পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী ধৰ্ম্মম ? লোকে বলে, ধৰ্ম্মেমরি অভাব পরকালের দঃখের কারণ, ইহকালের নহে। লোকের চরিত্রে দেখিতে পাই, অধমের অভাবই দঃখ । জানি আমি, সে মিথ্যা। কিন্তু জানিয়াও ধৰ্ম্মমকামনা করি না। আমার সে দঃখ নহে। প্ৰণয় ? স্নেহ ? ভালবাসা ? আমি জানি, ইহার অভাবই সখ—ভালবাসাই দঃখ। সাক্ষী লবঙগলতা । তবে আমার দঃখ কিসের ? আমার অভাব কিসের? আমার কিসের কামনা যে, তাহা লাভে সফল হইয়া দঃখ নিবারণ করিব ? আমার কাম্য বস্তু কি ? বঝিয়াছি। আমার কাম্য বস্তুর অভাবই আমার দঃখ। আমি বঝিয়াছি যে, সকলই অসার। তাই আমার কেবল দঃখ সার। চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ কিছ কাম্য কি খাজিয়া পাই না ? এই অনন্ত সংসার, অসংখ্য রত্নরাজিময়, ইহাতে আমার প্রার্থনীয় কি কিছ নাই ? যে সংসারে এক একটি দরবেক্ষণীয় ক্ষদ্র কীট পতঙ্গ অনন্ত কৌশলের সােথান, অনন্ত জ্ঞানের ভান্ডার, যে জগতে পথিসথ বাল্যকার এক কণা, অনন্তরত্নপ্রভাব নগাধিরাজের ভগিনাংশ, সে জগতে কি আমার কােম্য বস্তু কিছ নাই। দেখ, আমি কোন ছার! টিন্ডল, হকাসলী, ডাবিন, এবং লায়ল এক আসনে বসিয়া যাবতজীবনে ঐ ক্ষদ্র নীহারবিন্দর, ঐ বালিকাকণার বা ঐ শিয়ালকাঁটাফলটির গণ বর্ণনা করিয়া উঠিতে পারেন না—তব, আমার কাম্য বস্তু নাই ? আমি কি ? দেখা. এই পথিবীতে কত কোটি মনষ্যে আছে, তাহা কেহ গণিয়া সংখ্যা করে নাই। বহ, কোটি মনষ্যে সন্দেহ নাই। উহার এক কোটি মনষ্যে অসংখ্য গণের আধার। সকলেই ভক্তি, প্রীতি, দয়া, ধৰ্ম্মমর্যাদির আধার—সকলেই পাজ্য, সকলেই অনসরণীয়। আমার কাম্য কি কেহ। নাই ? আমি কি ? আমার এই বাঞ্ছনীয় পদাৰ্থ ছিল—আজিও আছে। কিন্তু সে বাসনা পণ্য হইবার নহে। পণ্য হইবার নহে বলিয়া তাহা হৃদয় হইতে অনেক দিন হইল উন্মলিত করিয়াছি। আর পনিরক্তজীবিত করিতে চাহি না। অন্য কোন বাঞ্ছনীয় কি সংসারে নাই ? তাই খাঁজি। কি করিব ? কয় বৎসর হইতে আমি আপনা। আপনি এই প্রশন করিতেছিলাম, উত্তর দিতে পারিতেছিলাম না। যে দই একজন বন্ধ-বান্ধব আছেন, তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলে বলিতেন, তোমার আপনার কাজ না থাকে, পরের কাজ কর। লোকের যথাসাধ্য উপকার করা। সে ত প্রাচীন কথা। লোকের উপকার কিসে হয় ? রামের মার ছেলের জবর হইয়াছে, নাড়ী টিপিয়া একটি কুইনাইন দাও। রঘো পাগলের গাত্রবস্ত্ৰ নাই, কমবল কিনিয়া দাও । সস্তার মা বিধবা, মাসিক দাও। সন্দির নাপিতের ছেলে ইস্কুলে পড়িতে পায় না—তাহার বেতনের আনকল্য কর। এই কি পরের উপকার ? মানিলাম, এই পরের উপকার। কিন্তু এ সকলে কতক্ষণ যায় ? কতটকু সময় কাটে ? কতটকু পরিশ্রম হয় ? মানসিক শক্তিসকল কতখানি উত্তেজিত হয় ? আমি এমত বলি না যে, এই সকল কাৰ্য্য আমার যথাসাধ্য আমি করিয়া থাকি; কিন্তু যতটকু করি, তাহাতে আমার বোধ হয় না যে, ইহাতে আমার অভাব পরিণ হইবে। আমার যোগ্য কাজ আমি খাঁজি, যাহাতে আমার মন মজিবে, তাই খাজি । আর একপ্রকারের লোকের উপকারের ঢং উঠিয়াছে। তাহার এক কথায় নাম দিতে হইলে, বলিতে হয় “বকাবাঁকি লেখালেখি।” সোসাইটি, ক্লাব, এসোসিয়েশন, সভা, সমাজ, বস্তৃতা, রিজলিউশ্যন, আবেদন, নিবেদন, সমবেদন,-আমি তাহাতে নাহি। আমি একদা কোন বন্ধকে একটি মহাসভার ঐরােপ একখানি আবেদন পড়িতে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম যে, কি পড়িতেছ? তিনি বলিলেন, “এমন কিছ না, কেবল কাণা ফকির ভিক মাঙ্গে।” এ সকল আমার ক্ষদ্র বদ্ধিতে তাই—কেবল “কাণা ফকির ভিক মাঙ্গে রে বাবা।” এই রোগের আর এক প্রকার বিকার আছে। বিধবার বিবাহ দাও, কুলীন ব্রাহ্মণের বিবাহ (: ՕԳ