পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

वर्ग७ञ ज्ञानावव्ौ সপতবিংশতিতম পরিচ্ছেদ কৃষ্ণকান্তের মাতৃত্যুসংবাদে দেশের লোক ক্ষোভ করিতে লাগিল। কেহ বলিল, একটা ইন্দ্রপাত হইয়াছে, কেহ বলিল, একটা দিকপাল মরিয়াছে, কেহ বলিল, পৰ্ব্বতের চড়া ভাঙ্গিয়াছে। কৃষ্ণকান্ত বিষয়ী লোক, কিন্তু খাঁটি লোক ছিলেন। এবং দরিদ্র ও ব্রাহ্মণপন্ডিতকে যথেস্ট দান করিতেন। সতরাং অনেকেই তাঁহার জন্য কাতর হইল। সব্বাপেক্ষা ভ্ৰমর। এখন কাজে কাজেই ভ্রমরকে আনিতে হইল। কৃষ্ণকান্তের মহত্যুর পর দিনেই গোবিন্দলালের মাতা উদ্যোগী হইয়া পত্ৰবধকে আনিতে পাঠাইলেন। ভ্রমর আসিয়া কৃষ্ণকান্তের জন্য কাঁদিতে আরম্ভ করিল। গোবিন্দলালের সঙেগ ভ্রমরের প্রথম সাক্ষাতে, রোহিণীর কথা লইয়া কোন মহাপ্ৰলয় ঘটিবার সম্ভাবনা ছিল কি না, তাহা আমরা ঠিক বলিতে পারি না, কিন্তু কৃষ্ণকান্তের শোকে সে সকল কথা এখন চাপা পড়িয়া গেল। ভ্রমরের সঙ্গে গোবিন্দলালের যখন প্রথম সাক্ষাৎ হইল, তখন ভ্রমর জ্যোিঠ শবেশরের জন্য কাঁদিতেছে। গোবিন্দলালকে দেখিয়া আরও কাঁদিতে লাগিল। গোবিন্দলালও অশ্রাবষণা করিলেন। অতএব যে বড় হাঙ্গামার আশঙ্কা ছিল, সেটা গোলমালে মিটিয়া গেল। দই জনেই তাহা বঝিল। দই জনেই মনে মনে সিথর করিল যে, যখন প্রথম দেখায় কোন কথাই হইল না, তবে আর গোলযোগ করিয়া কাজ নাই—গোলযোগের এ সময় নহে; মানে মানে কৃষ্ণকান্তের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন হইয়া যাক। —তাহার পরে যাহার মনে যা থাকে, তাহা হইবে। তাই ভাবিয়া গোবিন্দলাল, একদা উপযক্ত সময় বঝিয়া ভ্রমরকে বলিয়া রাখিলেন, “ভদ্রমর, তোমার সঙ্গে আমার কয়েকটি কথা আছে। কথাগালি বলিতে আমার বক ফাটিয়া যাইবে । পিতৃশোকের অধিক যে শোক, আমি সেই শোকে এক্ষণে কাতর। এখন আমি সে সকল কথা তোমায় বলিতে পারি না ; শ্রাদেধর পর যাহা বলিবার আছে, তাহা বলিব। ইহার মধ্যে সে সকল কথার কোন প্রসঙেগ কােজ নাই। " ভ্রমর, অতি কন্টে নয়নাশ্র সম্পবরণ করিয়া বাল্যপরিচিত দেবতা, কালী, দরগা, শিব, হরি করিয়া বলিল, “আমারও কিছ, বলিবার আছে। তোমার যখন অবকাশ হইবে, জিজ্ঞাসা কারও | ” আর কোন কথা হইল না। দিন যেমন কাটিত, তেমনি কাটিতে লাগিল,—দেখিতে, তেমনি দিন কাটিতে লাগিল ; দাস দাসী, গহিণী, পৌরস্ত্রী, আত্মীয় সবজন কেহ জানিতে পারিল না। যে, আকাশে মেঘ উঠিয়াছে, কুসমে কীট প্রবেশ করিয়াছে, এ চার প্রেমপ্রতিমায় ঘণ লাগিয়াছে। কিন্তু ঘণ লাগিয়াছে তা সত্য। যাহা ছিল, তাহা আর নাই। যে হাসি ছিল, সে হাসি আর নাই। ভ্রমর কি হাসে না ? গোবিন্দলাল কি হাসে না ? হাসে, কিন্তু সে হাসি আর নাই। নযনে নয়নে মিলিতে মিলিতে যে হাসি আপনি উছলিয়া উঠে, সে হাসি আর নাই; যে হাসি আধি হাসি আধ্য প্রীতি, সে হাসি আর নাই; যে হাসি অন্ধেক বলে, সংসার সখময়, অব্দের্ধক বলে, সখের আকাঙক্ষা পরিল না—সে হাসি আর নাই। সে চাহনি নাই—যে চাহনি দেখিয়া ভ্ৰমর ভাবিত, “এত রূপ!”—যে চাহনি দেখিয়া গোবিন্দলাল ভাবিত, “এত গণ!" সে চাহনি আর নাই। যে চাহনিতে গোবিন্দলালের স্নেহপদ্ণ সিথরদম্পিট প্ৰমত্ত চক্ষ দেখিয়া ভ্রমর ভাবিত, বঝি এ সমদ্র আমার ইহজীবনে আমি সাঁতার দিয়া পার হইতে পারিব না,-যে চাহনি দেখিয়া, গোবিন্দলাল ভাবিয়া ভাবিয়া, এ সংসার সকল ভুলিয়া যাইত, সে চাহনি আর নাই। সে সকল প্রিয় সম্বোধন আর নাই—সে ”ক্ৰমর”, “ভোমরা”, “ভোমর”, “ভোম”, “ভুমারি”, “ভূমি”, “ভূমি”, “ভোঁ ভোঁ”—সে সব নিত্য নািতন স্নেহপণ, রঙ্গপািণ, সখপণ সম্বোধন আর নাই। সে কালো, কালা, কালাচাঁদ, কেলেসোনা, কালোমাণিক, কালিন্দী, কালীয়ে-সে প্রিয়সম্বোধন আর নাই। সে ও, ওগো, ওহে, ওলো,-সে প্রিয়সম্বোধন আর নাই। সে মিছামিছি ডাকাডাকি আর নাই। সে মিছামিছি বিকাবাঁকি আর নাই। সে কথা কহার প্রণালী আর নাই। আগে কথা কুলাইত না—এখন তাহা খাজিয়া আনিতে হয়। যে কথা আন্দের্ধক ভাষায়, অদ্ধেক নয়নে নয়নে, অধরে অধরে প্রকাশ পাইত, এখন সে কথা উঠিয়া গিয়াছে। সে কথা বলিবার C C WV