পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ ফেলিয়া তাহাকে মুরা বলিলে মিথ্যা কথা বলা হয় না। কিন্তু যে বলে যে, বাঙ্গালীর চিরকাল এই চরিত্র, চিরকাল দািব্বল, চিরকাল ভীর, সত্ৰীস্বভাব, তাহার মাথায় বজাঘাত হউক, তাহার কথা মিথ্যা।...” “বাঙ্গালীর চিরদিনব্বলতা এবং চিরভীরতার আমরা কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাই নাই। কিন্তু বাঙ্গালী যে পািব্বকালে বাহাবলশালী, তেজস্বী, বিজয়ী ছিল, তাহার অনেক প্রমাণ পাই। অধিক নয়, আমরা এক শত বৎসর পকেবাের বাঙগালী পহলায়ানের, বাঙ্গালী লাঠিশড়কিওয়ালার যে সকল বলবীয্যের কথা বিশবিস্তসত্রে শনিয়াছি, তাহা শনিয়া মনে সন্দেহ হয় যে, সে কি এই বাঙ্গালী জাতি ?” (বিবিধ প্ৰবন্ধ, ২য় ভাগ, পরিষৎ-সংস্করণ, পঃ ৩১৪-৫) gs হিন্দুধর্মের পনিরক্তজীবনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিপাদনা করিয়া বঙিকমচন্দ্ৰ ‘হিন্দধৰ্ম্মম’ প্রবন্ধে লিখিয়ালছেন : “যাহাতে মনষ্যের যথাৰ্থ উন্নতি, শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সকবাবিধ উন্নতি হয় তাহাই ধৰ্ম্ম।...এইরােপ উন্নতিকর তত্ত্বসকল, সকল ধৰ্ম্মমর্বাপেক্ষা হিন্দধমেই প্রবল। হিন্দধমেই তাহার প্রকৃত সম্পপণ্যতা আছে।” (প্রচার-শ্রাবণ ১২৯১, পঃ ২২) বাঙ্গালীর বল এবং সমসংস্কৃত হিন্দধৰ্ম্ম পানঃপ্রতিস্ঠার উদ্দেশ্যেই বঙ্কিমচন্দ্রের ‘সীতারামের সচনা। পরিষৎ-সংস্করণের সম্পাদকদ্বয় বলেন, “গ্রন্থশেষে [ পরিষৎ-সংস্করণের ‘সীতারাম” ] *পাঠভেদ’ অংশে কয়েকটি পরিত্যক্ত পরিচ্ছেদের সহিত “প্রচারে” প্রকাশিত উক্ত অংশ মিলাইয়া দেখিলেই দেখা যাইবে, বঙ্কিমচন্দ্র সীতারামকে দিয়া ‘হিন্দসাম্রাজ্য সস্থাপনের সর্বপন দেখিয়াছিলেন।” কিন্তু পরে বঙিকমচন্দ্র এই স্বপন ভাঙিগয়া চুরিয়া। ‘সীতারামকে এই শোচনীয় ও ভয়াবহ ট্র্যাজিডিতেই পরিণত করিয়াছেন। ঐতিহাসিক পারমপৰ্য্য রক্ষা করিতে হইলে এরপ না করিয়া হয়ত উপায়ও ছিল না। ‘সীতারাম প্রথম পাস্তকাকারে প্রকাশিত হয় ১৮৮৭ সনের মাচ্চ মাসে, ইহার পন্ঠা সংখ্যা ছিল ৪১৯ । ইহা ‘প্রচারেরই প্রায় পনিমািদ্রণ । দই বৎসর পরে প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণে (পঃ সংখ্যা ৩o o ) বঙিকমচন্দ্ৰ ইহার বহল পরিবত্তন সাধন করেন। তাঁহারই কথায় “সীতারামের কিয়দংশ পরিত্যন্ত এবং কিয়দংশ পরিবত্তিত হইল। গ্রন্থের আকার অপেক্ষাকৃত ক্ষদ্র হইল এজন্য ইহার দামও কমান গেল।” তৃতীয় সংস্করণ। বঙিকমচন্দ্রের