পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७िका ब्राफ़नाबव्गी পত্রের আন্তরিক বিচ্ছেদ হইয়াছে। সত্ৰীলোক ইহা সহজেই বঝিতে পারে। যদি তিনি এই সময়ে সদ্যপদেশে, স্নেহবাক্যে এবং সত্ৰীবদ্ধিসলভ অন্যান্য সদ্যপায়ে তাহার প্রতীকার করিতে যত্ন করিতেন, তাহা হইলে বঝি সফল ফলাইতে পারিতেন। কিন্তু গোবিন্দলালের মাতা বড় পাকা গহিণী নহেন, বিশেষ পত্ৰবধ বিষয়ের অধিকারিণী হইয়াছে বলিয়া ভ্ৰমরের উপর একটা বিদ্বেষাপন্নাও হইয়াছিলেন। যে স্নেহের বলে তিনি ভ্রমরের ইন্টকামনা করিবেন, ভ্রমরের উপর তাঁহার সে স্নেহ ছিল না। পত্ৰ থাকিতে, পত্রিবধর বিষয় হইল, ইহা তাঁহার অসহ্য হইল। তিনি একবারও অন্যভব করিতে পারিলেন না যে, ভ্রমর গোবিন্দলাল অভিন্ন সম্পত্তি জানিয়া, গোবিন্দলালের চরিত্রদোষিসম্ভাবনা দেখিয়া, কৃষ্ণকান্ত রায় গোবিন্দলালের শাসন জন্য ভ্রমরকে বিষয় দিয়া গিয়াছিলেন। একবারও তিনি মনে ভাবিলেন না যে, কৃষ্ণকান্ত মমষ অবস্থায় কতকটা লপািতবন্ধি হইয়া, কতকটা ভ্রান্তচিত্ত হইয়াই এ অবিধেয় কায্য করিয়াছিলেন। তিনি ভাবিলেন যে, পত্রবধর সংসারে তাঁহাকে কেবল গ্রাসাচ্ছাদনের অধিকারিণী, এবং অন্নদাস পৌরবগের মধ্যে গণ্যা হইয়া ইহজীবন নিববাহ করিতে হইবে। অতএব সংসার ত্যাগ করাই ভাল, স্থির করিলেন। একে পতিহীনা, কিছ, আত্মপরায়ণা, তিনি সর্বামিবিয়োগকাল হইতেই কাশীযাত্রা কামনা করিতেন, কেবল সত্ৰীস্বভাবসলভ পত্রিস্নেহবশতঃ এত দিন যাইতে পারেন। নাই। এক্ষণে সে বাসনা আরও প্রবল হইল। তিনি গোবিন্দলালকে বলিলেন, “কত্তারা একে একে সবগারোহণ করিলেন, এখন আমার সময় নিকট হইয়া আসিল । তুমি পত্রের কাজ করা; এই সময় আমাকে কাশী পাঠাইয়া দাও।” গোবিন্দলাল হঠাৎ এ প্রস্তাবে সম্পমতি হইলেন। বলিলেন, “চল, আমি তোমাকে আপনি কাশী রাখিয়া আসিব।” দভাগ্যবশতঃ এই সময়ে ভ্রমর একবার ইচ্ছা করিয়া পিত্ৰালয়ে গিয়াছিলেন। কেহই তাঁহাকে নিষেধ করে নাই। অতএব ভ্রমরের অজ্ঞাতে গোবিন্দলাল কাশীযাত্রার সকল উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। নিজনামে কিছ, সম্পত্তি ছিল—তাহা গোপনে বিক্ৰয় করিয়া অৰ্থসঞ্চয় করিলেন। কাgন হীরকাদি মাল্যবান বস্তু যাহা নিজের সম্পপত্তি ছিল——তাহা বিক্রয় করিলেন। এইরপে প্রায় লক্ষ টাকা সংগ্ৰহ হইল। গোবিন্দলাল ইহা দবারা ভবিষ্যতে দিনপাত করবেন সিন্থর করিলেন । তখন মাতৃসঙ্গে কাশীযাত্রার দিন স্থির করিয়া ভ্রমরকে আনিতে পাঠাইলেন। শাশড়ী কাশীযাত্রা করিবেন। শনিয়া ভ্রমর তাড়াতাড়ি আসিল । আসিয়া শাশড়ীর চরণ ধরিয়া অনেক বিনয় করিল ; শাশড়ীর পদপ্রান্তে পড়িয়া কাঁদিতে লাগিল, “মা, আমি বালিকা—আমায় একা রাখিয়া যাইও না—আমি সংসারধমের কি বঝি ? মা—সংসার সমদ্র, আমাকে এ সমন্দ্রে একা ভাসাইয়া যাইও না।” শাশড়ী বলিলেন, “তোমার বড় ননদ রহিল। সেই তোমাকে আমার ལ་ যত্ন করিবে—আর তুমিও গাহিণী হইয়ােছ।” ভ্ৰমর কিছই বঝিল না—কেবল কাঁদিতে লাগিল । ভ্রমর দেখিল বড় বিপদ সম্মখে। শাশড়ী ত্যাগ করিয়া চলিলেন——আবার স্বামীও তাঁহাকে রাখিতে চলিলেন—তিনিও রাখিতে গিয়া ব্যঝি আর না আইসেন! ভ্রমর গোবিন্দলালের পায়ে ধরিয়া কাঁদিতে লাগিল—বলিল, “কত দিনে আসিবে বলিয়া যাও।” গোবিন্দলাল বলিলেন, ‘বলিতে পারি না। আসিতে বড় ইচ্ছা নাই।” ভ্ৰমর পা ছাড়িয়া দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া, মনে ভাবিল, “ভয় কি ? বিষ খাইব ?” তার পরে স্থিরীকৃত যাত্রার দিবস আসিয়া উপস্থিত হইল। হরিদ্রাগ্রাম হইতে কিছ: দর শিবিকারোহণে গিয়া ট্রেন পাইতে হইবে। শােভ যাত্রিক লগন উপস্থিত—সকল প্রস্তুত। ভাবে ভারে সিন্দােক, তোরঙ্গ, বাক্স, বেগ, গাঁটরি বাহকেরা বহিতে আরম্ভ করিল। দাস দাসী সবিমল ধৌতবস্ত্র পরিয়া, কেশ রঞ্জিত করিয়া, দরওয়াজের সম্মখে দাঁড়াইয়া পান চিবাইতে লাগিল— তাহারা সঙেগ যাইবে । দবারবানেরা ছিটের জামার বন্ধক আটিয়া লাঠি হাতে করিয়া, বাহকদিগের সঙ্গে বকাবিকি আরম্ভ করিল। পাড়ার মেয়ে ছেলে দেখিবার জন্য ঝাকিল। গোবিন্দলালের মাতা গহদেবতাকে প্ৰণাম করিয়া, পৌরজন সকলকে যথাযোগ্য সম্ভাষণ করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে শিবিকারোহণ করিলেন; পৌরজন সকলেই কাঁদিতে লাগিল। তিনি শিবিকারোহণ করিয়া অগ্রসর হইলেন। এ দিকে গোবিন্দলাল অন্যান্য পৌরস্ত্রীগণকে যথোচিত সম্বোধন করিয়া শয়নগহে। Gğ bf O