পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दकाश ब्रष्नाबव्ी সোণা। এখনি-ও পাপ মলেই বাঁচি । নিশা। এখন নয়, এখন আমি ঘাটে গিয়া বসিয়া থাকি । তুমি সতক থেকে। যখন দেখবে, ঠাকরণটি ঘাটের দিকে চলিলেন, তখনি গিয়া তোমার মনিবকে বলিয়া দিও। রংপো কিছ জানিতে না পারে। তার পর আমার সঙ্গে জাটো। “যে আজ্ঞে” বলিয়া সোেণা নিশাকরের পায়ের ধলা গ্ৰহণ করিল। তখন নিশােকর হেলিতে দলিতে গজেন্দ্রগমনে চিত্ৰাতনীর শোভী সোপােনাবলীর উপর গিয়া বসিলেন। অন্ধকারে নক্ষত্রচ্ছায়াপ্রদীপত চিত্রাবারি নীরবে চলিতেছে। চারি দিকে শগােল-কুক্কােরাদি বহবিধ রব করিতেছে। কোথাও দরবত্তীর্ণ নৌকার উপর বসিয়া ধীবর উচ্চৈঃস্বরে শ্যামবিষয় গায়িতেছে। তাঁদভন্ন সেই বিজন প্রান্তর মধ্যে কোন শবদ শোনা যাইতেছে না। নিশােকর সেই গীত শনিতেছেন এবং গোবিন্দলালের বাসগাহের দ্বিতল কক্ষের বাতায়ন নিঃসন্ত উত্তজবল দীপালোক দশন করিতেছেন। এবং মনে মনে ভাবিতেছেন, “আমি কি নশংস! একজন সত্ৰীলোকের সব্বনাশ করিবার জন্য কত কৌশল করিতেছি! অথবা নশংসতাই বা কি ? দলেটর দমন অবশ্যই কত্তব্য। যখন বন্ধর কন্যার জীবনরক্ষাৰ্থ এ কায্য বন্ধর নিকট স্বীকার করিয়াছি, তখন অবশ্য করিব। কিন্তু আমার মন ইহাতে প্ৰসন্ন নয়। রোহিণী পাপীয়সী, পাপের দন্ড দিব ; পাপস্রোতেব রোধ করিব ; ইহাতে অপ্ৰসাদই বা কেন ? বলিতে পারি না, বোধ হয় সোজা পথে গেলে এত ভাবিতাম না । বাঁকা পথে গিয়াছি বলিয়াই এত সঙ্কোচ হইতেছে। আর পাপ পণ্যের দন্ড পরিস্কার দিবার আমি কে ? আমার পাপ পণ্যের যিনি দন্ড পরিস্কার করিবেন, রোহিণীরও তিনি বিচারকত্তা। বলিতে পারি না, হয়ত তিনিই আমাকে এই কায্যে নিয়োজিত করিয়াছেন । কি জানি, “ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদি সিন্থতেন। যথা নিযন্তোহ সিম তথা করোমি।” এইরুপ চিন্তা করিতে করিতে রাত্রি প্রহরাতীত হইল। তখন নিশােকর দেখিলেন, নিঃশবদ পাদবিক্ষেপে রোহিণী আসিয়া কাছে দাঁড়াইল। নিশ্চয়কে সনিশ্চিত করিবার জন্য নিশােকর জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে গা ?” রোহিণীও নিশ্চয়কে সনিশ্চিত করিবার জন্য বলিল, “তুমি কে ?” নিশােকর বলিল, “আমি রাসবিহারী।” রোহিণী বলিল, “আমি রোহিণী।” নিশােকর। এত রাত্রি হলো কেন ? রোহিণী। একটি না দেখে শানে ত আসতে পারি নে। কি জানি কে কোথা দিয়ে দেখতে পাবে। তা তোমার বড় কম্পট হয়েছে। নিশা । কস্ট হোক না হোক, মনে মনে ভয় হইতেছিল যে, তুমি বঝি ভুলিয়া গেলে। রোহিণী। আমি যদি ভুলিবার লোক হাইতাম, তা হলে, আমার দশা এমন হইবে কেন ? এক জনকে ভুলিতে না পারিয়া এদেশে আসিয়াছি; আর আজ তোমাকে না ভুলিতে পারিয়া এখানে আসিয়াছি। এই কথা বলিতেছিল, এমত সময়ে কে আসিয়া পিছন হইতে রোহিণীর গলা টিপিয়া ধরিল। রোহিণী চমকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কে রে ?” গম্ভীর সবরে কে উত্তর করিল, “তোমার যাম।” রোহিণী চিনিল যে গোবিন্দলাল। তখন আসন্ন বিপদ বঝিয়া চারি দিক অন্ধকার দেখিয়া রোহিণী ভীতিকম্পিপতিস্বরে বলিল, “ছাড়! ছাড়া! আমি মন্দ অভিপ্ৰায়ে আসি নাই। আমি যে জন্য আসিয়াছি, এই বাবকে না হয় জিজ্ঞাসা কর।” এই বলিয়া রোহিণী যেখানে নিশােকর বসিয়াছিল, সেই স্থান অঙগালিনিন্দেশ করিয়া দেখাইল । দেখিল, কেহ সেখানে নাই। নিশােকর গোবিন্দলালকে দেখিয়া পলকের মুধ্যে কোথায় সরিয়া গিয়াছে। রোহিণী বিস্মিতা হইয়া বলিল, “কৈ, কেহ কোথাও নাই যে!” ” গোবিন্দলাল বলিল, “এখানে কেহ নাই। আমার সঙ্গে ঘরে এস।” রোহিণী বিষগ্নচিত্তে ধীরে ধীরে গোবিন্দলালের সঙ্গে ঘরে ফিরিয়া গেল। (N8