জীবিত কালে মাদ্রিত হয় বটে, কিন্তু ইহা প্রকাশিত হয় তাঁহার মাতৃত্যুর অব্যবহিত পরে, ১৮৯৪ সনের মে মাসে। বঙিকমচন্দ্র ‘সীতারাম” উৎসগ করেন ‘সকবা শাস্ত্রে পন্ডিত, সৰ্ব্বগণের আধার, সকলের প্ৰিয়, আমার বিশেষ স্নেহের পাত্র “রাজকৃষ্ণ মখোপাধ্যায়’কে। ‘সীতারাম” যে বিশেষ উদ্দেশ্যে রচিত তাহা আমরা ইতিমধ্যেই জানিতে পারিয়াছি। বণ্ডিকমচন্দ্রও প্রথম সংস্করণের বিজ্ঞাপনে এসম্বন্ধে এইরােপ ইঙিগত করিয়াছেন : “সীতারাম ঐতিহাসিক ব্যক্তি। এই গ্রন্থে সীতারামের ঐতিহাসিকতা কিছই রক্ষা করা হয় নাই। গ্রন্থের উদ্দেশ্য ঐতিহাসিকতা নহে। যাঁহারা সীতারামের প্রকৃত ইতিহাস জানিতে ইচ্ছা করেন, তাঁহারা Vestland সাহেবের কৃত যশোহরের বক্তান্ত, এবং Stewart সাহেবের কৃত বাঙগালার ইতিহাস পাঠ করবেন।” বঙিকমচন্দ্রের এতাদশে উক্তি সত্ত্বেও, ‘সীতারাম" গ্রন্থখানি ইতিহাস এবং সাহিত্য উভয় দিক হইতেই বিশেষভাবে আলোচিত হইয়াছে। অক্ষয়কুমার মৈত্ৰেয়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রমাপ্রসাদ চন্দ এবং অক্ষয়কুমার দত্তগপত “সীতারামের ঐতিহাসিকতা সম্পবন্ধে আলোচনা করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গে পরিষৎ-সংস্করণ সীতারামো’ সন্নিবেশিত আচাৰ্য্য যদ্যনাথ সরকার-লিখিত “ঐতিহাসিক ভূমিকাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘আনন্দমুঠ', 'দেবী চৌধরাণী” প্রভৃতির ন্যায় ‘সীতারামের “বিজ্ঞাপনে'ও বঙ্কিমচন্দ্ৰ ইহাকে ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস বলিতে অস্বীকার করিয়াছেন। আচাৰ্য্য যদ্যনাথ কিন্তু পািকব পািব্ব পািস্তকে উদ্ধত কারণাবলীর নিরিখে এই পােস্তক সম্বন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রের অস্বীকারবাণী গ্রহণ করিতে পারেন নাই। তিনি লিখিয়াছেন, “এই গ্রন্থখানি ইউরোপীয় সাহিত্যে রচিত হইলে সেখানকার গণিগণ ইহাকে ঐতিহাসিক উপন্যাসের শ্রেণীতে নিঃসন্দেহ সােথান দিতেন।” ইহার ব্যাখ্যা স্বরপ আচাৰ্য্য যদ্যনাথ লিখিতেছেন : “অৰ্থাৎ, বঙ্কিমচন্দ্র সীতারাম নামক রাজার জীবনের ঘটনাগলির ও সেই যাগের বাঙ্গালার অবস্থার যে বিবরণ দিয়াছেন, তাহা অধিকাংশ একেবারে সত্য; ইহার কোন সথানেই ঐতিহাসিক সত্যের প্রচন্ড অপলাপ করেন নাই; ইতিহাসে পরিচিত কোন বিখ্যাত সাধকে উপন্যাসের পাতায় ঠগ বলিয়া অঙ্কিত করিলে যে দ্যুষিত কল্পনা হইত, সীতারামে কোথাও তাঁহা হয় নাই। এর উপর, সেই যাগে প্রজা ও y 8S S