পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ আমার অভিপ্রেত নহে। মাণিকলাল প্রথম সোপােনাবলী আরোহণ করিয়া একবার কুণিশি। করিলেন। তার পর উঠিতে হইল। একপদ উঠিয়া আবার কুণিশি—আবার একপদ উঠিয়া আবার কুণিশি। এইরূপে তিনবার উঠিয়া তত্তে তাউস সন্নিধানে উপস্থিত হইলেন। মাণিকলাল অভিবাদন করিয়া রাজসিংহ প্রেরিত সামান্য উপহার বাদশাহের সম্মখে অপিত করিলেন। নজরের অনঘ্যতা দেখিয়া ঔরঙ্গজেব রন্ট হইলেন, কিন্তু মাখে। কিছ বলিলেন না। প্রেরিত দ্রব্যের মধ্যে দইখানি তরবারি ছিল; একখানি কোষে আব্বত, আর একখানি নিকোষ। ঔরঙগজেব নিন্ডেকাষ আসি গ্রহণ করিয়া আর সব উপহার পরিত্যাগ করলেন। মাণিকলাল রাজসিংহের পত্র দিলেন। পত্রাথ* অবগত হইয়া ঔরঙগজেব কোধে অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন। কিন্তু তিনি ক্লদ্ধ হইলে সচরাচর বাহিরে কোপ প্রকাশ করতেন না। তখন মাণিকলালকে বিশেষ সমাদরের সহিত জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তাঁহাকে উত্তম বাসস্থান দিবার জন্য বখশীকে আদেশ করিলেন। এবং আগামী কল্য মহারাণার পত্রের উত্তর দিবেন। বলিয়া মাণিকলালকে বিদায় করিলেন। তখনই দরবার বরখাস্ত হইল। দরবার হইতে উঠিয়া আসিয়াই ঔরঙগজেব মাণিকল্যালের বধের আজ্ঞা করিলেন। বন্ধের আজ্ঞা হইল, কিন্তু যাহারা মাণিকলালকে বধ করিবে, তাহারা মাণিকলালকে খাজিয়া পাইল না। যাহাদিগের প্রতি মাণিকলালের সমাদরের আদেশ হইয়াছিল, তাহারাও খাজিয়া পাইল না। দিল্লীর সব্বত্র খাজিল, কোথাও মাণিকলালকে পাওয়া গেল না। তাহার বধের আজ্ঞা প্রচার হইবার আগেই মাণিকলাল সরিয়া পড়িয়াছিল। বলা বাহাল্য যে, যখন মাণিকল্যালের জন্য এত খোঁজ তল্লাস হইতেছিল, তখন সে আপনার পাথরের দোকানে ছদ্মবেশে সওদাগরি করিতেছিল। আহাদীরা মাণিকলালকে না পাইয়া, তাঁহার শিবিরে যাহাকে যাহাকে পাইল, তাহাকে তাহাকে ধরিয়া কোতোয়ালের নিকট লইয়া গেল। তাহার মধ্যে নিৰ্ম্মলকুমারীকেও ধরিয়া লইয়া গেল। কোতোয়াল, অপর লোকদিগের কাছে কিছ সন্ধান পাইলেন না। ভয়প্রদর্শন ও মারপিটেও কিছই হইল না। তাহারা কোন সন্ধান জানে না, কি প্রকারে বলিবে ? কোতোয়াল শেষ নিৰ্ম্মমলকুমারীকে জিজ্ঞাসাবাদ আরম্ভ করিলেন—পরদােনশীন বলিয়া তাঁহাকে এতক্ষণ তফাৎ রাখা হইয়াছিল। কোতোয়াল এখন নিৰ্ম্মলকুমারীকে জিজ্ঞাসা করিলেন। সে উত্তর করিল, “রাণার এলাচিকে আমি চিনি না।” কোতোয়াল ! তাহার নাম মাণিকলাল সিংহ । নিৰ্ম্মমল । মাণিকলাল সিংহকে আমি চিনি না। কো। তুমি রাণার এলচির সঙ্গে উদয়পাের হইতে আস নাই ? নি। উদয়পর আমি কখন দেখিও নাই। কো। তবে তুমি কে ? নি। আমি জনাব যোধপরী বেগমের হিন্দ বাঁদী। কো। জনাব যোধপরী বেগমের বাঁদীরা মহালের বাহিরে আসে না। নি। আমিও কখন আসি নাই। এইবার হিন্দ এল.চি আসিয়াছে শনিয়া বেগম সাহেবা আমাকে তাহার তাম্পবতে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। কো। সে কি ? কেন ? নি। কিষণজীবীর চরণামতের জন্য। তাহা সকল রাজপত রাখিয়া থাকে। কো। তোমাকে ত একা দেখিতেছি । তুমি মহালের বাহিরেই বা আসিলে কি প্রকারে ? নি। ইহার বলে। এই বলিয়া নিৰ্ম্মলকুমারী যোধপরী বেগমের পাঞ্জা বস্ত্রমধ্য হইতে বাহির করিয়া দেখাইল। দেখিয়া কোতোয়াল তিন সেলাম করিল। নিম্পমালকে বলিল, “তুমি যাও। তোমাকে কেহ আর কিছ বলিবে না।” নিৰ্ম্মমল তখন বলিল, “কোতোয়াল সাহেব! আর একটি মেহেরবানি করিতে হইবে। আমি কখন মহালের বাহির হই নাই। আজি বড় ধর-পাকড় দেখিয়া আমার বড় ভয় হইয়াছে। আপনি যদি দয়া করিয়া একটা আহদী, কি পাইক সঙ্গে দেন, যে আমাকে মহাল পয্যন্ত পৌছাইয়া দিয়া আসে, তাহা হইলে বড় ভাল হয়।” V VSS