পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ যেখানে শিলাবন্টিনিবন্ধন ঘোরতর বিপত্তি, সেখানে মবারক অবস্থিতি করিতেছিলেন। তিনি প্রথমে সৈন্যগণকে সশঙ্খিলের সহিত পাব্বিত্য পথ হইতে বহিস্কৃত করিবার যত্ন করিয়াছিলেন, কিন্তু যখন দেখিলেন, ক্ষদ্রতর রন্ধ্রুপথে রাজকুমারীর শিবিকা চলিয়া গেল, একজনমাত্র অশ্বারোহী তাহার সঙ্গে গেল, অমনি অগালের ন্যায় বহৎ শিলাখণ্ডড সে পথ বন্ধ করিল-তখন তাঁহার মনে সন্দেহ উপস্থিত হইল যে, এ ব্যাপার। আর কিছই নহে!—কোন দারাত্মা রাজকুমারীকে অপহরণ করিবার মানসে এই উদ্যম করিয়াছে। তখন তিনি ডাকিয়া নিকটস্থ সৈনিকদিগকে বলিলেন— “প্ৰাণ যায়, সেও স্বীকার! শত সওয়ার দোলার পিছৰ পিছ যাও। ঘোড়া ছাড়িয়া পাঁওদলে, এই পাথর টপকাইয়া যাও—চল, আমি যাইতেছি।” মবারক আগ্ৰে ঘোড়া হইতে লাফাইয়া পড়িয়া পাথরোধক শিলাখন্ডের উপর উঠিলেন । এবং তাহার উপর হইতে লাফাইয়া নীচে পড়িলেন। তাঁহার দন্ডটান্তের অন্যবিত্তীর্ণ হইয়া শত সওয়ার তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে সেই রন্ধ্রুপথে প্রবেশ করিল। রাজসিংহ পৰ্ব্বতশিখর হইতে এ সকল দেখিতে লাগিলেন। যতক্ষণ মোগলেরা ক্ষুদ্র পথে একে একে প্রবেশ করিতেছিল, ততক্ষণ কাহাকেও কিছর বালিলেন না। পরে তাহারা রন্ধ্রুপথিমধ্যে নিবন্ধ হইলে, পঞ্চাশৎ অশ্বারোহী রাজপত লইয়া বজের ন্যায় উদ্ধর হইতে তাহদের উপরে পড়িয়া, তাহদের নিহত করিতে লাগিলেন। সহসা উপর হইতে আক্ৰান্ত হইয়া মোগলেবা বিশওখলা হইয়া গেল। তাহদের মধ্যে অধিকাংশ এই ভয়ঙ্কর রণে প্রাণত্যাগ করিল। উপর হইতে ছটিয়া আসিয়া অশ্ব সহিত মোগল সওয়ারগণেব উপর পড়িল-—নীচে যাহারা ছিল, তাহারা চাপেই মরিল। পাঁচ সাত দশ জন মাত্র এড়াইল । মবারক তাহদের লইয়া ফিরিলেন। রাজপত্যেরা তাহদের পশ্চাদ্বত্তীর্ণ হইল না। মবারকের সঙ্গে মোগল সওপ্লারের বেশধারী মাণিক লালও বাহির হইয়া আসিল । আসিয়াই একজন মত সওয়ারের অশোেব আরোহণ করিয়া, সেই শঙ্খলাশান্য মোগলসেনার মধ্যে কোথায় লকাইল, কেহ তাহা দেখিতে পাইল না। যে ম্যুখে মোগলেরা সেই পাৰ্ব্বত্য পথে প্রবেশ করিযাছিল, মাণিকলাল সেই পথে নিগত হইল। যাহারা তাহাকে দেখিল, তাহারা ভাবিল, সে পলাইতেছে। মাণিক লাল গলি হইতে বাহির হইয়া, তীরবেগে ঘোড়া ছটাইয়া র.পনগরের গড়ের দিকে চলিল। মবারক প্রস্তবখন্ড পনেরঃন্নতি ঘন করিষা ফিরিয়া আসিয়া, আজ্ঞা দিলেন, “এই পাহাড়ে চড়িতে কািট নাই; সকলেই ঘোড়া লইয়া এই পাহাড়ের উপর উঠ। দস্য অলপসংখ্যক । তাহদের সমালে নিপাত করিব।” তখন পাঁচ শত মোগলসেনা, ‘দীন! দীন!" শব্দ কবিয়া অশ্ব সহিত বাম দিকের সেই পৰ্ববতশিখরে আবেহণ করিতে লাগিল। মবারক অধিনাযক। মোগলাদিগের সঙ্গে দইটা তোপ ছিল। একটা ঠেলিযা তুলিয়া পাহাড়ে উঠাইতে লাগিল। আব্ব একটা ছোট তোপ— সেটাকে মোগলেবা টানিয়া, শিকলে বাঁধিসা, হাতী লােগাইয়া, যে বহৎ শিলাখন্ডের দ্বারা পাববত্য রন্ধ্ৰু বন্ধ হইয়াছিল, তাহার উপর উঠাইয়া সন্থাপিত করিল। চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ ঃ জয়শীলা চঞ্চলকুমারী তখন “দীন! দীন / শব্দে পঞ্চশত মোগল আশাবারোহী কালান্তক যমের ন্যায় পৰ্ব্বতে আরোহণ করিল। পৰ্ব্ববত অনাচ, ইহা পর্বেই কথিত হইয়াছে।--শিখরদেশে উঠিতে তাহদের বড় কালবিলম্ব হইল না। কিন্তু পর্বতশিখরে উঠিয়া দেখিল যে, কেহ ত পৰ্ব্বতোপরি নাই। যে রন্ধ্রুপথিমধ্যে প্রবেশ করিষা তিনি নিজে পরাভূত হইয়া ফিরিযা আসিতেছিলেন, এখন মবারক বাঝিলেন যে, সমদায় দস্য—মবারকের বিবেচনায় তাহারা রাজপত দস্য ভিন্ন আর কিছই নহে--সেই রন্ধ্রুপথে আছে। তাহার দ্বিতীয় মাখ রোধ করিয়া, তাহাদিগের বিনাশ । সাধন করিবেন, মবারক এই রােপ মনে মনে স্থির করিলেন । হাসান আলি অপর মাখে কামান পাতিয়া বসিষা আছেন, এই ভাবিয়া, তিনি সেই রন্ধুের ধারে ধাবে সৈন্য লইয়া চলিলেন। ক্ৰমে পথ প্রশস্ত হইয়া আসিল ; তখন মবারক পাহাড়ের ধারে আসিয়া দেখিলেন—চল্লিশ জনের অনধিক রাজপতি, শিবিক সঙ্গে রধিরাপ্ত কলেবরে সেই পথে চলিতেছে। মবারক বঝিলেন যে, অবশ্য ইহারা নিগমপথ জানে; ইহাদের উপর দন্ডিট রাখিয়া ধীরে ধীরে চলিলে, রন্ধদবারে উপস্থিত হইব। তাহা হইলে যেরােপ পথে রাজপতেরা পৰ্ব্বত হইতে নামিয়াছিল, সেইরােপ অন্য পথ Wり8>