পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ ষািঠ পরিচ্ছেদ ঃ পানশাচ সমিধসংগ্রহের জন্য পরদিন ঔরঙ্গজেব, জেব-উন্নিসা ও নিৰ্ম্মমলকুমারীকে সঙ্গে লইয়া রঙমহল মধ্যে তদারক করিলেন, কে ইহাকে অন্তঃপার-মধ্যে আসিতে দিয়াছে। অন্তঃপরবাসী সমস্ত খোজা, ত৷৷৩৷৷ ” বাঁদীদিগকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন । যাহারা নিশ্চমলকে আসিতে দিয়াছিল, তাহারা তাহাকে চিনিল, কিন্তু একটা গহির্ভূত কাজ হইয়াছে বঝিয়া কেহই অপরাধ স্বীকার করিল না। ঔরঙ্গজেব বা জেব-উন্নিসা কোন সন্ধানই পাইলেন না। তখন ঔরঙ্গজেব ও জেব-উন্নিসা অপর পৌরবগাঁকে এইরনুপ আদেশ করিলেন যে, “ইহাকে আসিতে দেওয়ায় তত ক্ষতি হয় নাই, কিন্তু ইহাকে কেহ আমাদের হকুম ব্যতীত বাহির হইতে দিও না। তবে ইহাকে কেহ কোন প্রকার পীড়ন বা অপমান করিও না। বেগমদিগের মত ইহাকে মান্য করিবে। এ যোধপরী বেগমের হিন্দ, বদিীদিগের পাক ও জল খাইবে, মসলমান ইহাকে ছাইবে না।” তখন নিৰ্ম্মলকুমারীকে সকলে সেলাম করিল। জেব-উন্নিসা তাঁহাকে আদর করিয়া ডাকিয়া লইয়া আপন মন্দিরে বসাইলেন এবং নানাবিধ আলাপ করিলেন। নিম্পমালের কাছে ভিতরের কথা কিছ পাইলেন না। সেই দিন অপরাহ্রে একজন তাতারী প্ৰহারিণী আসিয়া যোধপরী বেগমকে সংবাদ দিল যে, একজন সওদাগর পাথরের জিনিস লইয়া দগমধ্যে বেচিতে আসিয়াছে। কতকগলো। সে মহাল মধ্যে পাঠাইয়া দিয়াছে। জিনিসগলা ভাল নহে!—কোন বেগমই তাহা পসন্দা করিলেন না। আপনি কিছ: লাইবেন কি ? মাণিকলাল বাছিয়া বাছিয়া মন্দ জিনিস আনিয়াছিল—যে-সে বেগম যেন পসন্দা করিয়া কিনিয়া না রাখে। যখন প্ৰহারিণী এই কথা বলিল, তখন নিৰ্ম্মলকুমারী যোধপরীর নিকটে ছিল। সে যোধপরীকে একটা চক্ষর ইঙ্গিত করিয়া বলিল, “আমি নিব।” পািব্বরাত্ৰিতে নিম্মলকুমারীর সঙ্গে যেরপে বাদশাহের সাক্ষাৎ ও কথোপকথন হইয়াছিল, নিৰ্ম্মমল সকলই তাহা যোধপরী বেগমের কাছে বলিয়াছিল। যোধপরী শনিয়া নিৰ্ম্মমলের অনেক প্রশংসা এবং নিম্পমালকে অনেক আশীৰ্ব্ববাদ করিয়াছিলেন। তাঁহাকে বহি যত্ন করিতেছিলেন। এক্ষণে নিৰ্ম্মমলের অভিপ্রায় বঝিয়া পাথরের দ্রব্য আনাইতে হকুম দিলেন। প্রহরিণী বাহিরে গেলে নিৰ্ম্মল সংক্ষেপে যোধপরীকে মাণিকল্যালের সঙেকতকৌশল বাঝাইয়া দিল। যোধপরবী তখন বলিলেন, “ তবে তুমি ততক্ষণ তোমার স্বামীকে একখানা পত্ৰ লেখা। আমি পাথরের জিনিস পসন্দা করি। এই সংযোগে তাঁহাকে তোমার সংবাদ দিতে হইবে।” উপযক্ত সময়ে সেই প্রস্তরনিশ্চিমত দ্রব্যগলি আসিয়া উপস্থিত হইল। নিম্পমাল দেখিল যে, সকল দ্রব্যেই মাণিকল্যালের চিহ্ন আছে। দেখিয়া নিৰ্ম্মমল পত্র লিখিতে বসিলা।। যতক্ষণ না নিম্পমালের পত্র লেখা হইল, ততক্ষণ যোধপরেী পসন্দা করিতে লাগিলেন। দ্রব্যজাতের মধ্যে প্রস্তরনিক্ষমত মাল্যবান রত্নরাজির কার্যকাৰ্য্যবিশিস্ট একটা কোঁটা ছিল। তাহাতে জড়াইয়া চাবি-তালা বন্ধ করিবার জন্য একটা সবণ নিৰ্ম্মিত শওখল ছিল। নিৰ্ম্মমলের পত্র লেখা হইলে যোধপরী অন্যের অলক্ষ্যে সেই পত্র ঐ কোটার মধ্যে রাখিয়া চাবি বন্ধ করিলেন। যোধপরী সকল দ্রব্য পসন্দা করিয়া রাখিলেন, কেবল সেই কৌটাটি না পসন্দা করিয়া ফেরৎ দিলেন। ফেরৎ দিবার সময়ে ইচ্ছাপবিবািক চাবিটা ফেরৎ দিতে ভুলিয়া গেলেন। ছদ্মবেশী সওদাগর মাণিকলাল, কেবল কৌটা। ফেরৎ আসিল, তাহার চাবি আসিল না, দেখিয়া প্রত্যাশাপন্ন হইল। সে টাকা-কড়ি সব বঝিয়া লইয়া, কৌটা লইয়া দোকানো গেল। সেখানে নিজনে কোঁটার ভিতরে নিম্মলকুমারীর পত্ৰ পাইল । পত্রে যাহা লিখিত হইয়াছিল, তাহা সবিস্তারে জানিবার, পাঠকের প্রয়োজন নাই। স্থল কথা যাহা, তাহা পাঠক বঝিতে পারিতেছেন। আনষঙ্গিক কথা পরে বঝিতে পরিবেন। পত্র পাইয়া, নিৰ্ম্মল সম্বন্ধে নিশিচন্ত হইয়া মাণিকলাল সর্বদেশীযাত্রার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। কিন্তু সেই দিনেই দোকান-পাট উঠাইলে পাছে কেহ সন্দেহ করে, এজন্য দিনকতক বিলম্ব করা সিথর করিলেন। V CR G