পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী রধিরাক্ত দেখিয়া সকলেই বঝিল যে, একটা কিছ, ক্ষদ্র ব্যাপার হইয়া গিয়াছে। কিন্তু রাজপতিগণের ইহা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার-কেহ কিছ জিজ্ঞাসা করিল না। রাণা কহিলেন, “এইখানে এক ব্রাহ্মণ বসিয়াছিল; সে কোথায় গেল—কেহ দেখিয়াছিলে ?” যাহারা উহার পশ্চাদ্ধাবিত হইয়াছিল, তাহারা বলিল, “মহারাজ, সে ব্যক্তি পলাইয়াছে।” রাণা। শীঘ তাহার সন্ধান করিয়া লইয়া আইস । ভৃত্যগণ তখন সবিশেষ কথা বঝিয়া নিবেদন করিল যে, “আমরা অনেক সন্ধান করিয়াছি, কিন্তু পাই নাই।” আশবারোহিগণ মধ্যে রাণার পত্রদ্বয়, তাঁহার জ্ঞাতি ও অমাতােবগ প্রভৃতি ছিল। রাজা পত্রদ্বয় ও অমাত্যাবগকে নিজনে লইয়া গিয়া কথাবাত্তা বলিলেন। পরে ফিরিয়া আসিয়া আর সকলকে বলিলেন, “প্রিয়জনবগ! আজি অধিক বেলা হইয়াছে; তোমাদিগের সকলের ক্ষধাতৃষ্ণা পাইয়াছে সন্দেহ নাই। কিন্তু আজ উদয়পরে গিয়া ক্ষধাতৃষ্ণা নিবারণ করা আমাদিগের আদলেট নাই। এই পাববত্য পথে আবার আমাদিগকে ফিরিয়া যাইতে হইবে। একটি ক্ষদ্র লড়াই জটিয়াছে—লড়াইয়ে যাহার সাধ থাকে, আমার সঙেগ আইস—আমি, এই পৰ্ব্ববত পােনরারোহণ করিব । যাহার সাধ না থাকে, উদয়পরে ফিরিয়া যাও।” এই বলিয়া রাণা পৰ্ব্ববত আরোহণে প্রবত্ত হইলেন। অমনি “জয় মহারাণাকি জয়! জয় মাতাজনীকি জয়!“ বলিয়া সেই শত অশবারোহী তাঁহার পশ্চাতে পৰ্ব্বত আরোহণে প্রবত্ত হইল। উপরে উঠিয়া “হর! হর ।” শবেদ, রািপনগরের পথে ধাবিত হইল। আশবক্ষরের আঘাতে অধিত্যকায় ঘোরতর প্রতিধবনি হইতে লাগিল । সপতম পরিচ্ছেদ ঃ নিরাশা এদিকে অনন্ত মিশ্র রােপনগর হইতে যাত্রা করার পরেই রােপনগরে মহাধমে পড়িয়াছিল। মোগল বাদশাহের দাই সহস্ৰ অৰ্শবারোহী সেনা রােপনগরের গড়ে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহারা চঞ্চলকুমারীকে লাইতে আসিয়াছে। ༈་ নিশম্যালের মািখ শকাইল ; দ্রুতবেগে সে চঞ্চলকুমারীর কাছে গিয়া বলিল, “কি হইবে उी२ ?' চঞ্চলকুমারী মদ হাসিয়া বলিলেন, “কিসের কি হইবে ?” নিম্পমাল। তোমাকে ত লাইতে আসিয়াছে। কিন্তু এই ত ঠাকুরজী উদয়পাের গিয়াছেনএখনও তাঁর পৌছিবার বিলম্ব আছে। রাজসিংহের উত্তর আসিতে না আসিতেই তোমায় লইয়া যাইবে-—কি হইবে সখি ? চ৭8ল। তার আর উপায় নাই——কেবল আমার সেই শেষ উপায় আছে। দিল্লীর পথে বিষভোজনে প্রাণত্যাগ- সে বিষয়ে আমি চিত্ত স্থির করিয়াছি। সতরাং আমার আর উদ্বেগ নাই। একবার কেবল আমি পিতাকে অননুরোধ করিব—যদি মোগলসেনাপতি সাত দিনের অবসর দেন । চ৭8লকুমারী সময়মত পিতৃপদে নিবেদন করিলেন যে, “আমি জন্মের মত রােপনগর হইতে চলিলাম। আমি আর কখন যে আপনাদিগের শ্ৰীচরণ দর্শন করিতে পাইব, আর কখন যে বাল্যাসখীগণের সঙ্গে আমোদ করিতে পাইব, এমত সম্পভাবনা নাই। আমি আর সাত দিনের অবসর ভিক্ষা করি।--সাত দিন মোগলসেনা এইখানে অবস্থিতি করােক। আর সাত দিন আমি আপনাদিগকে দেখিয়া শনিয়া জন্মের মত বিদায় হইব।” রাজা একটা কাঁদিলেন। বলিলেন, “দেখি, সেনাপতিকে অননুরোধ করিব, কিন্তু তিনি অপেক্ষা করিবেন কি না, বলিতে পারি না।” রাজা অঙ্গীকার মত মোগলসেনাপতির কাছে নিবেদন জানাইলেন। সেনাপতি ভাবিয়া দেখিলেন, বাদশাহ কোন সময় নিরাপিত করিয়া দেন নাই—বলিয়া দেন নাই যে, এত দিনের মধ্যে ফিরিয়া আসিবে। কিন্তু সাত দিন বিলম্ব করিতে তাঁহার সাহসী হইল না ; ভবিষ্যৎ বেগমের অন্যুরোধ একেবারে অগ্রাহ্য করিতেও পারিলেন না। আর পাঁচ দিন অবস্থিতি করিতে স্বীকৃত হইলেন। চঞ্চলকুমারীর বড় একটা ভরসা জন্মিল না। Wり○した