পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী নাই, তাহাকে বিনাপরাধে কন্ডট দিয়া তোমার কি সখি ? যত ভাবি, এই এই বলিব, তত আপনার চক্ষের জলে আপনি ভাসি। মনে ভয় হইতে লাগিল, পাছে বলিবার সময় কথাগালি ভুলিয়া যাই। যথাসময়ে আবার রামসদয় বাবার বাড়ী চলিলাম। ফলে লইয়া যাইব না। মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু শািন্ধ হাতে যাইতে লজজা করিতে লাগিল—কি বলিয়া গিয়া বসিব। পৰবৰ্তমত কিছ ফলে লইলাম। কিন্তু আজি মাকে লকাইয়া গেলাম। ফল দিলাম—তিরস্কার করিব বলিয়া লবঙ্গের কাছে বসিলাম। কি বলিয়া প্রসঙগ উত্থাপন করিব ? হরি! হরি! কি বলিয়া আরম্ভ করিব ? গোড়ার কথা কোনটা ? যখন চারি দিকে আগনি জীবলিতেছে—আগে কোন দিক নিবাইব ? কিছ বলা হইল না! কথা পাড়িতেই পারিলাম না । কান্না আসিতে লাগিল। ভাগ্যক্ৰমে লবঙ্গ আপনিই প্রসঙ্গ তুলিল, “কাণি—তোর বিয়ে হবে।” আমি জালিয়া উঠিলাম। বলিলাম, “ছাই হবে।” লবঙ্গ বলিল, “কেন, ছোট বাব বিবাহ দেওয়াইবেন- হবে না কেন ?” আরও জবুলিলাম। বলিলাম, “কেন, আমি তোমাদের কাছে কি দোষ করেছি ?” লবঙ্গও রাগিল। বলিল, “আঃ মালো ! তোর কি বিয়ের মন নাই না কি ?” আমি মাথা নাড়িয়া বলিলাম, “না।” লবঙ্গ আরও রাগিল, বলিল, “পাপিষঠা কোথাকার! বিয়ে কর বিনে কেন ?” আমি বলিলাম, “খসি ।” লবঙ্গের মনে বোধ হয়, সন্দেহ হইল-—আমি ভ্ৰভটা—নহিলে বিবাহে অসম্পমতি কেন ? সে বড় রাগ করিয়া বলিল, “আঃ মালো ! বের বলিতেছি—নহিলে খেঙরা মারিয়া বিদায় করিব।” আমি উঠিলাম—আমার দই অন্ধ চক্ষে জল পড়িতেছিল—তােহা লবঙ্গকে দেখাইলাম না —ফিরিলাম। গহে যাইতেছিলাম, সিড়িতে আসিয়া একটা ইতস্ততঃ করিতেছিলাম,-কই, তিরস্কারের কথা কিছই ত বলা হয় নাই—অকস্মাৎ কাহার পদশবদ শানিলাম। অন্ধের শ্রবণশক্তি অনৈসগিক প্রখরতা প্ৰাপত হয়--—আমি দই এক বার সেই পদশব্দ শনিয়াই চিনিয়াছিলাম, কাহার পদবিক্ষেপের এ শব্দ। আমি সিড়িতে বসিলাম। ছোট বােব আমার নিকটে আসিলে, আমাকে দেখিয়া দাঁড়াইলেন। বোধ হয়, আমার চক্ষের জল দেখিতে পাইয়াছিলেন,-জিজ্ঞাসা করলেন, “কে, রাজনি !” সকল ভুলিয়া গেলাম। রাগ ভুলিলাম। অপমান ভূলিলাম, দঃখ ভুলিলাম।--কাণে বাজিতে লাগিল—”কে রাজনি !” আমি উত্তর করিলাম না।—মনে করিলাম, আর দই এক বার জিজ্ঞাসা করন—আমি শনিয়া কাণ জড়াই। ছোট বাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “রজনি! কাঁদিতেছ। কেন ?” আমার অন্তর আনন্দে ভারতে লাগিল—চক্ষের জল আরও উছলিতে লাগিল। আমি কথা কহিলাম না। —আরও জিজ্ঞাসা করন । মনে করিলাম, আমি কি ভাগ্যবতী ! বিধাতা আমায় কাণা করিয়াছেন, কালা করেন নাই ; তিনি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন কাঁদিতেছ? কেহ কিছল বলিয়াছে ?” আমি সে বার উত্তর করিলাম—তাঁহার সঙ্গে কথোপকথনের সখি, যদি জন্মে একবার ঘটিতেছে—তবে ত্যাগ করি কেন ? আমি বললাম, “ছোট মা তিরস্কার করিয়াছেন।” ছোট বাব হাসিলেন, —বলিলেন, “ছোট মার কথা ধরিও না—তাঁর মািখ ঐ রকম—কিন্তু মনে রাগ করেন না। তুমি আমার সঙ্গে এস—এখনই তিনি আবার ভাল কথা বলিবেন।” তাঁহার সঙেগ কেন না। যাইব ? তিনি ডাকিলে কি আর রাগ থাকে ঐ আমি উঠিলাম— তাঁহার সঙেগ চলিলাম। তিনি সিড়িতে উঠিতে লাগিলেন--আমি পশ্চাৎ পশ্চাৎ উঠিতেছিলাম ——তিনি বলিলেন তুমি দেখিতে পাও না।--সিউড়িতে উঠ কিরাপে ? না পাের, আমি হাত ধরিয়া লইয়া যাইতেছি।” আমার গা কাঁপিয়া উঠিল—সব্বশরীরে রোমাণ8 হইল—তিনি আমার হাত ধরিবেন! ধরন না—লোকে নিন্দা করে করােক-আমার নারীজন্ম সার্থক হউক! আমি পরের সাহায্য ব্যতীত কলিকাতার গলি গলি বেড়াইতে পারি, কিন্তু ছোট বাবকে নিষেধ করিলাম না। ছোট বাবা-বলিব কি ? কি বলিয়া বলিব—উপযন্ত কথা পাই না—ছোট বাবা হাত ধরিলেন। 8SC ᏬᎸ