পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী চঞ্চলকুমারী ধীরে ধীরে অলঙ্কারশোভিত বাম চরণ খানি ঔরঙ্গজেবের চিত্রের উপরে সংস্থাপিত করিলেন-চিত্রের শোভা বঝি বাড়িয়া গেল। চঞ্চলকুমারী একটি হেলিলেন—মড় মড় শবদ হইল-ঔরঙ্গজেব বাদশাহের প্রতিমাত্তি রাজপতিকুমারীর চরণতলে ভাঙ্গিয়া গেল। “কি সববনাশ! কি করিলে!” বলিয়া সখীগণ শিহরিল। রাজপতিকুমারী হাসিয়া বলিলেন, “যেমন ছেলেরা পর্তুল খেলিয়া সংসারের সাধ মিটায়, আমি তেমনই মোগল বাদশাহের মখে নাতি মারার সাধ মিটাইলাম।” তার পর নিন্মলের মািখ চাহিয়া বলিলেন, “সখি, নিৰ্ম্মল! ছেলেদের সাধ মিটে; সময়ে তাহদের সত্যের ঘর-সংসার হয়। আমার কি সাধ মিটিবে না ? আমি কি কখন জীবন্ত ঔরঙ্গজেবের মাখে এইরপ—” নিম্পমাল, রাজকুমারীর মািখ চাপিয়া ধরিলেন, কথাটা সমাপত হইল না—কিন্তু সকলেই তাহার অৰ্থ বঝিল। প্রাচীনার হৃদয় কম্পিপতি হইতে লাগিল—এমন প্রাণসংহারক। কথাবাত্তা যেখানে হয়, সেখান হইতে কতক্ষণে নিম্প্রকৃতি পাইবে! এই সময়ে তাহার বিক্ৰীত তসবিরের মাল্য আসিয়া পৌছিল। প্রাপিতমাত্র প্রাচীনা উদ্ধাবশবাসে পলায়ন করিল। সে ঘরের বাহিরে আসিলে, নিৰ্ম্মমল তােহর পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছটিয়া আসিল। আসিয়া তাহার হাতে একটি আশরাফি দিয়া বলিল, “আীিয় বাড়ী, দেখিও, যাহা শনিলে, কাহারও সাক্ষাতে মখে আনিও না। রাজকুমারীর মাখের আটক নাই—এখনও উহার ছেলে বয়স।” বাড়ী আশরাফিটি লইয়া বলিল, “তা এ কি আর বলতে হয় মা! আমি তোমাদের দাসী —আমি কি আর এ সকল কথা মখে আনি ?” নিৰ্ম্মমল সন্তুষ্ট হইয়া ফিরিয়া গেলেন। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ চিত্ৰবিচারণ পরদিন চঞ্চলকুমারী ক্লীত চিত্ৰগলি একা বসিয়া মনোযোগের সহিত দেখিতেছিলেন। নিৰ্ম্মলকুমারী আসিয়া সেখানে উপস্থিত হইল। তাহাকে দেখিয়া চঞ্চল বলিল, “নিম্মল! ইহার মধ্যে কাহাকেও তোমার বিবাহ করিতে ইচ্ছা করে ?” নিৰ্ম্মমল বলিল, “যাহাকে আমার বিবাহ করিতে ইচ্ছা করে, তাহার চিত্র ত তুমি পা দিয়া ভাণ্ডিগয়া ফেলিয়ােছ।” চণ8ল। ঔরঙ্গজেবকে ! নিম্পমাল। আশচষ্য হইলে যে ? চঞ্চল। বদজাতের ধাড়ি যে ? আমন পাষণ্ডড যে আর পথিবীতে জন্মে নাই! নিৰ্ম্মমল। বন্দজাতকে বশ করিতেই আমার আনন্দ । তোমার মনে নাই, আমি বাঘ পষিতাম ? আমি একদিন না একদিন ঔরঙ্গজেবকে বিবাহ করিব ইচ্ছা আছে। চঞ্চল। মসলমান যে ? নিৰ্ম্মল। আমার হাতে পড়িলে ঔরঙ্গজেবও হিন্দ হবে। চণ8ল। তুমি মর। নিম্পমাল। কিছমাত্র আপত্তি নাই-কিন্তু ঐ একখানা। কার ছবি তুমি পাঁচ বার করিয়া দেখিতেছ, সে খবরটা লইয়া। তবে মরিব । চ৭8লকুমারী তখন আর পাঁচখানা চিত্রের মধ্যে ক্ষিপ্ৰহস্তে করস্থ চিত্ৰখানি মিশাইয়া দিয়া বলিল, “কোন ছবি আবার পাঁচ বার করিয়া দেখিতেছিলাম ? মানষে মানষের একটা কলাওক দিতে পারিলেই কি হয় ? কোন ছবিখানা পাঁচ বার করিয়া দেখিতেছিলাম ?” নিৰ্ম্মমল হাসিয়া বলিল, “একখানা তসবির দেখিতেছিলে, তার আর কলঙক কি ? রাজকুমারি, তুমি রাগ করিলে বলিয়া আমার কাছে ধরা পড়িলে। কার এমন কপাল প্ৰসন্ন, তসবিরগলা দেখিলে আমি খাজিয়া বাহির করিতে পারি।” চঞ্চলকুমারী। আকবর শাহের । নিম্পমাল। আকবরের নামে রাজপতনী ঝাড় মারে। তা ত নহেই। এই বলিয়া নিৰ্ম্মলকুমারী তসবিরের গোছা হাতে লইয়া খাঁজিতে লাগিল। বলিল, “তুমি যেখানি দেখিতেছিলে, তাহার উলটা পিঠে একটা কালো দাগ আছে দেখিয়াছি।” সেই VSO