পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ শাসকের সম্প্ৰবন্ধ, দের্শের দশা, যন্ধবিগ্রহ প্ৰণালী বণ্ডিকম। অক্ষরে অক্ষরে সত্য করিয়া আকিয়াছেন, অর্থাৎ এই উপন্যাসখানির দশ্যপট একেবারে সত্য।” ইহার প্রমাণস্বরপ আচাৰ্য্য যদ্যনাথ ১৩২২ সালে প্রকাশিত সতীশচন্দ্র মিত্রের “যশোহর খলনার ইতিহাস”—২য় খন্ডে বর্ণিত সীতারামের প্রকৃত বিবরণের প্রতি আমাদের দন্টি আকর্ষণ করিয়াছেন। সে যাগের ফারসী সরকারী, কাগজ এবং ফরাসী কুঠিয়াল সাহেবদের চিঠি হইতে ঐ সময়কার দেশের ইতিহাস অতি বিশদ ও বিশদ্ধভাবে জানা যায়। সীতারামের ‘প্রকৃত জীবনীও নবাবিধকৃত তথ্যের নিরিখে সতীশচন্দ্রের পস্তকের পরিপািরক স্বরপ, যদ্যনাথ সংক্ষেপে প্ৰদান করিয়াছেন। অনসন্ধিৎস পাঠক ইহা পড়িলে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘সীতারামের ঐতিহাসিকত্ব যাচাই করিয়া লইতে পরিবেন। সাহিত্যের দিক হইতেও সািধনী মনীষিগণ ‘সীতারাম” বিশেলষণ করিয়াছেন। মনসবী বিপিনচন্দ্ৰ পাল এবং পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেলষণ এখানে বিশেষ করিয়া উল্লেখ করিতে হয়। ‘বঙ্কিমচন্দ্রের ত্রয়ী” প্রবন্ধে ‘দেবী চৌধরাণী’র আলোচনার পর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় সীতারাম প্রবন্ধে লিখিয়াছেন : “সীতারাম উপন্যাসে যেন দেবী চৌধরাণীর obverse proposition solve বা কতটা বিরোধী ভাবের ব্যঞ্জনা দেখান হইয়াছে। এখানে পরিষ প্রকট: সীতারাম রায় কমী ও তেজস্বী পরিষ। তাঁহার তিন সত্ৰী-শ্ৰী, নন্দা ও রমা। শ্ৰী যেন ঐশবষ্য, নন্দা যেন হাদিনী, রমা যেন হী বা মোদিনী। রাজার রাণী যেমন হইতে হয়, ঘরণী-গহিণী যেমন হইতে হয়, নন্দা তেমনই। স্বামীর প্রতি প্রগাঢ় ভক্তিমতী, স্বামীর গৌরবে গৌরবান্বিতা, স্বামীর মৰ্য্যাদা রক্ষায় সদা নিরতা; বাওগালার গােহ কুলাঙ্গনার এক দিকের একটা আদর্শ নন্দা। রমা যেন মোমের পতুল, সোহাগের খাঁচি, যেন আদিরসের মঞ্জষা; সবামীর সোহাগে। সদাই যেন গলিয়া পড়িতেছেন; স্বামীর মহত্ত্বে বা গৌরবে: গৌরবান্বিত হইবার শক্তি নাই, স্বামীকে লইয়া খেলা করিবার প্রবত্তি বেশ ভাল আছে। ফলে, রমা সদা ভীতা ও সঙ্কুচিতা; সে স্বামীকে পাইলে পর্তুল খেলা করিতে ভালবাসে, স্বামীর রাজগিরির দেশাত্মবোধের কোন ধারও ধারে না।...