পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ বলাইয়া বলিল, “বিজয়! এখানে থাকিও—আমি আসিতেছি—কোন শব্দ করিও না।” অশব স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল ; তাহার আরোহী পাদচারে অতি দ্রুতবেগে পৰ্ব্ববত হইতে অবতরণ করিলেন। পৰ্ব্ববর্তত যে বড় উচ্চ নহে, তাহা পাবেই বলা হইয়াছে। আশবারোহী পদব্রজে মিশ্র ঠাকুরের কাছে আসিয়া তাঁহাকে বন্ধন হইতে মন্ত করিলেন। মক্ত করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে, অলপ কথায় বলন।” মিশ্র বলিলেন, “চারি জনের সঙ্গে আমি একত্ৰ আসিতেছিলাম। তাহদের চিনি না—পথের আলাপ ; তাহারা বলে “আমরা বণিক।” এইখানে আসিয়া তাহারা মারিয়া ধরিয়া আমার যাহা কিছ. ছিল, কাড়িয়া লইয়া গিয়াছে।” প্রশনিকত্তা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি কি লইয়া গিয়াছে ?” ব্রাহ্মণ বলিল, “একগাছি মক্তার বালা, কয়টি আশরাফি, দইখানি পত্র।” ဒုက္**၊ বলিলেন, “আপনি এইখানে থাকুন। উহারা কোন দিকে গেল, আমি দেখিয়া ऊर्द्ध्या ।।' ব্ৰাহ্মণ বলিলেন, “আপনি যাইবেন কি প্রকারে ? তাহারা চারি জন, আপনি একা ।” আগন্তুক বলিল, “দেখিতেছেন না, আমি রাজপত সৈনিক।” অনন্ত মিশ্র দেখলেন, এই ব্যক্তি যাদ্ধব্যবসায়ী বটে। তাহার কোমরে তরবারি এবং পিস্তল, এবং হস্তে বাশা। তিনি ভয়ে আর কথা কহিলেন না। রাজপতি, যে পথে দস্যগণকে যাইতে দেখিয়াছিলেন, সেই পথে, অতি সাবধানে তাহাদিগের অনসরণ করতে লাগিলেন। কিন্তু বনমধ্যে আসিয়া আর পথ পাইলেন না, অথবা দস্যুদিগের কোন নিদশন পাইলেন না। তখন রাজপত আবাব পৰ্ব্বতের শিখরদেশে আরোহণ করিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ ইতস্ততঃ দলিট করিতে করিতে দেখিলেন যে, দরে বনের ভিতর প্রচ্ছন্ন থাকিয়া, চারি জনে যাইতেছে। সেইখানে কিছফক্ষণ অবস্থিতি করিয়া দেখিতে লাগিলেন, ইহারা কোথায় যায়। দেখিলেন, কিছ, পরে উহারা একটা পাহাড়ের তলদেশে গেল, তাহার পর উহাদের আর দেখা গেল না। তখন রাজপত সিদ্ধান্ত করিলেন যে, উহারা হয় ঐখানে বসিয়া বিশ্রাম করিতেছে— বাক্ষাদির জন্য দেখা যাইতেছে না ; নয়, ঐ পৰ্ব্বততলে গহা আছে, তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে। রাজপতি, বাক্ষাদি চিহ্ন দ্বারা সেই স্থানে যাইবার পথ বিলক্ষণ করিয়া নিরাপণ করিলেন। পবে অবতরণ করিয়া বনমধ্যে প্রবেশপকেবািক সেই সকল চিহ্নলক্ষিত পথে চলিলেন। এইরপে বিবিধ কৌশলে তিনি পািকব লক্ষিত স্থানে আসিয়া দেখিলেন, পববািততলে একটি গহা আছে। গহামধ্যে মনতুষ্যের কথাবাত্তা শনিতে পাইলেন। এই পৰ্য্যন্ত আসিয়া রাজপত কিছল ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন। উহারা চারি জন—তিনি একা; এক্ষণে গহ্যামধ্যে প্রবেশ করা উচিত কি না ? যদি গনুহ্যদ্বার রোধ করিয়া উহারা চারি জনে তাঁহার সঙেগ সংগ্রাম করে, তবে তাঁহার বাঁচিবার সম্পভাবনা নাই। কিন্তু এ কথা রাজপতের মনে বড় অধিকক্ষণ স্থান পাইল না-মহত্যুভয় আবার ভয় কি ? মােত্যুভয়ে রাজপত কোন কাৰ্য্য হইতে বিরত হয় না। কিন্তু দ্বিতীয কথা এই যে, তিনি গহামধ্যে প্রবেশ করিলেই তাঁহার হন্তে দাই একজন অবশ্য মরিবে; যদি উহারা সেই দস্যদল না হয় ? তবে নিরপরাধীর হত্যা হইবে। এই ভাবিয়া রাজপত সন্দেহ ভঞ্জনাথ অতি ধীরে ধীরে গনুহ্যদ্বারের নিকট আসিয়া দাঁড়াইয়া আভ্যন্তরস্থ ব্যক্তিগণের কথাবাৰ্ত্তা কর্ণপাত করিয়া শনিতে লাগিলেন। দস্যরা তখন অপহৃত সম্পত্তির বিভাগের কথা কহিতেছিল। শনিয়া রাজপতের নিশ্চয় প্রতীতি হইল যে, উহারা দস্য বটে। রাজপতি তখন গহামধ্যে প্রবেশ করাই স্থির করিলেন। ধীরে ধীরে বাশা বনমধ্যে লাকাইলেন। পরে আসি নিন্ডেকাষিত করিয়া দক্ষিণ হস্তে দঢ়মন্টিতে ধারণ করিলেন। বাম হস্তে পিস্তল। লাইলেন। দস্যরা যখন চঞ্চলকুমারীর পত্ৰ পাইয়া অর্থ লাভের আকাঙক্ষায় বিমাগধ হইয়া অন্যমনস্ক ছিল, সেই সময়ে রাজপত অতি সাবধানে পাদবিক্ষেপ করিতে করিতে গহামধ্যে প্রবেশ করিলেন। দলপতি গহ্যদ্বারের দিকে পশ্চাৎ ফিরিয়া বসিয়াছিল। প্রবেশ করিয়া রাজপত দঢ়মন্টিধাত তরবারি দলপতির মস্তকে আঘাত করিলেন। তাঁহার হন্তে এত বল যে, এক আঘাতেই মন্তক দ্বিখন্ড হইয়া ভূতলে পড়িয়া গেল। Ꮤ2 Ꮼ Ꮼ