পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপতম পরিচ্ছেদ বারণী পাস্করিণী লইয়া আমি বড় গোলে পড়িলাম-আমি তাহা বৰ্ণনা করিয়া উঠিতে পারিতেছি না। পঙ্করিণীটি অতি বহৎ--নীল কাচের আয়না মত ঘাসের ফ্রেমে আটা পড়িয়া আছে। সেই ঘাসের ফ্রেমের পরে আর একখানা ফ্রেম—বাগানের ফ্ৰেম-পঙ্করিণীর চারিপাশে বাবদের বাগান-উদ্যানবক্ষের এবং উদ্যানপ্রাচীরের বিরাম নাই। সেই ফ্রেমখানা বড় জাঁকােল— লাল, কালা, সবজি, গোলাপী, সাদা, জরদ, নানাবণ ফলে মিনে করা—নানা ফলের পাতর বসান। মাঝে মাঝে সাদা বৈঠকখানা বাড়ীগলা এক একখানা বড় বড় হীরার মত অস্তগামী সায্যের কিরণে জীবলিতেছিল। আর মাথার উপর আকাশ-সেও সেই বাগান ফ্রেমে আটা, সেও একখানা নীল আয়না। আর সেই নীল আকাশ, আর সেই বাগানের ফ্রেম, আর সেই ঘাসের ফ্রেম, ফল, ফল, গাছ, বাড়ী, সব সেই নীল জলের দাপণে প্ৰতিবিম্বিত হইতেছিল। মাঝে মাঝে সেই কোকিলটা ডাকিতেছিল। এ সকল এক রকম বঝান যায়, কিন্তু সেই আকাশ, আর সেই কোকিলের ডাকের সঙ্গে রোহিণীর মনের কি সম্পবন্ধ, সেটি বাঝাইতে পারিতেছি না। তাই বলিতেছিলাম যে, এই বারণী পাকুর লইয়া আমি বড় গোলে পড়িলাম। আমিও গোলে পড়িলাম, আর গোবিন্দলালও বড় গোলে পড়িল। গোবিন্দলালও সেই কুসমিতা লতার অন্তরাল হইতে দেখিতেছিলেন যে, রোহিণী আসিয়া ঘাটের রাণায় একা বসিয়া কাঁদিতেছে। গোবিন্দলাল বাব মনে মনে সিদ্ধান্ত করিলেন, এ, পাড়ায় কোন মেয়ে ছেলের সঙ্গে কোন্দল করিয়া আসিয়া কাঁদিতেছে। আমরা গোবিন্দলালের সিদ্ধান্তে তত ভরাভর করি না। রোহিণী কাঁদিতে লাগিল । রোহিণী কি ভাবিতেছিল, বলিতে পারি না। কিন্তু বোধ হয়। ভাবিতেছিল যে কি অপরাধে এ বালবৈধব্য আমার আদন্ডেটি ঘটিল ? আমি অন্যের অপেক্ষা এমন কি গরতের অপরাধ করিয়াছি যে, আমি এ পথিবীর কোন সমুখভোগ করিতে পাইলাম না। কোন দোষে আমাকে এ রােপ যৌবন থাকিতে কেবল শািম্পক কাঠের মত ইহজীবন কাটাইতে হইল ? যাহারা এ জীবনের সকল সমুখে সখী—মনে কর, ঐ গোবিন্দলাল বাবার স্ত্রী—তাহারা আমার অপেক্ষা কোন গণে গণিবতী—কোন পণ্যফলে তাহদের কপালে এ সখ—আমার কপালে শান্য ? দর হৌক-পরের সখ দেখিয়া আমি কাতর নাই—কিন্তু আমার সকল পথ বন্ধ কেন ? আমার এ আসখের জীবন রাখিয়া কি করি ? তা, আমরা ত বলিয়াছি, রোহিণী লোক ভাল নয়। দেখ, একটতে কত হিংসা ! রোহিণীর অনেক দোষ—তার কান্না দেখে কাঁদিতে ইচ্ছা করে কি ? করে না। কিন্তু অত বিচারে কাজ নাই!-- পরের কান্না দেখিলেই কাঁদা ভাল। দেবতার মেঘ কর্ণাটকক্ষেত্ৰ দেখিয়া ব্যক্ৰিট সক্ষবরণ করে না। তা, তোমরা রোহিণীর জন্য একবার আহা বল। দেখ, এখনও রোহিণী, ঘাটে বসিয়া কপালে হাত দিয়া কাঁদিতেছে—শান্য কলসী জলের উপর বাতাসে নাচিতেছে। শেষে সােয্য অস্ত গেলেন ; ক্ৰমে সরোবরের নীল জলে কালো ছায়া পড়িল—শেষে অন্ধকার হইয়া আসিল। পাখী সকল উড়িয়া গিয়া গাছে বসিতে লাগিল। গোর, সকল গাহাভিমখে ফিরিল। তখন চন্দ্ৰ উঠিল।--অন্ধকারের উপর মদ, আলো ফাটিল। তখনও রোহিণী ঘাটে বসিয়া কাঁদিতেছে—তাহার কলসী তখনও জলে ভাসিতেছে। তখন গোবিন্দলাল উদ্যান হইতে গাহাভিমখে চলিলেন-যাইবার সময়ে দেখিতে পাইলেন যে, তখনও রোহিণী ঘাটে বসিয়া আছে । এতক্ষণ অবলা একা বসিয়া কাঁদিতেছে দেখিয়া, তাঁহার একট, দঃখ উপস্থিত হইল। তখন তাঁহার মনে হইল যে, এ স্ত্রীলোক সচ্চরিত্রা হউক, দশচরিত্রা হউক, এও সেই জগৎপিতার প্রেরিত সংসারপতঙগ—আমিও সেই তাঁহার প্রেরিত সংসারপতঙ্গ ; অতএব এও আমার ভগিনী । যদি ইহার দঃখ নিবারণ করিতে পারি—তবে কেন করিব না ? গোবিন্দলাল। ধীরে ধীরে সোপােনাবলী অবতরণ করিয়া রোহিণীর কাছে গিয়া, তাহার পাশেবা চািপকনিশ্চিমত মাত্তি বৎ সেই চম্পকবর্ণ চন্দ্রকিরণে দাঁড়াইলেন। রোহিণী দেখিয়া bशर्गकशा ऐछेछैव्ल । Gk 8Nd