বঙিকম রচনাবলী ঔরঙগ। কেবল সেইটি এখন পাইতেছ না। তা ছাড়া আর জগতে তোমার প্রার্থনা করিবার, কি ভয় করিবার কিছ নাই ? নি। প্রার্থনার আছে বৈ কি ? কিন্তু দিল্লীর বাদশাহের রত্নাগারে সে রত্ন নাই। ঔরঙগ। এমন কি সামগ্রী ? নি। আমরা হিন্দ, আমরা জগতে কেবল ধৰ্ম্মমকেই ভয় করি, ধৰ্ম্মমই কামনা করি। দিল্লীর বাদশাহ স্লেচ্ছ, আর দিল্লীর বাদশাহ ঐশবৰ্য্যশালী। দিল্লীর বাদশাহের সাধ্য কি যে, আমার কাম্য বস্তু দিতে পারেন, কি লাইতে পারেন ? দিল্লীশবির নিম্মলকুমারীর সাহস ও চতুরতা দেখিয়া, ক্ৰোধ পরিত্যাগ করিয়া বিস্ময়বিভ্ৰাট হইয়াছিলেন, কিন্তু এই কটক্তিতে পানববাের ক্লদ্ধ হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, “‘বটো! বটে! ঐ কথাটা ভুলিয়া গিয়াছিলাম।” তখন তিনি একজন তাতারীকে আদেশ করিলেন, “যা! ববিচ্চি মহল হইতে কিছ: গোমাংস আনিয়া, দই তিন জনে ধরিয়া ইহার মাখে গজিয়া দে।” নিৰ্ম্মমল তাহাতেও টলিল না। বলিল, “জানি, আপনাদিগের সে বিদ্যা আছে। সে বিদ্যার জোরেই এই সোণার হিন্দ স্থান কাড়িয়া লইয়াছেন। জানি, গোেরর পাল সম্মখে রাখিয়া লড়াই করিয়া মসলমান হিন্দকে পরাস্ত করিয়াছে।--নাহিলে রাজপতের বাহবিলের কাছে মসলমানের বাহবিল, সমদ্রের কাছে গোৎপদ । কিন্তু আবার একটা কথা আপনাকে মনে করিয়া দিতে হইল। শানেন নাই কি যে, রাজপতের মেয়ে বিষ সঙ্গে না লইয়া এক পা চলে না ? অামার নিকটে এমন তীব্র বিষ আছে যে, আপনার ভৃত্যগণ গোমাংস লইয়া। এ ঘরে পা দেওয়ার পরেও যদি তাহা আমি মাখে দিই, তবে জীবন্তে আর আমার মাখে কেহ গোমাংস দিতে পরিবে না। জাঁহাপনা ! আপনার বড় ভাই দারা শেকোকে বধ করিয়া তাহার দইটা কবিলা কাড়িয়া আনিতে গিয়াছিলেন —পারিয়াছিলেন কি ?—অধম খিণ্টিয়ানীটা আসিয়াছিল জানি, রাজপন্তানী দিল্লীর বাদশাহের মখে সাত পয়জার মারিয়া সবগে চলিয়া যায় নাই কি ? আমিও এখনই তোমার মখে সাত পায়জার মারিয়া সবগে চলিয়া যাইব ।” বাদশাহ বাক্যশান্য। যিনি পথিবীপতি বলিয়া খ্যাত, পথিবীময় যাঁহার গৌরব ঘোষিত, যিনি সমস্ত ভারতবষের ত্রাস, তিনি আজ এই অনাথা, নিঃসহায় অবলার নিকট অপমানিত—— পরাস্ত। ঔরঙ্গজেব পরাজয় স্বীকার করিলেন। মনে মনে বলিলেন, “এ অমল্য রত্ন, ইহাকে, নম্ৰাট করা হইবে না। আমি ইহাকে বশীভূত করিব।” প্রকাশ্যে অতি মধরস্বরে বলিলেন, “তোমার নাম কি, পিয়ারী ?” নিৰ্ম্মমলকুমারী হাসিয়া বলিল, “ও কি জাঁহাপনা! আরও রাজপত— হষাতে সাধ আছে না কি ? তা সে সাধও পরিত্যাগ করিতে হইতেছে। আমি বিবাহিতা, আমার হিন্দ স্বামী জীবিত আছেন।” ঔ । সে কথা এখন থােক। এখন তুমি কিছ দিন আমার এই রঙমহল মধ্যে বাস করা। এ হকুম বোধ করি তুমি অমান্য করিবে না ? নি। কেন আমাকে আটক করিতেছেন ? ঔ 1 । তুমি এখন দেশে গেলে, আমার বিস্তর নিন্দা করিবে। যাহাতে তুমি আমার প্রশংসা করিতে পাের, এক্ষণে তোমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করিব। পরে তোমাকে ছাড়িয়া দিব। নি। যদি আপনি না ছাড়েন, তবে আমার যাইবার সাধ্য নাই। কিন্তু আপনি কয়েকটি কথা প্রতিশ্রত হইলেই আমি দিন কতক থাকিতে পারি। ঔ । কি কি কথা ? নি। হিন্দরে অন্নজল ভিন্ন আমি সপশ করিব না। ঔ । তাহা স্বীকার করিলাম। নি। কোন মসলমান আমাকে সপশ করিবে না। ঔ । তাহাও সন্বীকার করিলাম। নি। আমি কোন রাজপতি বেগমের নিকটে থাকিব । ঔ। তাহাও হইবে। আমি তোমাকে যোধপরী বেগমের নিকট রাখিয়া দিব। নিম্পমালকুমারীর জন্য বাদশাহ সেইরােপ বন্দোবস্ত করিলেন। V4 C 8
পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৭৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।