পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষািঠ পরিচ্ছেদ ঃ মাতাজীকি জয়! রাণা অনন্ত মিশ্রকে তাঁহার প্রতীক্ষা করিতে বলিয়া গিয়াছিলেন, অনন্ত মিশ্রও তাঁহার অপেক্ষা করিতেছিলেন–কিন্তু তাঁহার চিত্ত স্থির ছিল না। অশ্বারোহীর যোদ্ধবেশ এবং তীব্রদটিতে তিনি কিছ কাতর হইয়াছিলেন। একবার ঘোরতর বিপদগ্ৰস্ত হইয়া, ভাগ্যক্রমে প্ৰাণে রক্ষা পাইয়াছেন।--কিন্তু আর সব হারাইয়াছেন—চঞ্চলকুমারীর আশা-ভরসা হারাইয়াছেন—আর কি বলিয়া তাঁহার কাছে মািখ দেখাইবেন ? ব্রাহ্মণ এইরােপ ভাবিতেছিলেন, এমন সময়ে দেখিলেন, পৰবতের উপরে দই তিন জন লোক দাঁড়াইয়া কি পরামর্শ করিতেছে। ব্রাহ্মণ ভনীত হইলেন ; মনে করিলেন, আবার নােতন। দস্যসম্প্রদায় আসিয়া উপস্থিত হইল নাকি ? সেবার—নিকটে যাহা হয় কিছ. ছিল, তাহা পাইয়া দস্যরা তাঁহার প্রাণবধে বিরত হইয়াছিল––এবার যদি ইহারা তাঁহাকে ধরে, তবে কি দিয়া প্রাণ রাখিবেন ? এইরােপ ভাবিতেছিলেন, এমত সময়ে দেখিলেন যে, পৰ্ব্ববতারাঢ় ব্যক্তিরা হস্ত প্রসারণ করিয়া তাঁহাকে দেখাইতেছে এবং পরস্পর কি বলিতেছে। ইহা দেখিবামাত্র, ব্রাহ্মণের যে কিছ: সাহস ছিল, তাহা গেল—ব্রাহ্মণ পলায়নের উদ্যোগে উঠিয়া দাঁড়াইলেন। সেই সময়ে পববাতবিহারীদিগের মধ্যে একজন পৰ্ব্ববত অবতরণ করিতে আরম্ভ করিল—দেখিয়া ব্রাহ্মণ উদ্ধৱশিবাসে পলায়ন করিল। তখন ‘ধর ধর” করিয়া তিন চারি জন্য তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছটিল—ব্রাহ্মণও ছটিলেন —অজ্ঞান, মন্তকচ্ছ, তথাপি “নারায়ণ নাবায়ণ” স্মরণ করিতে করিতে ব্ৰাহ্মণ তীরবৎ বেগে পলাইলেন। যাহারা তাঁহার পশ্চাদ্ধাবিত হইয়াছিল, তাহারা তাঁহাকে শেষে আর না দেখিতে পাইয়া প্রতিনিবাত্ত হইল। তাহারা অপর কেহই নহে—মহারাণার ভৃত্যবগ । মহারাণার সহিত এ স্থলে কি প্রকারে আমাদিগের সাক্ষাৎ হইল, তাহা এক্ষণে বৰ্ব্বাইতে হইতেছে। রাজপতিগণের শিকারে বড় আনন্দ। অদ্য মহারাণা শত অশবারোহী এবং ভূতগণ সমভিব্যাহারে মািগয়ায় বাহির হইয়াছিলেন। এক্ষণে তাঁহারা শিকারে প্রতিনিবত্ত হইয়া উদয়পরাভিমখে যাইতেছিলেন। রাজসিংহ সববাদা প্ৰহারিগণ কর্তৃক পরিবেন্টিত হইয়া রাজা হইয়া থাকিতে ভালবাসিতেন না। কখন কখন অনচরবগকে দরে রাখিয়া একাকী অৰ্শবারোহণ করিয়া ছদ্মবেশে প্রজাদিগের অবস্থা দেখিয়া শনিয়া বেড়াইতেন। সেই জন্য তাঁহার রাজ্যে প্ৰজা অত্যন্ত সখী হইয়া উঠিয়াছিল; স্বচক্ষে সকল দেখিতেন, স্বহস্তে সকল দঃখ নিবারণ করিতেন। আদ্য মািগয়া হইতে প্রত্যাবৰ্ত্তনকালে তিনি অনচরবগকে পশ্চাতে আসিতে বলিয়া দিয়া, বিজয় নামা দ্রুতগামী আশবপঠে আরোহণ করিয়া, একাকী অগ্রসর হইয়াছিলেন। এই অবস্থায় অনন্ত মিশ্রেীর সহিত সাক্ষাৎ হইলে যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা কথিত হইয়াছে। রাজা দস্যকৃত অত্যাচার শনিয়া স্বহস্তে ব্ৰহ্মত্সব উদ্ধারের জন্য ছটিয়াছিলেন। যাহা দঃসাধ্য এবং বিপৎপণ, তাহাতেই তাঁহার আমোদ ছিল। এ দিকে অনেক বেলা হইল দেখিয়া কতিপয় রাজভৃত্য দ্রািতপদে তাঁহার অন্যসন্ধানে চলিল। নীচে অবতরণকালে দেখিল, রাণার অশব দাঁড়াইয়া রহিয়াছে—ইহাতে তাহারা বিসিমত এবং চিন্তিত হইল। আশওকা করিল যে, রাণার কোন বিপদ ঘটিয়াছে। নিম্পেন শিলাখন্ডোপরি অনন্ত ঠাকুর বসিয়া আছেন দেখিয়া তাহারা বিবেচনা করিল যে, এই ব্যক্তি অবশ্য কিছ: জানিবে। সেই জন্য তাহারা হস্তপ্রসারণ করিয়া সে দিকে দেখাইয়া দিতেছিল, তাঁহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিবার জন্য তাহারা নামিতেছিল, এমন সময়ে ঠাকুরজী নারায়ণ সমরণপৰ্ব্ববক প্ৰসন্থান করিলেন। তখন তাহারা ভাবিল, তবে এই ব্যক্তি অপরাধী। এই ভাবিয়া তাহারা পশ্চাৎ ধাবিত হইল। ব্ৰাহ্মণ এক গহবরামধ্যে ল্যুকাইয়া প্রাণরক্ষা করিল। এ দিকে মহারাণা চঞ্চলকুমারীর পত্রপাঠ সমাপত ও মাণিকলালকে বিদায় করিয়া অনন্ত মিশ্রের তল্লাসে গেলেন। দেখিলেন, সেখানে ব্রাহ্মণ নাই-তৎপরিবত্তে তাঁহার ভূত্যবগ এবং তাঁহার সমভিব্যাহারী অশবারোহিগণ আসিয়া অধিত্যকার তলদেশ ব্যাপাত করিয়াছে। রাণাকে দেখিতে পাইয়া সকলে জয়ধবনি করিয়া উঠিল। বিজয়, প্রভুকে দেখিতে পাইয়া, তিন লম্বেফ অবতরণ করিয়া তাঁহার কাছে দাঁড়াইল। রাণা তাহার পঠে আরোহণ করিলেন। তাঁহার বস্ত্র VOC