সেই শব্যাকার প্রতাপ, বলিষ্ঠ, চঞ্চল, উন্মত্তবৎ হ-হাঙকার করিয়া উঠিল—বলিল, “কি বঝিবে, তুমি সন্ন্যাসী! এ জগতে মনষ্যে কে আছে যে, আমার এ ভালবাসা বঝিবে! কে বঝিবে, আজি এই ষোড়শ বৎসর, আমি শৈবলিনীকে কত ভালবাসিয়াছি। পাপচিত্তে আমি তাহার প্রতি অন্যরক্ত নাহি—আমার ভালবাসার নাম—জীবনবিসর্জনের আকাঙক্ষা। শিরে শিরে, শোণিতে শোণিতে, অস্থিতে অস্থিতে, আমার এই অনােরাগ অহোরাত্র বিচরণ করিয়াছে। কখন মানষে তাহা জানিতে পারে নাই।--মানষে তাহা জানিতে পারিত নাএই মাতৃত্যুকালে আপনি কথা তুলিলেন কেন ? এ জন্মে। এ অনােরাগে মঙ্গল নাই বলিয়া, এ দেহ পরিত্যাগ করিলাম। আমার মন কলষিত হইয়াছে—কি জানি শৈবলিনীর হৃদয়ে আবার কি হইবে ? আমার মাতু্য ভিন্ন ইহার উপায় নাই—এই জন্য মরিলাম। আপনি এই গপত তত্ত্ব শনিলেন—আপনি জ্ঞানী, আপনি শাস্ত্ৰদশী-আপনি বলন, আমার পাপের কি প্রায়শ্চিত্ত ? মুম্বু জগদীশ্বরের কাছে দোষী? যদি দোষ হইয়া থাকে, এ প্রায়শিচত্তে কি তাহার মোচন ब्ा ?” রমানন্দ সবামী বলিলেন, “তাহা জানি না। মানষের জ্ঞান এখানে অসমৰ্থ ; শাস্ত্র এখানে মকে। তুমি যে লোকে যাইতেছ, সেই লোকেশবের ভিন্ন এ কথার কেহ উত্তর দিতে পরিবে না। তবে, ইহাই বলিতে পারি, ইন্দ্রিয়জয়ে যদি পণ্য থাকে, তবে অনন্ত সবগ তোমারই। যদি 8 CAG