পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী রো। তুমি দেখিতে পাইয়া আমায় রক্ষা করিলে-আমায় পালিক বেহােরা করিয়া বাড়ী পাঠাইয়া দিলে। মনে পড়ে বই কি। সে ঋণ আমি কখনও পরিশোধ করিতে পারিব না। হর। আজ সে ঋণ পরিশোধ করিতে পার—তার উপর আমায় জন্মের মত কিনিয়া রাখিতে পাের, করিবে ? রো। কি বলন--আমি প্রাণ দিয়াও আপনার উপকার করিব। হর। কর না কর, এ কথা কাহারও সাক্ষাতে প্রকাশ করিও না। রো। প্ৰাণ থাকিতে নয়। হর । দিব্য কর। রোহিণী দিব্য করিল। তখন হরলাল কৃষ্ণকান্তের আসল উইল ও জাল উইলের কথা বঝাইয়া বলিল। শেষ বলিল, “সেই আসল উইল চুরি করিয়া, জাল উইল তাহার বদলে রাখিয়া আসিতে হইবে। আমাদের বাড়ীতে তোমার যাতায়াত আছে। তুমি বদ্ধিমতী, তুমি অনায়াসে পার। আমার জন্য ইহা করিবে ?” রোহিণী শিহরিল। বলিল, “চুরি! আমাকে কাটিয়া ফেলিলেও আমি পারিব না।” হর। সত্ৰীলোক এমন অসােরই বটে-কথার রাশি মাত্র। এই ববি এ জন্মে তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করিতে পারবে না ! রো। আর যা বলন, সব পারিব। মরিতে বলেন, মরিব । কিন্তু এ বিশবাসঘাতকের কাজ পারিব না। হরলাল কিছতেই রোহিণীকে সম্মত করিতে না পারিয়া, সেই হাজার টাকার নোট রোহিণীর হাতে দিতে গেল। বলিল, “এই হাজার টাকা পরস্কার আগাম নাও। এ কাজ তোমার করিতে হইবে!” রোহিণী নোট লইল না। বলিল, “টাকার প্রত্যাশা করি না। কত্তার সমস্ত বিষয় দিলেও পারিব না। করিবার হইত। ত আপনার কথাতেই কারিতাম।” হরলাল দীঘ নিশবাস ফেলিল, বলিল, “মনে করিয়াছিলাম, রোহিণি, তুমি আমার হিতৈষী। পর কখনও আপন হয় ? দেখ, আজ যদি আমার সত্ৰী থাকিত, আমি তোমার খোেশামদ করিতাম না। সেই আমার এ কাজ করিত।” এবার রোহিণী একটা হাসিল। হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “হাসিলে যে ?” রো। আপনার সন্ত্রীর নামে সেই বিধবাবিবাহের কথা মনে পড়িল। আপনি না কি বিধবা বিবাহ করিবেন ? হর। ইচ্ছা ত আছে—কিন্তু মনের মত বিধবা পাই কই ? রো। তা বিধবাই হৌক, সধবাই হৌক—বলি বিধবাই হৌক, কুমারীই হৌক—একটা বিবাহ করিয়া সংসারী হইলেই ভাল হয়। আমরা আত্মীয়স্বজন সকলেরই তা হলে আহাদ হয়। হর। দেখা রোহিণি, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসন্মত । রো। তা ত এখন লোকে বলিতেছে। হর। দেখ, তুমিও একটা বিবাহ করিতে পার—কেন করিবে না ? রোহিণী মাথার কাপড় একটা টানিয়া মািখ ফিরাইল। হরলাল বলিতে লাগিল, “দেখ, তোমাদের সঙ্গে আমাদের গ্রাম সবাদ মাত্র—সম্পকে বাধে না।” এবার রোহিণী লক্ষবা করিয়া মাথার কাপড় টানিয়া দিয়া, উনােন গোড়ায় বসিয়া, দালে কাটি দিতে আরম্ভ করিল। দেখিয়া বিষন্ন হইয়া হরলাল ফিরিয়া চলিল। হরলাল দাবার পর্য্যন্ত গেলে, রোহিণী বলিল, “কাগজখানা না হয়। রাখিয়া যান, দেখি, কি করিতে পারি।” হরলাল আহমাদিত হইয়া জাল উইল ও নোট রোহিণীর নিকটে রাখিল ; দেখিয়া রোহিণী বলিল, “নোট না। শািন্ধ উইলখানা রােখন।” হরলাল তখন জাল উইল রাখিয়া নোট লইয়া গেল । Gk 88