পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬১০

রাজসিংহ —বলিলেন, “ইহারা আমাদের কুটম্পব, ঘরে ঢের তসবির আছে। হিন্দ,রাজার তসবির। ज्ञाCछ् ?' “অভাব কি ?” বলিয়া প্রাচীনা, রাজা মানসিংহ, রাজা বীরবল, রাজা জয়সিংহ প্রভৃতির চিত্ৰ দেখাইল। রাজপত্রেী তাহাও ফিরাইয়া দিলেন, বলিলেন, “এও লইব না। এ সকল হিন্দ নয়, ইহারা মসলমানের চাকর।” তখন হাসিয়া বলিল, “মা, কে কার চাকর, তা আমি তা জানি না। আমার যা আছে, দেখাই, পসন্দা করিয়া লাও ৷” প্রাচীন চিত্র দেখাইতে লাগিল। রাজকুমারী পসন্দা করিয়া রাণা প্ৰতাপ, রাণা অমরসিংহ, রাণা কৰ্ণ, যশোবন্ত সিংহ প্রভৃতি কয়খানি চিত্র ব্রুয়া করিলেন। একখানি বাদ্ধা ঢাকিয়া রাখিল, অন্য তসবিরের সঙ্গে আসিয়াছে।” রাজকুমারী বলিলেন, “অত ভয় পাইতেছ। কেন ? এমন কাহার তসবির যে, দেখাইতে ভয় পাইতেছ?” বাড়ী। দেখিয়া কাজ নাই। আপনার ঘরের দশমনের ছবি। রাজকুমারী। কার তসবির। 2 বাড়ী। (সভয়ে) রাণা রাজসিংহের । রাজকুমারী হাসিয়া বলিলেন, “বীরপরিষ সত্ৰীজাতির কখনও শত্র নহে। আমি ও তসবির তখন বাদ্ধা। রাজসিংহের চিত্র তাঁহার হস্তে দিল। চিত্র হাতে লইয়া রাজকুমারী অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহা নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন; দেখিতে দেখিতে তাঁহার মািখ প্ৰফল্প হইল; লোচন বিস্ফারিত হইল। একজন সখী, তাঁহার ভাব দেখিয়া চিত্ৰ দেখিতে চাহিল-রাজকুমারী তাহার হস্তে চিত্ৰ দিয়া বলিলেন, “দেখ। দেখিবার যোগ্য বটে।” সখীগণের হাতে হাতে সে চিত্র ফিরিতে লাগিল। রাজসিংহ যাবা পরষ নহে—তথাপি তাঁহার চিত্ৰ দেখিয়া সকলে প্রশংসা করিতে লাগিল । বাদ্ধা সংযোগ পাইয়া এই চিত্ৰখানিতে দিবগণ মনোফা করিল। তার পর লোভ পাইয়া বলিল, “ঠাকুরাণি! যদি বীরের তসবির লইতে হয়, তবে আর একখানি দিতেছি । ইহার মত পথিবীতে বীর কে ?” এই বলিয়া বাদ্ধা আর একখানি চিত্র বাহির করিয়া রাজপত্রীর হাতে দিল। রাজকুমারী জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কাহার চেহারা ?” বাদ্ধা। বাদশাহ আলমগীরের। রাজকুমারী। কিনিব। এই বলিয়া একজন পরিচারিকাকে রাজপত্রী ক্লীত চিত্রগলির মাল্য আনিয়া বাদ্ধাকে বিদায় করিয়া দিতে বলিলেন। পরিচারিকা মাল্য আনিতে গেল, ইত্যবসরে রাজপত্রী সখীগণকে বলিলেন, “এসো, একটা আমোদ করা যাক ৷” রঙগাঁপ্রিয়া বয়স্যাগণ বলিল, “কি আমোদ বল! বল!” রাজপত্ৰী বলিলেন, “আমি এই আলমগীর বাদশাহের চিত্ৰখানি মাটিতে রাখিতেছি। § উহার মাখে এক একটি বাঁ পায়ের নাতি মার। কার নাতিতে উহার নাক ভাঙেগ શ !” ভয়ে সখীগণের মািখ শকাইয়া গেল। একজন বলিল, “আমন কথা মখে আনিও না, কুমারীজী! কাক পক্ষীতে শনিলেও, রািপনগরের গড়ের একখানি পাতর থাকিবে না।” হাসিয়া রাজপত্রী চিত্ৰখানি মাটিতে রাখিলেন, “কে নাতি মারিবি মাের।” কেহ অগ্রসর হইল না। নিৰ্ম্মল নাম্পানী একজন বয়স্যা আসিয়া রাজকুমারীর মািখ টিপিয়া ধরিল। হাসিতে হাসিতে বলিল, “আমন কথা আর বলিও না।” W9 OS)