পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दक ज्ञष्भाबव्ी সংবাদটা অবশ্য দিল্লীতেও প্রচার হইল। বাদশাহী রঙমহলে প্রচারিত হইল। যোধপরী বেগম শনিয়া বড় নিরানন্দ হইলেন। তিনি হিন্দরে মেয়ে, মসলমানের ঘরে পড়িয়া ভারতেশবরী হইয়াও তাঁহার সখ ছিল না। তিনি ঔরঙ্গজেবের পরীমধ্যেও আপনার হিন্দয়ানী রাখিতেন। হিন্দ পরিচারিকা দ্বারা তিনি সেবিতা হইতেন; হিন্দরে পাক ভিন্ন ভোজন করিতেন না—এমন কি, ঔরঙ্গজেবের পরীমধ্যে হিন্দ দেবতার মাত্তি স্থাপন করিয়া পজা করিতেন। বিখ্যাত দেবদ্বেষী ঔরঙ্গজেব যে এতটা সহ্য করিতেন, ইহাতেই বাবা যায় যে, ঔরঙ্গজেব তাঁহাকেও একটা অনগ্ৰহ করিতেন। যোধপরী বেগম এ সংবাদ শানিলেন। বাদশাহের সাক্ষাৎ পাইলে, বিনীতভাবে বলিলেন, “জাঁহাপনা ! যাঁহার আজ্ঞায় প্রতিদিন রাজরাজেশবিরগণ রাজ্যচু্যত হইতেছে-এক সামান্যা বালিকা কি তাঁহার ক্ৰোধের যোগ্য ?” রাজেন্দ্ৰ হাসিলেন—কিন্তু কিছ, বলিলেন না। সেখানে কিছই হইল না। তখন যোধপরী-রাজকন্যা মনে মনে বলিলেন, “হে ভগবান!! আমাকে বিধবা কর! এ রাক্ষস আর অধিক দিন বাঁচিলে হিন্দনাম লোপ হইবে।” দেবী নামে তাঁহার একজন পরিচারিকা ছিল। সে যোধপর হইতে তাঁহার সঙ্গে আসিয়াছিল, কিন্তু অনেক দিন দেশ ছাড়া, এখন অধিক বয়সে, আর সে মাসলমানের পরীর মধ্যে থাকিতে চাহে না। অনেক দিন হইতে সে বিদায় চাহিতেছিল, কিন্তু সে বড় বিশ্ববাসী বলিয়া যোধপরী তাহাকে ছাড়েন নাই। যোধপরানী আজ তাহাকে নিভৃতে লইয়া গিয়া বলিলেন, “তুমি অনেক দিন হইতে যাইতে চাহিতেছ, আজ তোমাকে ছাড়িয়া দিব। কিন্তু তোমাকে আমার একটি কাজ করিতে হইবে। কাজটি বড় শক্ত, বড় পরিশ্রমের কাজ, বড় সাহসের কাজ, আর বড় বিশবাসের কাজ। তাহার খরচ-পত্ৰ দিব, বখশিশ, দিব, আর চিরকালের জন্য মাক্তি দিব। করিবে ?” দেবী বলিল, “আজ্ঞা করন।” যোধপরী বলিলেন, “রািপনগরের রাজকুমারীর সংবাদ শনিয়াছ। তাঁর কাছে যাইতে হইবে। চিঠি-পত্ৰ দিব না, যাহা বলিবে, আমার নাম করিয়া বলিবে, আর আমার এই পাঞ্জা দেখাইবে, তিনি বিশ্ববাস করিবেন। ঘোড়ায় চড়িতে পাের, ঘোড়ায় যাইবে । ঘোড়া কিনিবার খরচ দিতেছি।” দেবী। কি বলিতে হইবে ? বেগম। রাজকুমারীকে বলিবে, হিন্দরে কন্যা হইয়া মসলমানের ঘরে না আসেন। আমরা আসিয়া, নিত্য মরণ কামনা করিতেছি। বলিবে যে, তসবির ভাণ্ডগার কথাটা বাদশাহ শনিয়াছেন, তাঁকে সাজা দিবার জন্যই আনিতেছেন। প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, রােপনগরওয়ালীকে দিয়া উদিপরীর তামাকু সাজাইবেন। বলিও, বরং বিষ খাইও, তথাপি দিল্লীতে আসিও না। “আরও বলিও, ভয় নাই। দিল্লীর সিংহাসন টালিতেছে। দক্ষিণে মারহাট্টা মোগলের হাড় ভাঙ্গিয়া দিতেছে। রাজপতেরা একত্রিত হইতেছে। জেজিয়ার জবালায় সমস্ত রাজপতনা জনলিয়া উঠিয়াছে। রাজপতোনায় গোহিত্যা হইতেছে। কোন রাজপত ইহা সহিবে ? সব রাজপত একত্রিত হইতেছে। উদয়পরের রাণা, বীরপরিষ। মোগল তাতারের মধ্যে তাঁর মত কেহ নাই। তিনি যদি রাজপতিগণের অধিনায়ক হইয়া অস্ত্ৰধারণ করেন—যদি এক দিকে শিবাজী, আর এক দিকে রাজসিংহ অস্ত্র ধরেন, তবে দিল্লীর সিংহাসন কয় দিন টিকিবে ?” দেবী। এমন কথা বলিও না, মা ! দিল্লীর তক্ত, তোমার ছেলের জন্য আছে। আপনার ছেলের সিংহাসন ভাঙিগাবার পরামর্শ আপনি দিতেছ? বেগম। আমি এমন ভরসা করি না যে, আমার ছেলে এ তন্তে বসিবে। যত দিন রাক্ষসী জেব-উন্নিসা আর ডাকিনী উদিপরেী বাঁচিবে, তত দিন সে ভরসা করি না। একবার সে ভরসা। : রৌশদ্বারার কাছে বড় মারা খাইয়াছিলাম।* আজিও মাখে চোখে সে দাগ-জখমের আছে । এইটকু বলিয়া যোধপরিকুমারী একটা কাঁদিলেন। তার পর বলিলেন, “সে সব কথায় কাজ নাই। তুমি আমার সকল মতলব বঝিবে না—বঝিয়াই বা কি হইবে ? যাহা বলি, তাই করিও। কথাটা ঐতিহাসিক। রোশন্বারা যোধপরীর নাক-মািখ ছিড়িয়া দিয়াছিল। 巴良8