পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ নিৰ্ম্মলকুমারী অতি স্থিরবদ্ধিশালিনী—চঞ্চলের সহোদরাধিকা। নিৰ্ম্মমল অনেক ভাবিল। শেষে চণ্ডলের প্রতি সিথরদন্টি করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “রাজকুমারি । যে বীর তোমাকে এ বিপদ হইতে রক্ষা করিবে, তাহাকে তুমি কি দিবে ?” রাজকুমারী বঝিলেন। কাতর অথচ অবিকশিপত কণ্ঠে বলিলেন, “কি দিব সখি! আমার কি আর দিবার আছে ? আমি যে অবলা!” নিৰ্ম্মল। তোমার তুমিই আছে। চঞ্চল অপ্রতিভ হইয়া বলিল, “দর হা!” নিম্পমাল। তা রাজার ঘরে এমন হইয়া থাকে। তুমি যদি রকিল্লুণী হইতে পাের, যদপতি আসিয়া অবশ্য উদ্ধার করিতে পারেন । চঞ্চলকুমারী মখাবনত করিল। যেমন সৰ্য্যোদয়কালে মেঘমালার উপর আলোর তরঙ্গের পর উত্তজবলতর তরঙগ আসিয়া পলকে পলকে নািতন সৌন্দয্য উন্মেষিত করে, চঞ্চলকুমারীর মখে তেমনই পলকে পলিকে সখের, লাউজার, সৌন্দয্যের নবনবোন্মেষ হইতে লাগিল। বলিল, ‘তাঁহাকে পাইব, আমি কি এমন ভাগ্য করিয়াছি ? আমি বিকাইতে চাহিলে তিনি কি কিনিবেন ?” নিৰ্ম্মমল । সে কথার বিচারক তিনি-—আমরা নই। রাজসিংহের বাহতে শনিয়াছি, বল আছে ; তাঁর কাছে কি দতে পাঠান যায় না ? গোপনে-কেহ না জানিতে পারে, এরপ দত কি তাঁহার কাছে যায় না ? চ৭8ল ভাবিল। বলিল, “তুমি আমার গরদেবকে ডাকিতে পাঠাও । আমায় আর কে তেমন ভালবাসে ? কিন্তু তাঁহাকে সকল কথা বঝাইয়া বলিয়া আমার কাছে আনিও । সকল কথা বলিতে আমার লজজা করিবে ।” এমন সময়ে সখীজন সংবাদ লইয়া আসিল যে, একজন মতিওয়ালী মতি বেচিতে আসিয়াছে। রাজকুমারী বলিলেন, “এখন আমার মতি কিনিবার সময নহে। ফিরাইয়া দাও।” পরিবাসিনী বলিল, “আমরা ফিরাইবার চেষটা করিয়াছিলাম, কিন্তু সে কিছতেই ফিরিল না। বোধ হইল যেন, তার কি বিশেষ দরকার আছে।” তখন অগত্যা চঞ্চলকুমারী তাহাকে ডাকিলেন। মতিওয়ালী আসিয়া কতকগলি ঝাটা মতি দেখাইল। রাজকুমারী বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “এই ঝােটা মতি দেখাইবার জন্য তুমি এত জিদ করিতেছিলে ?” মতিওয়ালী বলিল, “না। আমার আরও দেখাইবার জিনিস আছে। কিন্তু তাহা আপনি একটি পষিদ না হইলে দেখাইতে পারি না।” চ৭8লকুমারী বলিল, “আমি একা তোমার সঙ্গে কথা কহিতে পারিব না; কিন্তু একজন সখী থাকিবে । নিম্পমলি থােক, আর সকলে বাহিরে যাও।” তখন আর সকলে বাহিরে গেল। দেবী—সে মতিওয়ালী দেবী ভিন্ন আর কেহ নয়— যোধপরী বেগমের পাঞ্জা দেখাইল । দেখিয়া, পড়িয়া চঞ্চলকুমারী জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ পাঞ্জা তুমি কোথায় পাইলে ?” দেবী। যোধপরী বেগম আমাকে দিয়াছেন। চ৭8ল । তুমি তাঁর কে ? দেবী। আমি তাঁর বাঁদনী । চ৭8ল। কেনই বা এ পাঞ্জা লইয়া এখানে আসিয়াছ ? দেবী তখন সকল কথা বঝাইয়া বলিল। শনিয়া নিৰ্ম্মমল ও চঞ্চল পরস্পরের মািখপানে চাহিতে লাগিলেন। চঞ্চল, দেবীকে পরিস্কৃত করিয়া বিদায় দিলেন। দেবী যাইবার সময়ে যোধপরীর পাঞ্জাখানা লইয়া গেল না। ইচ্ছাপাকবািক রাখিয়া গেল। মনে করিল, “কোথায় ফেলিয়া দিব,-কে কুড়াইয়া নিবে!” এই ভাবিয়া দেবী চণ্ডলকুমারীর নিকট পাঞ্জা ফেলিয়া গেল। সে গেলে পর চ৭8লকুমারী বলিলেন, “নিৰ্ম্মল! উহাকে ডাক; সে পাঞ্জাখানা ফেলিয়া গিয়াছে।” নিৰ্ম্মল। ফেলিয়া যায় নাই—বোধ হইল যেন, ইচ্ছাপাকবািক রাখিয়া গিয়াছে। চ৭8ল। আমি নিয়া কি করিব ? V RN)