পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दक्शा ब्रष्न्बव्ी কলিকাতায় নিশােকর দাস নামে মাধবীনাথের একজন বড় আত্মীয় ছিলেন। নিশােকর মাধবীনাথের অপেক্ষা আট দশ বৎসরের বয়ঃকনিষ্পাঠ। নিশােকর কিছ. করেন না—পৈতৃক বিষয় আছে—কেবল একটা একটা গীতবাদ্যের অনশীলন করেন। নিঅকস্মা বলিয়া সব্বদা পয্যটনে গমন করিয়া থাকেন। মাধবীনাথ তাঁহার কাছে আসিয়া সাক্ষাৎ করিলেন। অন্যান্য কথার পর নিশাকরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন হে, বেড়াইতে যাইবে ?” নিশা । কোথায় ? মা । যশোর । নি। সেখানে কেন ? মা। নীলকুঠি কিন্যব। নি। চল । তখন বিহিত উদ্যোগ করিয়া দই বন্ধ দই এক দিনের মধ্যে যশোহরাভিমখে যাত্ৰা করিলেন। সেখান হইতে প্ৰসাদপত্র যাইবেন। পণ8ম পরিচ্ছেদ দেখ, ধীরে ধীরে শীর্ণ শরীরা চিত্রানদী বাহিতেছে—তীরে অশবথ কদম্ব আমি খজজ্যর প্রভৃতি অসংখ্য বক্ষশোভিত উপবনে কোকিল দায়েল পাপিয়া ডাকিতেছে। নিকটে গ্রাম নাই; প্রসাদপত্র নামে একটি ক্ষদ্র বাজার প্রায় এক ক্লোশ পথ দর। এখানে মনষ্যেসমাগম নাই দেখিয়া নিঃশঙেক পাপাচরণ করিবার স্থান বঝিয়া পৰ্ব্বকালে এক নীলকর সাহেব এইখানে এক নীলকুঠি প্ৰস্তুত করিয়াছিল। এক্ষণে নীলকর এবং তাহার ঐশবষ্য ধবংসপরে প্রয়াণ করিয়াছে—তাহার আমীন। তাগাদগীর নায়েব গোমসীতা সকলে উপযন্ত সন্থানে সর্বকৰ্ম্মমর্জাজিজাত ফলভোগ করিতেছেন। একজন বাংগালী সেই জনশন্য প্রান্তরস্থিত রম্য অট্টালিকা ক্ৰয় করিয়া, তাহা সসজিজত করিয়াছিলেন। পণ্ডেপ, প্রস্তরপত্তলে, আসনে, দপণে, চিত্রে, গহি বিচিত্র হইয়া উঠিয়াছিল। তাহার অভ্যন্তরে দিবতলস্থ বহৎ কক্ষমধ্যে আমরা প্রবেশ করি। কক্ষমধ্যে কতকগালি রমণীয় চিত্র-কিন্তু কতকগলি সরচিবিগাহিত্য-আবর্ণনীয়। নিৰ্ম্মমল সংকোমল আসনোপরি উপবেশন করিয়া একজন শমশ্রীধারী মসলমান একটা তাম্ববােরার কাণ মাচড়াইতেছে-কাছে বসিয়া এক যাবতী ঠিং ঠিং করিয়া একটি তবলায় ঘা দিতেছে—সঙ্গে সঙ্গে হাতের সবর্ণালঙ্কার ঝিন, ঝিনা করিয়া বাজিতেছে—পাশ্যবস্থ প্রাচীরবিলম্বী দইখানি বহৎ দপণে উভয়ের ছায়াও ঐরাপ করিতেছিল। পাশের ঘরে বসিয়া, একজন যােবা পরষ নবেল পড়িতেছেন এবং মধ্যস্থ মন্ত দবারপথে যাবতীর কায্য দেখিতেছেন। তক্ষবােরার কােণ মাচড়াইতে মচড়াইতে দাড়িধারী তাহার তারে অঙ্গলি দিতেছিল। যখন তারের মেও মেও আর তবলার খ্যান্য খ্যান ওস্তাদজীর বিবেচনায় এক হইয়া মিলিল-তখন তিনি সেই গম্মফশমশ্রর অন্ধকারমধ্য হইতে কতকগলি তুষারধবল দন্ত বিনিগত করিয়া, বিষভদ লাভ কণঠরব বাহির করিতে আরম্ভ করিলেন। রব নিগত করিতে করিতে সে তুষারধবল দন্তগলি বহবিধ খিচুনিতে পরিণত হইতে লাগিল; এবং ভ্রমরকৃষ্ণ শমশ্র রাশি তাহার অন্যবিত্তন করিয়া নানাপ্রকার রঙগ করিতে লাগিল। তখন যাবতী খিচুনিসন্তাড়িত হইয়া সেই বােষভদ লভি রাবের সঙ্গে আপনার কোমল কন্ঠ মিশাইয়া গীত আরম্ভ করিল—তাহাতে সর, মোটা আওয়াজে, সোণালি রপোলি রকম একপ্রকার গীত হইতে লাগিল। এইখানে যবনিকা পতন করিতে ইচ্ছা হয়। যাহা অপবিত্র, আদর্শনীয়, তাহা আমর! দেখাইব না-যাহ নিতান্ত না বলিলে নয়, তাহাই বলিব। কিন্তু তথাপি সেই অশোক বকুল কুটজ কুরবাক কুঞ্জমধ্যে ভ্রমরগঞ্জন, কোকিলাকজন, সেই ক্ষদ্রনদীতরঙগচালিত রাজহংসের কলনাদ, সেই যথী জাতি মল্লিকা মধমালতী প্রভৃতি কুসমের সৌরভ, সেই গহমধ্যে নীলকাচপ্রবিভ্ৰাট রৌদ্রের অপব্ব ম্যাধরী, সেই রাজতস্ফটিকাদি নিমিত পশুপাধারে সবিন্যস্ত কুসমগচ্ছের শোভা, সেই গহ শোভাকারী দ্রব্যজাতের বিচিত্র উত্তজবল বর্ণ আর সেই গায়কের বিশদ্ধস্বরসপতকের ভূয়সী সন্টি. এই সকলের ক্ষণিক উল্লেখ করিলাম। কেন না, যে যােবক নিবিচটমনে যাবতীর চঞ্চল কটাক্ষ দক্ষিট করিতেছে, তাহার হৃদয়ে ঐ কটাক্ষের মাধযেই এই সকলের সক্ষপণ সফাত্তি হইতেছে। (