পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী সন্ধ্যা উত্তীণ হয়। প্রায়াগতা যামিনীর অন্ধকার, তাহার উপর বাদলের অন্ধকার, বারণীর ঘাট সপস্ট দেখা যায় না। গোবিন্দলাল অসপস্টরপে দেখিলেন যে, একজন সত্ৰীলোক নামিতেছে। রোহিণীর সেই সোপােনাবতরণ গোবিন্দলালের মনে হইল। বাদলে ঘাট বড় পিছলা হইয়াছে—— পাছে পিছলে পা পিছলাইয়া সত্ৰীলোকটি জলে পড়িয়া গিয়া বিপদগ্ৰস্ত হয়, ভাবিয়া গোবিন্দলাল কিছ, ব্যস্ত হইলেন। পশুপমন্ডপ হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “কে গা তুমি, আজ ঘাটে নামিও না—বড় পিছল, পড়িয়া যাইবে।” সত্ৰীলোকটি তাহার কথা সপভট বঝিতে পারিয়াছিল কি না বলিতে পারি না। বলিটি পড়িতেছিল—বোধ হয় বন্টির শব্দে সে ভাল করিয়া শনিতে পায় নাই। সে কুক্ষিস্থ কলসী ঘাটে নামাইল। সোপান পনরারোহণ করিল। ধীরে ধীরে গোবিন্দলালের পক্ষেপাদ্যান অভিমখে চলিল। উদ্যানন্দবার উদঘাটিত করিয়া উদ্যানমধ্যে প্রবেশ করিল। গোবিন্দলালের কাছে, মন্ডপতলে গিয়া দাঁড়াইল ।” গোবিন্দলাল দেখিলেন, সম্মখে রোহিণী। গোবিন্দলাল বলিলেন, “ভিজিতে ভিজিতে এখানে কেন রোহিণী ?” রো। আপনি কি আমাকে ডাকিলেন ? গো। ডাকি নাই। ঘাটে বড় পিছল, নামিতে বারণ করিতেছিলাম। দাঁড়াইয়া ভিজিতেছে কেন ? রোহিণী সাহস পাইয়া মন্ডপমধ্যে উঠিল। গোবিন্দলাল বলিলেন, “লোকে দেখিলে কি বালিবো ? “ রো। যা বলিবার তা বলিতেছে। সে কথা আপনার কাছে একদিন বলিব বলিয়া অনেক যত্ন করিতেছি। গো। আমারও সে সম্বন্ধে কতকগলি কথা জিজ্ঞাসা করিবার আছে। কে এ কথা রটাইল ? তোমাবা ভ্ৰমরের দোষ দাও কেন ? রো। সকল বলিতেছি। কিন্তু এখানে দাঁড়াইয়া বলিব কি ? গো। না। আমার সঙেগ আইস । এই বলিয়া গোবিন্দলাল, বোহিণীকে ডাকিয়া বাগানের বৈঠকখানায় লইয়া গেলেন। সেখানে উভয়ে যে কথোপকথন হইল, তাহার পরিচয় দিতে আমাদিগের প্রবত্তি হয় না। কেবল এই মাত্র বলিব যে, সে রাত্রে রোহিণী, গহে যাইবার পকেবা বঝিয়া গেলেন যে, গোবিন্দলাল রোহিণীর রাপে মগধ । ষড়বিংশতিতম পরিচ্ছেদ রাপে মগধ ? কে কার নয় ? আমি এই হরিত নীল চিত্ৰিত প্ৰজাপতিটির রাপে মগধ। তুমি কুসমিত কামিনী-শাখার রাপে মগধ। তাতে দোষ কি ? রােপ ত মোহের জন্যই হইয়াছিল। গোবিন্দলাল প্রথমে এইরােপ ভাবিলেন। পাপের প্রথম সোপানে পদাপণ করিয়া, পণ্যাত্মাও এই রােপ ভাবে। কিন্তু যেমন বাহ্য জগতে মাধ্যাকর্ষণে, তেমনি অন্তর্জগতে পাপের আকর্ষণে প্রতি পদে পতনশীলের গতি বন্ধিত হয়। গোবিন্দলালের অধঃপতন বড় দ্রত হইল-কেন না, রুপতৃষ্ণা অনেক দিন হইতে তাঁহার হৃদয় শািন্ডক করিয়া তুলিয়াছে। আমরা কেবল কাঁদিতে পারি, অধঃপতন বর্ণনা করিতে পারি না। ক্ৰমে কৃষ্ণকান্তের কাণে রোহিণী ও গোবিন্দলালের নাম একত্রিত হইয়া উঠিল। কৃষ্ণকান্ন দঃখিত হইলেন। গোবিন্দলালের চরিত্রে কিছমাত্র কলঙ্ক ঘটিলে তাঁহার বড় কািট। মনে মনে ইচ্ছা হইল, গোবিন্দলালকে কিছর অন্য যোগ করিবেন। কিন্তু সম্প্রতি কিছ পীড়িত হইয়া পড়িয়াছিলেন । শয়নমন্দির ত্যাগ করিতে পারিতেন না। সেখানে গোবিন্দলাল তাঁহাকে প্রত্যহ দেখিতে আসিত, কিন্তু সৰ্ব্বদা তিনি সেবকগণপবিবেপ্টিত থাকিতেন, গোবিন্দলালকে সকলের সাক্ষাতে কিছ বলিতে পরিতেন না। কিন্তু পীড়া বড় বদ্ধি পাইল। হঠাৎ কৃষ্ণকান্তের মনে হইল যে, বঝি চিত্ৰগতের হিসাব নিকাশ হইয়া আসিল—এ জীবনের সাগরসঙ্গম বঝি সম্মখে। আর বিলম্ব করিলে কথা বঝি বলা হইবে না। এক দিন গোবিন্দলাল অনেক রাত্রে বাগান হইতে প্রত্যাগমন করিলেন। সেই দিন কৃষ্ণকান্ত মনের কথা বলিবেন মনে করিলেন। CG 8