পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী আরম্ভ হইয়াছে, তাঁর্থায় এক বৃহৎ দািগ জল হইতে আকাশপথে উত্থান করিয়া বিরাজমান ছিল। অট্টালিকা আমলশিরঃপয্যন্ত কৃষ্ণপ্রস্তরনিশ্চিমত ; দই দিকে প্রবল নদীপ্রবাহ দাগািমল প্ৰহত করিত। অদ্যাপি পৰ্যটক গড় মান্দারণ গ্রামে এই আয়াসলঙঘ্য দাগের বিশাল সন্তাপ দেখিতে পাইবেন : দাগের নিম্নভাগমাত্র এক্ষণে বিত্তমান আছে, অট্টালিকা কালের করাল সােপশে ধালিরাশি হইয়া গিয়াছে; তদ্যুপরি তিন্তুিড়ী, মাধবী প্রভৃতি ব্যক্ষ ও কানন[কারে -్బ? ভুজঙ্গ ভল্ল হিংস্র পশ্যগণকে আশ্রয় দিতেছে। নদীপারে অপর কয়েকটা দাগ বাঙ্গালার পাঠান সম্রােটদিগের শিরোভূষণ হোসেন শাহার বিখ্যাত সেনাপতি ইসমাইল গাজি এই দাগ নিম্পমাণ করেন। কিন্তু কালক্ৰমে জয়ধরসিংহ নামে একজন হিন্দী সৈনিক ইহা জায়গীর পান। এক্ষণে বীরেন্দ্ৰসিংহনামা জয়ধরসিংহের একজন উত্তরপরিষ। এখানে বসতি করিতেন । যৌবনকালে বীরেন্দ্ৰসিংহের পিতার সহিত সম্প্রীতি ছিল না। বীরেন্দ্ৰসিংহ সর্বভাবতঃ দাম্ভিক এবং অধীর ছিলেন, পিতার আদেশ কদাচিৎ প্রতিপালন করিতেন, এজন্য পিতাপত্রে সৰ্ব্বদা বিবাদ বচসা হইত। পত্রের বিবাহাৰ্থ বন্ধ ভূস্বামী নিকটস্থ সবজাতীয় অপর কোন ভূস্বামিকন্যার সহিত সম্প্ৰবন্ধ স্থির করিলেন। কন্যার পিতা পত্ৰহীন, এজন্য ' এই বিবাহে বীরোন্দ্রের সম্পত্তিবন্ধির সম্পভাবনা; কন্যাও সন্দরী বটে, সতরাং এমত সম্পবিন্ধ ব্যুদ্ধের বিবেচনায় অতি আদরণীয় বোধ হইল; তিনি বিবাহের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। কিন্তু বীরেন্দ্র সে সম্বন্ধে আদর না করিয়া নিজ পল্লীস্থ এক পতিপত্ৰহীনা দরিদ্রা রমণীর দহিতাকে গোপনে বিবাহ করিয়া আবার বিবাহ করিতে অস্বীকৃত হইলেন। বদ্ধ রোষপরবশ হইয়া পত্রকে গহ-বহিস্কৃত করিয়া দিলেন ; যােবা পিতৃগহ হইতে বহিস্কৃত হইয়া যোদ্ধবত্তি অবলম্বন করণাশায় দিল্লী যাত্রা করিলেন। তাঁহার সহধৰ্ম্মিমণী তৎকালে আন্তঃসত্ত্বা, এজন্য তাঁহাকে সমভিব্যাহারে লইয়া যাইতে পারিলেন না। তিনি মাতৃকুটীরে রহিলেন। এদিকে পত্ৰ দেশান্তর যাইলে পর বদ্ধ ভূস্বামীর অন্তঃকরণে পত্র-বিচ্ছেদে মনঃপীড়ার সঞ্চার হইতে লাগিল ; গতানশোচনার পরবশ হইয়া পত্রের সংবাদ আনয়নে যত্নবান হইলেন; কিন্তু যত্নে কৃতকাৰ্য্য হইতে পারিলেন না। পত্রিকে পািনরানয়ন করিতে না পরিয়া তৎপরিবত্তে পত্ৰবধকে দরিদ্রার গহ হইতে সাদরে নিজালয়ে আনিলেন। উপযক্ত কালে বীরেন্দ্ৰসিংহের পুঃ এক কনা প্রসব করলেন। কিছ দিন পরে কনার প্রসতির পরলোক প্রাপিত হহ’ল । বীরেন্দ্ৰ দিল্লীতে উপনীত হইয়া মোগল সম্রাটের আজ্ঞাকারী রাজপতিসেনা-মধ্যে যোদ্ধত্বে বত হইলেন : অলপকালে নিজগণে উচ্চপদস্থ হইতে পারিলেন। বীরেন্দ্ৰসিংহ কয়েক বৎসরে ধন ও যশ সঞ্চয় করিয়া পিতার লোকান্তর সংবাদ পাইলেন। আর এক্ষণে বিদেশ। পয্যটন বা দিল্লী হইতে অনেকানেক সহচর আসিয়াছিল। তন্মধ্যে জনৈকা পরিচারিকা অার এক পরমহংস ছিলেন । এই আখ্যায়িকায় এই দাই জনের পরিচয় আবশ্যক হইবেক। পরিচারিকার নাম বিমলা, পরমহংসের নাম অভিরাম সবামী । বিমলা গহমধ্যে গাহকৰ্ম্মেম বিশেষতঃ বীরোন্দ্রের কন্যার লালনপালন ও রক্ষণাবেক্ষণে নিযক্ত থাকিতেন, তদ্ব্যতীত দগমধ্যে বিমলার অবস্থিতি করার অন্য কারণ লক্ষিত হইত না, সতরাং তাঁহাকে দাসী বলিতে বাধ্য হইয়াছি; কিন্তু বিমলাতে দাসীর লক্ষণ কিছই ছিল না। গহিণী যােদশী মান্যা, বিমলা পৌরগণের নিকটে প্রায় তােদশী মান্যা ছিলেন; পৌর-জন সকলেই তাঁহার বাধ্য ছিল। মাখশ্ৰী দেখিলে বোধ হইত যে, বিমলা যৌবনে পরমা সন্দরী ছিলেন। প্ৰভাতে চন্দ্রাস্তের ন্যায়। সে রাপের প্রতিভা এ বয়সেও ছিল। গজপতি বিদ্যাদিগগজ। নামে অভিরাম স্বামীর একজন শিষ্য ছিলেন, তাঁহার অলঙ্কারশাস্ত্ৰে যত ব্যুৎপত্তি থাকুক বা না থাকুক, রসিকতা প্রকাশ করার তৃষ্ণাটা বড় প্রবল ছিল। তিনি বিমলাকে দেখিয়া বলিতেন, “দাই যেন ভান্ডস্থ ঘাত; মদন-আগন যত শীতল হইতেছে, দেহখানি ততই জমাট বাঁধিতেছে।” এইখানে বলা উচিত, যে দিন গজপতি বিদ্যাদিগগজ এই রােপ রসিকতা করিয়া ফেলিলেন, সেই দিন অবধি বিমলা তাঁহার নাম রাখিলেন—“রসিকরাজ রসোপাধ্যায়” । VO