পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম SSSSSSSLS বীরেন্দ্র পনির্বাের ক্ষণেক চিন্তা করিয়া কহিলেন, “রাজা কে ? মোগল পাঠান উভয়েই রাজত্ব লইয়া বিবাদ ।” অভিরাম স্বামী উত্তর করিলেন, “যিনি করাগ্রাহী, তিনিই রাজা।” বী । আকবর শাহ ? অ । অবশ্য । এই কথায় বীরেন্দ্ৰসিংহ অপ্ৰসন্ন মািখভঙ্গী করিলেন; ক্ৰমে চক্ষ আরক্তবর্ণ হইল; অভিরাম স্বামী আকারেঙ্গিত দেখিয়া কহিলেন, “বীরেন্দ্ৰ ! ক্ৰোধ সংবরণ করা, আমি তোমাকে দিল্লীশাবরের অনাগত হইতে বলিয়াছি; মানসিংহের আনগত্য করিতে বলি নাই।” বীরেন্দ্ৰসিংহ দক্ষিণ হসন্ত প্রসারণ করিয়া পরমহংসকে দেখাইলেন ; দক্ষিণ হস্তের উপর বাম হস্তের অঙ্গলি নিন্দেশ করিয়া কহিলেন, “ও পাদপদ্মের আশীৰ্ব্ববাদে এই হসন্ত মানসিংহের রক্তে পলাবিত করিব।” অভিরাম স্বামী কহিলেন, “সিথর হও; রাগান্ধ হইয়া আত্মকায্য নম্পট করিও না ; মানসিংহের ಇದ್ಲಳ್ಳಿ: অপরাধের অবশ্য দন্ড করিও, কিন্তু আকবর শাহের সহিত যন্ধে ক * * বীরেন্দ্র সক্রোধে কহিতে লাগিলেন, “আকবর শাহের পক্ষ হইলে কোন সেনাপতির অধীন হইয়া যাদ্ধ করিতে হইবে ? কোন যোদ্ধার সাহায্য করিতে হইবে ? কাহার। আনগত্য করিতে হইবে ? মানসিংহের। গরদেব! এ দেহ বত্তমানে এ কায্য বীরেন্দ্ৰসিংহ হইতে হইবে না।” অভিরাম স্বামী বিষন্ন হইয়া নীরব হইলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তবে কি পাঠানের সহায়তা করা তোমার শ্রেয়ঃ হইল ?” বীরেন্দ্ৰ উত্তর করিলেন, “পক্ষাপক্ষ প্রভেদ করা কি শ্রেয়ঃ ?” অ ! হাঁ, পক্ষাপক্ষ প্রভেদ করা শ্ৰেয়ঃ। বী। তবে আমার পাঠান-সহকারী হওয়া শ্ৰেয়ঃ। অভিরাম স্বামী দীঘ নিশবাস ত্যাগ করিয়া পনরায় নীরব হইলেন ; চক্ষে তাঁহার বারিবিন্দ উপস্থিত হইল। দেখিয়া বীরেন্দ্ৰসিংহ যৎপরোনাসিত বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিলেন, “গারো! ক্ষমা করন; আমি না জানিয়া কি অপরাধ করিলাম আজ্ঞা করবেন।” অভিরাম স্বামী উত্তরীয় বস্ত্রে চক্ষ পরিস্কার করিয়া কহিলেন, “শ্রবণ কর, আমি কয়েক দিবস পয্যন্ত জ্যোতিষী-গণনায় নিযক্ত আছি, তোমা অপেক্ষা তোমার কন্যা আমার স্নেহের পাত্ৰী, ইহা তুমি অবগত আছ; সবভাবতঃ তৎসম্পবন্ধেই বহবিধ গণনা করিলাম।” বীরেন্দ্ৰসিংহের মািখ বিশস্ত্ৰক হইল ; আগ্রহ সহকারে পরমহংসকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গণনায় কি দেখিলেন ?” পরমহংস কহিলেন, “দেখিলাম যে, মোগল সেনাপতি হইতে তিলোত্তমার মহৎ অমঙ্গল।” বীরেন্দ্ৰসিংহের মািখ কৃষ্ণবর্ণ হইল। অভিরাম স্বামী কহিতে লাগিলেন, “মোগলেরা বিপক্ষ হইলেই তৎকর্তৃক তিলোত্তমার অমঙ্গল সম্পভবে ; সর্বপক্ষ হইলে সক্ষভাবে না, এজন্যই আমি তোমাকে মোগল পক্ষে প্রবত্তি লওয়াইতেছিলাম। এই কথা ব্যন্ত করিয়া তোমাকে মনঃপীড়া দিতে আমার ইচ্ছা ছিল না ; মনষ্যেযত্ন বিফল; বঝি ললাটলিপি। অবশ্য ঘটিবে, নাহিলে তুমি এত সিথরপ্রতিজ্ঞ হইবে কেন ?” বীরেন্দ্ৰসিংহ মৌন হইয়া থাকিলেন। অভিরাম স্বামী কহিলেন, “বীরেন্দ্ৰ, দবারে কতল খাঁর দত দন্ডায়মান; আমি তাহাকে দেখিয়াই তোমার নিকট আসিয়াছি, আমার নিষেধক্রমেই দৌবারিকেরা এ পয্যন্ত তাহাকে তোমার সম্মখে আসিতে দেয় নাই। এক্ষণে আমার বক্তব্য সমাপন হইয়াছে, দাঁতকে আহবান করিয়া উচিত প্রত্যুত্তর দাও।” বীরেন্দ্ৰসিংহ নিশবাসসহকারে মস্তকোত্তলন করিয়া কহিলেন, “গরদেব! যতদিন তিলোত্তমাকে না দেখিয়াছিলাম, ততদিন কন্যা বলিয়া তাহাকে সমরণও করিতাম না; এক্ষণে তিলোত্তমা ব্যতীত আর আমার সংসারে কেহই নাই; আপনার আজ্ঞা শিরোধাৰ্য্য করিলাম ; আদ্যাবধি ভূতপব্ব বিসঙ্গজনি দিলাম; মানসিংহের অনগামী হইব; দৌবারিক দাঁতকে আনয়ন করােক।” আজ্ঞামত দৌবারিক দাঁতকে আনয়ন করিল। দতে কতল খাঁর পত্র প্রদান করিল। পত্রের মৰ্ম্ম এই যে, বীরেন্দ্ৰসিংহ এক সহস্ৰ অৰ্শবারোহী সেনা আর পঞ্চ সহস্র সবর্ণমাদ্রা পাঠােনশিবিরে প্রেরণ করান, নচেৎ কতল খাঁ বিংশতি সহস্র সেনা গড় মান্দারণে প্রেরণ করবেন। W SR