পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী বাণিজ্যে প্রবত্ত হইলেন। লক্ষয়ী সাপ্রসন্না হইলেন; সংসার প্রতিপালনের জন্য তাঁহাকে কোন কম্পট পাইতে হইল না। যদি কািট পাইতে হইত, তাহা হইলে বোধ হয়, বাঞ্ছারাম সদয় হইতেন। পত্রের সখের অবস্থা। শনিয়া, বন্ধের যে সেনহাবশেষ ছিল, তাহাও নিবিয়া গেল। পত্র অভিমানপ্ৰযন্ত, পিতা না ডাকিলে, আর যাইব না, ইহা সিথর করিয়া, আর পিতার কোন সম্পবাদ লাইলেন না। অভিত্তি এবং তাচ্ছিল্যবশতঃ পত্র। এরপ করিতেছে বিবেচনা করিয়া, বাঞ্ছারাম তাঁহাকেও আর ডাকিলেন না। সতরাং কাহারও রাগ পড়িল না; উইলও অপরিবত্তিত রহিল। এমত কালে হঠাৎ বাঞ্ছারামের সবগপ্রাপিত হইল। রামসদয় শোকাকুল হইলেন; তাঁহার পিতার মাতৃত্যুর পকেব। তাঁহার সঙ্গে সাক্ষাৎলাভ করিয়া যথাকত্তব্য করেন নাই, এই দঃখে অনেক দিন ধরিয়া রোদন করিলেন। তিনি আর ভবানীনগর গেলেন না, কলিকাতাতেই পিতৃকৃত্য সম্পন্ন করিলেন। কেন না, এক্ষণে ঐ বাটী মনোহর দাসের হইল। এদিকে মনোহর দাসের কোন সম্পবাদ নাই। পাশচাৎ জানিতে পারা গেল যে, বাঞ্ছারামের জীবিতাবস্থাতেও মনোহরের কেহ কোন সম্পবাদ পায় নাই। মনোহর দাস ভবানীনগর হইতে যে গিয়াছিল, সেই গিয়াছিল; কোথায় গেল, বাঞ্ছারাম তাহার অনেক সন্ধান করিলেন ; কিছতেই কোন সম্পবাদ পাইলেন না। তখন তিনি উইলের এক কোড়পত্র সর্জন করিলেন। তাহাতে বিষ্ণরাম সরকার নামক একজন কলিকাতানিবাসী আত্মীয় কুটম্বকে উইলের একজিকিউটর নিযক্ত করিলেন। তাহাতে কথা রহিল যে, তিনি সযত্নে মনোহর দাসের অন্যসন্ধান করিবেন। পশ্চাৎ ফলানসারে সম্পপত্তি যাহার প্রাপ্য, তাহাকে দিবেন। বিষ্ণরাম বােব অতি বিচক্ষণ, নিরপেক্ষ, এবং কমঠ বাক্তি। তিনি বাঞ্ছারামের মাতুর পরেই মনোহর দাসের অন্যসন্ধান করিতে লাগিলেন। অনেক পরিশ্রম ও অর্থব্যয় করিয়া যাহা বাঞ্ছারাম কর্তৃক অন্যসন্ধান হয় নাই, তাহার নিগঢ়ি কথা পরিজ্ঞাত হইলেন। সস্থল বক্তান্ত অননুসন্ধানে এই জানা গেল যে, মনোহর ভবানীনগর হইতে পলাইয়া কিছর কােল সপরিবারে ঢাকা অঞ্চলে গিয়া বাস করেন। পরে সেখানে জীবিকানিববাহের জন্য কিছল কম্পট হওয়াতে, কলিকাতায় নৌকাযোগে আসিতেছিলেন, পথিমধ্যে বাত্যায় পতিত হইয়া সপরিবারে জলমগন হইয়াছিলেন। তাঁহার আর উত্তরাধিকারী ছিল, এমন সন্ধান পাইলেন না। বিষ্ণরাম বাব এ সকল কথার অকাট্য প্রমাণ সংগ্ৰহ করিয়া রামসদয়কে দেখাইলেন। তখন বাঞ্ছারামের ভূসম্পত্তি শচীন্দ্রদিগের দই ভ্রাতার হইল ; এবং বিষ্ণরাম বােবও তােহা তাহদের হস্তে সমাপণ করিলেন। এক্ষণে এই রজনী যদি জীবিত থাকে, তবে যে সম্পপত্তি রামসদয় মিত্র ভোগ করিতেছে, তাহা রজনীর। রজনী হয়ত নিতান্ত দরিদ্রাবস্থাপন্ন। সন্ধান করিয়া দেখা যাউক । আমার আর কোন কাজ নাই। ষািঠ পরিচ্ছেদ বাঙগালায় আসার পর একদা কোন গ্রাম্য কুটমেন্বর বাড়ী নিমন্ত্রণে গিয়াছিলাম। প্রাতঃকালে গ্রাম পৰ্যটনে গিয়াছিলাম। এক সন্থানে অতি মনোহর নিভৃত জওগল; দায়েল সপত সবর মিলাইয়া আশচয্য ঐক্যতানবাদ্য বাজাইতেছে ; চারি দিকে বাক্ষরাজি ; ঘনবিন্যস্ত, কোমল শ্যাম পল্লবদলে আচ্ছন্ন ; পাতায় পাতায় ঠেস ঠোঁস মিশামিশি, শ্যাম রাপের রাশি রাশি ; কোথাও কলিকা, কোথাও সফটিত পক্ষপ, কোথাও অপক্ক, কোথাও সােপক্ক ফল। সেই বনমধ্যে আৰ্ত্তনাদ শনিতে পাইলাম। বন্যাভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, একজন বিকটমাত্তি পরীষ এক যাবতীকে বলপক্বক আক্ৰমণ করিতেছে। দেখিবামাত্র বঝিলাম, পরিষ, অতি নীচজাতীয় পাষণড—বোধ হয় ডোম কি সিউলিকোমরে দা। গঠন অত্যন্ত বলবানের মত। ধীরে ধীরে তাহার পশ্চাদভাগে গেলাম। গিয়া তাহার কণ্ডকাল হইতে দাখানি টানিয়া লইয়া G: OS)