কিন্তু শ্ৰী—সে কেমন নারী ! প্রিয়প্রাণহািন্ত্রী হইবার আশঙ্কায় শ্ৰী সর্বামিবডিজ তা; সে বজ্ঞজনকালে কিশোর বয়সে তাহাব কেমন শিক্ষা দীক্ষা হইয়াছিল, তাহার কোন পরিচয় গ্রন্থকার দেন নাই। শ্ৰী ফটিল গঙগারামের রক্ষা ব্যাপারে, দিবখণড বটশাখায় দাঁড়াইয়া লোক সমাহরণে ও উৎসাহদানে শ্ৰী ফটিয়া উঠিল—বিদ্যুদিবলাসের মত ভ্ৰাতা ও স্বামীর প্রাণসংশয় বঝিয়া একবার শ্ৰী বাঙ্গালী মেয়ের মতন ফটিয়া উঠিয়াছিল। তাহার পর শ্ৰী একটা প্ৰহেলিকা; সন্ন্যাসিনী ভৈরবী বটে, কিন্তু জগন্নাথের রথের দড়ির টানের মত তাহার হৃদয়ে সবামী-ঘর করিবার সাধটকু বেশ জাগিতেছে। অথচ সীতারাম যখন তাহার দাবার সােথ, তাহার জন্য পাগল, সে পাগলামির ফলে রাজ্য যায়, স্বাধীনতা যায়, তখন শ্ৰী পাষাণী। এই পাষাণ ভাবটাই সীতারামের পরিষাকারের তাসের ঘর শেষে ভাঙ্গিয়া দিল।...সীতারাম হেন পরিষ,-—যে দেশের জন্য, জাতির জন্য পাগল, যে সর্বীয় পরষাকারের প্রভাবে অঘটন ঘটাইয়াছিল, যাহার জীবনে ধ্যান-জ্ঞান মামদাবাদ ও ধৰ্ম্মম রাজ্য প্রতিস্ঠা—তেমন একনিষ্ঠ সাধক এমন মোহে পড়িবে কেন ? একনিষ্ঠার এমন পরিণাম হয় না। যাহার একনিষ্পাঠা আছে, সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ না করিলে, নিশিচন্ত না হইলে, তাহার মন অন্য দিকে যাইবে না। সীতারাম বিপদ বেষ্টিত হইয়াও পতঙ্গের ন্যায়৷ শ্ৰীীর রাপে পড়িয়া মরিল। শ্ৰীই বা এমন কোন দেশের ভৈরবী যে ধৰ্ম্মম রাজ্য ছারেখারে যাইতেছে দেখিয়াও টলিল না, সব্বনাশ করিয়া। তবে বাহির হইল!”.(পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলী, ১ম খন্ড, পঃ ১৪:২-৩ পরিষৎ-সংস্করণ) ‘সীতারামের ইংরেজী অন্যবাদ। ১৯০৩ সনে কলিকাতা হইতে প্রকাশিত হয়। ১৯০১ সনে মহীশর হইতে কানাড়ী অন্যবাদ এবং ১৯১০ সনে মাদ্রাজ হইতে তামিল অন্যবাদ বাহির হইয়াছিল। কলিকাতার সাধারণ রঙ্গমঞ্চে ‘সীতারামের নাট্যরােপও বহবার প্রদশিত হইয়াছে। গিরিশচন্দ্র ঘোষ-কৃত “সীতারামের নাট্যরপ পস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়। বঙিকমচন্দ্রের কয়েকখানি প্রধান উপন্যাসের মল ভাবধারা বিশেলষণ করিয়া বিপিনচন্দ্র পাল মহাশয় কয়েকটি মাল্যবান কথা বলিয়াছেন। এই কথাগালি উদ্ধত করিয়া বত্তমান প্রসঙ্গ শেষ করি : “বিষবক্ষ, চন্দ্রশেখর এবং কৃষ্ণকান্তের উইলে, বঙিকমচন্দ্র তাঁহার রসসন্টিকে কেবল আরও উন্নত এবং পরিসফট করিয়া তোলেন তাহা নহে, কিন্তু সাব্বজনীন মানবতার ভূমি হইতে এগলিকে পথিক করিয়া বাঙ্গালী চরিত্রের এবং বাঙগালী সমাজের বৈশিষ্ট্যের দবারা সাজাইয়া তোলেন। সােয্যমখী ও GO