পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী সারি, গন্ধে গগন আমোদিত করিতেছে—তাহারই পরে বহবিধ উত্তজবল নীল পীত রক্ত শেবত নানা বর্ণের দেশী বিলাতী নয়নরঞ্জনকারী পাতার গাছের শ্রেণী। সেইখানে গোবিন্দলাল বসিতে ভালবাসিতেন। জ্যোৎসনা রাত্রে কখনও কখনও ভ্রমরকে উদ্যানভ্রমণে আনিয়া সেইখানে বসাইতেন। ভ্রমর পাষাণময়ী স্ত্রীমত্তি আন্ধাব্যতা দেখিয়া তাহাকে কালামখী বলিয়া গালি দিত--কখনও কখনও আপনি অঞ্চল দিয়া তাহার অঙ্গ আবিত করিয়া দিত—কখনও কখনও গহ হইতে উত্তম বস্ত্র সঙ্গে আনিয়া তাহাকে পরাইয়া দিয়া যাইত—কখনও কখনও তাহার হস্তস্থিত ঘট লইয়া টানাটানি বাধাইত । সেইখানে আজি, গোবিন্দলাল সন্ধ্যাকালে বসিয়া, দীপণােনরোেপ বারণীর জলশোভা দেখিতে লাগিলেন। দেখিতে দেখিতে দেখিলেন, সেই পঙ্করিণীর সপরিসর প্রস্তরনিশ্চিমত সোপান-পরম্পরায় রোহিণী কলসীকক্ষে অবরোহণ করিতেছে। সব না হইলে চলে, জল না। হইলে চলে না। এ দঃখের দিনেও রোহিণী জল লইতে আসিয়াছে। রোহিণী জলে নামিয়া গাত্ৰ মাজজনা করিবার সম্পভাবনা—দভিটপথে তাঁহার থাকা অকৰ্ত্তব্য বলিয়া গোবিন্দলাল সে সন্থান হইতে সরিয়া গেলেন। অনেকক্ষণ গোবিন্দলাল এ দিক ও দিক বেড়াইলেন। শেষ মনে করিলেন, এতক্ষণ রোহিণী উঠিয়া গিয়াছে। এই ভাবিয়া আবার সেই বেদিকাতলে জলনিষেকনিরতা পাষাণসন্দরীর পদপ্রান্তে আসিয়া বসিলেন। আবার সেই বারণীর শোভা দেখিতে লাগিলেন। দেখিলেন, রোহিণী বা কোন সত্ৰীলোক বা পরিষ কোথাও কেহ নাই। কেহ কোথাও নাই—কিন্তু সে জলোপরে একটি কলসী ভাসিতেছে। কাের কলসী ? হঠাৎ সন্দেহ উপস্থিত হইল-কেহ জল লইতে আসিয়া ডুবিয়া যায় নাই তা ? রোহিণীই এইমাত্র জল লইতে আসিয়াছিল—তখন অকস্মাৎ পৰ্ব্ববাহের কথা মনে পড়িল—মনে পড়িল যে, ভ্রমর রোহিণীকে বলিযা পাঠাইয়াছিল যে, বারণী পাকুরে—সন্ধ্যাবেলা—কলসী গলায় বোধে। মনে পড়িল যে, রোহিণী প্রত্যুত্তরে বলিয়াছিল, “আচ্ছা।” গোবিন্দলাল তৎক্ষণাৎ পাকরিণীর ঘাটে আসিলেন। সব্বশেষ সোপানে দাঁড়াইয়া পভকরিণীর সব্বত্ৰ দেখিতে লাগিলেন। জল কাচাতুল্য সবচ্ছ। ঘাটের নীচে জলতলস্থ ভূমি পৰ্যন্ত দেখা যাইতেছে। দেখিলেন, স্বচ্ছ সফটিকমণিডত হৈম প্রতিমার ন্যায় রোহিণী জলতলে শাইয়া আছে। অন্ধকার জলতলে আলো করিয়াছে। ষোড়শ পরিচ্ছেদ গোবিন্দলাল তৎক্ষণাৎ জলে নামিয়া ডুব দিয়া, রোহিণীকে উঠাইয়া, সোপান উপরি শায়িত করিলেন। দেখিলেন, রোহিণী জীবিত আছে কি না সন্দেহ ; সে সংজ্ঞাহীন ; নিশ্বাসপ্রশ্বাসরহিত। উদ্যান হইতে গোবিন্দলাল একজন মালীকে ডাকিলেন । মালীর সাহায্যে রোহিণীকে বহন করিয়া উদ্যানস্থ প্রমোদগাহে শ শ্রীষা জন্য লইয়া গেলেন। জীবনে হউক, মরণে হউক, রোহিণী শেষ গোবিন্দলালের গহে প্রবেশ করিল। ভ্ৰমর ভিন্ন আর কোন সত্ৰীলোক কখনও সে উদ্যানগাহে প্রবেশ করে নাই। বাত্যাবর্ষাবিধৌত চম্পকের মত, সেই মত নারীদেহ পালঙেক লম্বমান হইয়া প্রজবলিত দীপালোকে শোভা পাইতে লাগিল। বিশালদীঘ বিলম্বিত ঘোরকৃষ্ণ কেশরাশি জলে ঋজতাহা দিয়া জল ঝরিতেছে, মেঘে যেন জলবান্টি করিতেছে। নয়ন মাদ্রিত; কিন্তু সেই মন্দিত পক্ষোর উপরে ভ্ৰযোেগ জলে ভিজিয়া আরও অধিক কৃষ্ণশোভায় শোভিত হইয়াছে। আর সেই ললাট-স্থির, বিস্তারিত, লতজাভয়বিহীন, কোন অব্যক্ত ভাববিশিষ্ট-গল্ড এখনও উত্তজবল— অধর এখনও মধ্যময়, বান্ধলীপ চেপর লজিজাসস্থল। গোবিন্দলালের চক্ষে জল পড়িল। বলিলেন, “মরি মরি! কেন তোমায় বিধাতা এত রােপ দিয়া পঠাইয়াছিলেন, দিয়াছিলেন তা সখী করিলেন না কেন ? এমন করিয়া তুমি চলিলে কেন?” এই সন্দরীর আত্মঘাতের তিনি নিজেই যে মাল-এ কথা মনে করিয়া তাঁহার বক ফাটিতে লাগিল। যদি রোহিণীর জীবন থাকে, রোহিণীকে বাঁচাইতে হইবে। জলমগনকে কি প্রকারে বাঁচাইতে হয়, গোবিন্দলাল তাহা জানিতেন। উদারস্থ জল সহজেই বাহির করান যায়। দই চারি বার G V8