পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল ব্ৰহ্মানন্দ একট, কবিতাপ্রিয়। তিনি কম্পেট হাসিয়া বলিলেন, “মনে করি চাঁদা ধরি হাতে দিই পেড়ে। বাবলা গাছে হাত লেগে আঙগল গেল ছিাড়ে।” হর। পার নাই নাকি ? ব্ৰ। ভাই, কেমন বাধ বাধা ঠেকিতে লাগিল । হর। পার নাই ? ৱ। না ভাই—এই ভাই, তোমার জাল উইল নাও । এই তোমার টাকা নাও । এই বলিয়া ব্ৰহ্মানন্দ কৃত্ৰিম উইল ও বাক্স হইতে পাঁচ শত টাকার নোট বাহির করিয়া দিলেন ; ক্ৰোধে এবং বিরক্তিতে হরলালের চক্ষ আরক্ত এবং অধর কম্পিত হইল। বলিলেন, “মািখ, অকম্পমা! সত্ৰীলোকের কাজটাও তোমা হইতে হইল না ? আমি চলিলাম। কিন্তু দেখিও, যদি তোমা হইতে এই কথার বাৎপ মাত্র প্রকাশ পায়, তবে তোমার জীবন সংশয় ।” ব্ৰহ্মানন্দ বলিলেন, “সে ভাবনা করিও না; কথা আমার নিকট হইতে প্রকাশ পাইবে না।” সেখান হইতে উঠিয়া হরলাল ব্ৰহ্মানন্দের পাকশালায় গেলেন। হরলাল ঘরের ছেলে, সৰ্ব্ববত্র গমনাগমন করিতে পারেন। পাকশালায় ব্ৰহ্মানন্দের ভ্ৰাতৃকন্যা রোহিণী রাঁধিতেছিল। এই রোহিণীতে অনুমার বিশেষ কিছর প্রয়োজন আছে। অতএব তাহার রােপ গণ কিছ বলিতে হয়, কিন্তু আজি কালি রােপ বর্ণনার বাজার নরম—আর গণ বর্ণনার-হাল আইনে আপনার ভিন্ন পরের করিতে নাই। তবে ইহা বলিলে হয় যে, রোহিণীর যৌবন পরিপািণ — রােপ উছলিয়া পড়িতেছিল——শরতের চন্দ্র ষোল কলায় পরিপািণ । সে অলপ বয়সে বিধবা হইয়াছিল, কিন্তু বৈধব্যের অনপযোগী অনেকগলি দোষ তাহার ছিল। দোষ, সে কালা পেড়ে ধতি পরিত, হাতে চুড়ি পরিত, পানও বঝি খাইত। এ দিকে রন্ধনে সে দ্ৰৌপদীবিশেষ হয় ; ঝোল, অম্পল, চড়চড়ি, সড়সড়ি, ঘণট, দালনা ইত্যাদিতে সিদ্ধহস্ত; আবার আলেপনা, খয়েরের গহনা, ফলের খেলনা, সচের কাজে তুলনারহিত। চুল বাঁধিতে, কন্যা সাজাইতে, প্রভুর একমাত্র অবলম্বন। তাহার। আর কেহ সহায় ছিল না বলিয়া সে ব্ৰহ্মানন্দের বাটীতে থাকত । রোহিণী রােপসী ঠনৰ ঠন করিয়া দালের হাঁড়িতে কাটি দিতেছিল, দরে একটা বিড়াল থাবা পাতিয়া বসিয়া ছিল ; পশজাতি রমণীদিগের বিদ্যােন্দাম কটাক্ষে শিহরে কি না, দেখিবার জন্য রোহিণী তাহার উপরে মধ্যে মধ্যে বিষপণ মধ্যর কটাক্ষা করিতেছিল; বিড়াল সে মধ্যর কটাক্ষকে ভজিজাত মৎস্যাহারের নিমন্ত্ৰণ মনে করিয়া আলেপ আলেপ অগ্রসর হইতেছিল, এমত সময়ে হরলাল বােব জনতা সমেত মসমস্যা করিয়া ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলেন। বিড়াল, ভীত হইয়া, ভজিত মৎস্যের লোভ পরিত্যাগপৰ্ব্ববাক পলায়নে তৎপর হইল ; রোহিণী দালের কাটি ফেলিয়া দিয়া, হাত ধাইয়া, মাথায় কাপড় দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। নখে নখ খটিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বড় কাকা, কবে এলেন ?” হরলাল বলিল, “কাল এসেছি। তোমার সঙেগ একটা কথা আছে।” রোহিণী শিহরিল; বলিল, “আজি এখানে খাবেন ? সর চালের ভাত চড়াবা কি ?” হর। চড়াও, চড়াও । কিন্তু সে কথা নয়। তোমার এক দিনের কথা মনে পড়ে কি ? রোহিণী চুপ করিয়া মাটি পানে চাহিয়া রহিল। হরলাল বলিল, “সেই দিন, যে দিন তুমি গঙ্গাস্নান করিয়া আসিতে, যাত্রীদিগের দলছাড়া হইয়া পিছাইয়া পড়িয়াছিলে ? মনে পড়ে ?” রোহিণী। (বাঁ হাতের চারিটি আঙগল দাইন হাতে ধরিয়া অধোবদনে) মনে পড়ে। হর। যে দিন তুমি পথ হারাইয়া মাঠে পড়িয়াছিলে, মনে পড়ে ?” রো। পড়ে। হর। যে দিন মাঠে তোমার রাত্রি হইল, তুমি একা; জনকত বদমাস তোমার সঙ্গ নিল— মনে পড়ে ? রে। পড়ে। হর। সে দিন কে তোমায় রক্ষা করিয়াছিল ? রো। তুমি। তুমি ঘোড়ার উপরে সেই মাঠ দিয়া কোথায় যাইতেছিলে— হর। শালীর বাড়ী। Ꮹ8 Ꮼ