পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল গোবিন্দলাল দেখিতে আসিলেন। কৃষ্ণকান্ত পােশ ববত্তিগণকে উঠিয়া যাইতে বলিলেন। পাশাব্যবত্তি গণ সকলে উঠিয়া গেল। তখন গোবিন্দলাল কিঞিৎ অপ্ৰতিভ হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি আজ কেমন আছেন?” কৃষ্ণকান্ত ক্ষীণস্বরে বলিলেন, “আজি বড় ভাল নই। তোমার এত রাত্ৰি হইল কেন ?” গোবিন্দলাল সে কথার কোন উত্তর না দিয়া, কৃষ্ণকান্তের প্রকোম্পাঠ হসতিমধ্যে লইয়া নাড়ী টিপিয়া দেখিলেন। অকস্মাৎ গোবিন্দলালের মািখ শকাইয়া গেল। কৃষ্ণকান্তের জীবনপ্রবাহ অতি ধীরে, ধীরে, ধীরে বহিতেছে। গোবিন্দলাল কেবল বলিলেন, “আমি আসি তেছি। ” কৃষ্ণকান্তের শয়নগহে হইতে নিগত হইয়া গোবিন্দলাল একেবারে স্বয়ং বৈদ্যের গহে গিয়া উপস্থিত হইলেন। বৈদ্য বিস্মিত হইল। গোবিন্দলাল বলিলেন, “মহাশয়, শীঘ্ৰ ঔষধ লইয়া আসন, জ্যোিঠতাতের অবস্থা বড় ভাল বোধ হইতেছে না।” বৈদ্য শশব্যাসেত একরাশি বটিকা লইয়া তাঁহার সঙ্গে ছটিলেন।—কৃষ্ণকান্তের গহে গোবিন্দলাল বৈদ্যসাহিত উপস্থিত হইলেন, কৃষ্ণকান্ত কিছ ভীত হইলেন। কবিরাজ হাত দেখিলেন। কৃষ্ণকান্ত জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন, কিছ শওকা হইতেছে কি ?” বৈদ্য বলিলেন, “মনষ্যশরীরে শঙ্কা কখন নাই ?” কৃষ্ণকান্ত বঝিলেন। বলিলেন, “কতক্ষণ মিয়াদ ?” বৈদ্য বলিলেন, “ঔষধ খাওয়াইয়া পশ্চাৎ বলিতে পারিব।” বৈদ্য ঔষধ মাড়িয়া সেবন জন্য কৃষ্ণকান্তের নিকট উপস্থিত করিলেন। কৃষ্ণকান্ত ঔষধের খাল হাতে লইয়া একবার মাথায় সপশ করাইলেন। তাহার পর ঔষধটকু সমাদয় পিকদানিতে নিক্ষিপত করিলেন। বৈদ্য বিষন্ন হইল। কৃষ্ণকান্ত দেখিয়া বলিলেন, “বিষন্ন হইবেন না। ঔষধ খাইয়া বাঁচিবার বয়স আমার নহে। ঔষধের অপেক্ষা হরিনামে আমার উপকার। তোমরা হরিনাম করা, আমি শানি।” কৃষ্ণকান্ত ভিন্ন কেহই হরিনাম করিল না, কিন্তু সকলেই সন্তম্পিভত, ভীত, বিস্মিত হইল। কৃষ্ণকান্ত একাই ভয়শন্য। কৃষ্ণকান্ত গোবিন্দলালকে বলিলেন, “আমার শিওরে দেরাজের চাবি আছে, বাহির কর।” গোবিন্দলাল বালিসের নীচে হইতে চাবি লইলেন। কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “দেরাজ খলিয়া উইল বাহির কর।” গোবিন্দলাল দেরাজ খলিয়া উইল বাহির করিলেন। কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “আমার আমলা মহরি ও দশ জন গ্রামস্থ ভদ্রলোক ডাকাও ৷” তখনই নায়েব মহরি গোমস্ত কারকুনে, চট্টোপাধ্যায় মখোপাধ্যায় বন্দ্যোপাধ্যায় ভট্টাচায্যে, ঘোষ বস, মিত্র দত্তে ঘর পরিয়া গেল। কৃষ্ণকান্ত একজন মহরিকে আজ্ঞা করিলেন, “আমার উইল পড়া।” মহরি পড়িয়া সমাপত করিল। কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “ও উইল ছিড়িয়া ফেলিতে হইবে। নািতন উইল লেখা ?” মহরি জিজ্ঞাসা করিল, “কির পি লিখিব ?” কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “যেমন আছে সব সেইরাপ, কেবল—” “কেবল কি ?” “কেবল গোবিন্দলালের নাম কাটিয়া দিয়া, তাহার সন্থানে আমার ভ্রাতুঙ্খপত্ৰবধ ভ্ৰমরের নাম লেখা। ভ্ৰমরের অবত্ত মানাবস্থায় গোবিন্দলাল ঐ আন্ধাংশ পাইবে লেখা।” সকলে নিস্তবধ হইয়া রহিল। কেহ কোন কথা কহিল না। মহরি গোবিন্দলালের মািখপানে চাহিল। গোবিন্দলাল ইঙ্গিত করিলেন, লেখা। মহরি লিখিতে আরম্ভ করিল। লেখা সমাপন হইলে কৃষ্ণকান্ত স্বাক্ষর করিলেন। সাক্ষিগণ স্বাক্ষর করিল। গোবিন্দলাল আপনি উপযাচক হইয়া, উইলখানি লইয়া তাহাতে সাক্ষী সাবরােপ স্বাক্ষর করিলেন। উইলে গোবিন্দলালের এক কপদকও নাই-ভ্ৰমরের আদর্ধাংশ। সেই রাত্রে হরিনাম করিতে করিতে তুলসীতলায় কৃষ্ণকান্ত পরলোক গমন করিলেন। C CAC