পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল জন্য সে দিন যে সাহস করিয়াছিলাম, আজ সৎকমের জন্য তাহা করিতে পারি না কেন ? ধরা পড়ি পড়িব ?” রোহিণী পলাইল না। কৃষ্ণকান্ত কয় বার হরিকে ডাকিয়া কোন উত্তর পাইলেন না। হরি সস্থানান্তরে সংখ্যানসন্ধানে গমন করিয়াছিল—শীঘ্ৰ আসিবে। তখন কৃষ্ণকান্ত উপাধানতল হইতে অগিনগভর্ণ দীপশলাকা গ্রহণপাকবািক সহসা আলোক উৎপাদনা করিলেন। শলাকালোকে দেখিলেন, গহমধ্যে দেরাজের কাছে, সত্ৰীলোক । জবালিত শলাকসংযোগে কৃষ্ণকান্ত বাতি জবালিলেন। সত্ৰীলোককে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “তুমি কে ?” রোহিণী কৃষ্ণকান্তের কাছে গেল। বলিল, “আমি রোহিণী।” কৃষ্ণকান্ত বিস্মিত হইলেন, বলিলেন, “এত রাত্রে অন্ধকারে এখানে কি করিতেছিলে ?” রোহিণী বলিল, “চুরি করিতেছিলাম।” কৃষ্ণ । রঙগ রহস্য রােখ। কেন এ অবস্থায় তোমাকে দেখিলাম বল। তুমি চুরি করিতে আসিয়াছ, এ কথা সহসা আমার বিশ্ববাস হয় না, কিন্তু চোরের অবস্থাতেই তোমাকে দেখিতেছি। রোহিণী বলিল, “তবে আমি যাহা করিতে আসিয়াছি, তাহা আপনার সম্পম খেই করি, দেখােন । পরে আমার প্রতি যেমন-ব্যবহার উচিত হয়, করিবেন। আমি ধরা পড়িয়াছি, পলাইতে পারব না । পলাইব না।” এই বলিয়া রোহিণী, দেরাজের কাছে প্রত্যাগমন করিয়া দেরাজ টানিয়া খলিল। তাহার ভিতর হইতে জাল উইল বাহির করিয়া, প্রকৃত উইল সংস্থাপিত করিল। পরে জাল উইলখানি খণড খণড করিয়া ফাড়িয়া ফেলিল । “হাঁ হাঁ, ও কি ফাড় ? দেখি দেখি” বলিয়া কৃষ্ণকান্ত চীৎকার করিলেন। কিন্তু তিনি চীৎকার করিতে করিতে রোহিণী সেই খন্ডে খন্ডে বিচ্ছিন্ন উইল, অগিনমখে সমপণ করিয়া ভসন্মাবশেষ করিল। কৃষ্ণকান্ত ক্ৰোধে লোচন আরক্ত করিয়া বলিলেন, “ও কি পোড়াইলি ?” রোহিণী। একখানি কৃত্ৰিম উইল । কৃষ্ণকান্ত শিহরিয়া উঠিলেন, “উইল , উইল ! আমার উইল কোথায় ?” রো। আপনার উইল দেরীজের ভিতর আছে. আপনি দেখােন না। এই যাবতীর সিথরতা, নিশিচনততা দেখিয়া কৃষ্ণকান্ত বিসিন্মত হইতে লাগিলেন। ভাবিলেন, “কোন দেবতা ছলনা করিতে আসেন নাই তা ? “ কৃষ্ণকান্ত তখন দেরাজ খলিয়া দেখিলেন, একখানি উইল তন্মধ্যে আছে। সেখানি বাহির করিলেন, চশমা বাহির করিলেন : উইলখানি পড়িয়া দেখিয়া জানিলেন, তাঁহার প্রকৃত উইল বটে। বিস্মিত হইয়া পনেরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি পোড়াইলে কি ?” রো। একখানি জােল উইল । কৃ। জাল উইল ! জাল উইল কে করিল ? তুমি তাহা কোথা পাইলে ? রো। কে করিল, তাহা বলিতে পারি না—উহা আমি এই দেরাজের মধ্যে পাইয়াছি। কৃ। তুমি কি প্রকারে সন্ধান জানিলে যে, দেরাজের ভিতর কৃত্রিম উইল আছে : রো। তাহা আমি বলিতে পারিব না। কৃষ্ণকান্ত কিয়াৎকােল চিন্তা করিতে লাগিলেন। শেষে বলিলেন, “যদি আমি তোমার মত সত্ৰীলোকের ক্ষদ্রবদ্ধির ভিতর প্রবেশ করিতে না পারিব, তবে এ বিষয় সম্পত্তি এত কাল রক্ষা করিলাম কি প্রকারে ? এ জাল উইল হরলালের তৈয়ারি। বোধ হয় তুমি তাহার কাছে টাকা খাইয়া জাল উইল রাখিয়া আসল উইল চুরি করিতে আসিয়াছিলো! তার পর ধরা পড়িয়া ভয়ে জাল উইলখানি ছিউড়িয়া ফেলিয়াছ। ঠিক কথা কি না ?” রো। তাহা নহে। কৃ। তাহা নহে? তবে কি ? রো। আমি কিছ, বলিব না। আমি আপনার ঘরে চোরের মত প্রবেশ করিয়াছিলাম, আমাকে যাহা করিতে হয় করন। কৃ। তুমি মন্দ কৰ্ম্ম করিতে আসিয়াছিলে সন্দেহ নাই, নহিলে এ প্রকারে চোরের মত C. C S)