পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী কাহারও মস্তকচ্ছেদ হইত; কেহ শহলে যাইত; কেহ হস্তিপদতলে নিক্ষিপত হইত; কেহ বা বিষধর সাপের দংশনে প্রাণত্যাগ করিত। যাহাকে গোপনে বধ করিতে হইবে, তাহার প্রতি বিষপ্রয়োগ হইত। মবারক সহস্যবদনে বখশীর কাছে উপস্থিত হইয়া এবং দই পাশে দাইটি বিষধর সপোর পিঞ্জর দেখিয়া পৰ্ব্বব্যাবৎ হাসিয়া বলিল, “কি ? আমায় যাইতে হইবে ?” বখশী বিষগ্নভাবে বলিল, “বাদশাহের হকুম!” মবারক জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন এ হকুম হইল, কিছর প্রকাশ পাইয়াছে কি ?” বখশী । না—আপনি কিছ জানেন না ? মবারিক। এক রকম--আন্দাজী আন্দাজী । বিলম্পেব কাজ কি ? বখশী। কিছ না। তখন মবারক জােতা খালিয়া একটা পিঞ্জরের উপর পা দিলেন। সাপ গজজাইয়া আসিয়া পিজিরার ছিদ্রমধ্য হইতে দংশন করিল। দংশনজবালায় মবারক একট, মািখ বিকৃত করিলেন। বখশীকে বলিলেন, “সাহেব ! যদি কেহ জিজ্ঞাসা করে যে, মবারক কেন মরিল, তখন মেহেরবানি করিয়া বলবেন, শাহজাদী আলম জেব-উন্নিসা বেগম সাহেবার ইচ্ছা।” বখশী সািভয়ে, অতি কাতরভাবে বলিলেন, “চুপ! চুপ! এটাও।” যদি একটা সাপের বিষ না থাকে, এজন্য দইটা সপোের দ্বারা হন্য ব্যক্তিকে দংশন করান রীতি ছিল। মবারক তাহা জানিতেন। তিনি দিবতীয় পিঞ্জরের উপর পা রাখিলেন, দ্বিতীয় মহাসাপ ও তাঁহাকে দংশন করিয়া তীক্ষা বিষ ঢালিয়া দিল । মবারক তখন বিষের জবালায় জডজরীভূত ও নীলকান্তি হইয়া, ভূমে জানা পাতিয়া বসিয়া যক্ত করে ডাকিতে লাগিল, “আল্লা আকবর ! যদি কখনও তোমার দয়া পাইবার যোগ্য কাৰ্য্য করিয়া থাকি, তবে এই সময়ে দয়া কর।” এইরনুপে জগদীশবরের ধ্যান করিতে করিতে, তীব্র সাপবিষে জৰ্তজািরবীভূত হইয়া, মোগলবীর মবারক আলি প্রাণত্যাগ করিল। অভটম পরিচ্ছেদ ঃ সব সমান রঙমহলে সকল সংবাদই আসে--- সকল সংবাদই জেব-উন্নিসা নিয়ে থাকেন—তিনি না এবে বাদশাহ। মবারকের বন্ধসংবাদও আসিয়া পৌছিল। জেব-উন্নিসা প্রত্যাশা করিয়াছিলেন যে, তিনি এই সংবাদে অত্যন্ত সখী হইবেন। সহসা দেখিলেন যে, ঠিক বিপরীত ঘটিল। সংবাদ আসিবামাত্র সহসা তাঁহার চক্ষ জলে ভরিয়া গোল —এ শকােনা মাটিতে কখনও জল উঠে নাই। দেখিলেন, কেবল তাই নহে, গণড বাহিয়া ধারায় ধারায় সে জল গড়াইতে লাগিল। শেষ দেখিলেন, চীৎকার করিয়া কাঁদিতে ইচ্ছা করিতেছে। জেব-উন্নিসা দবার রদ্ধ করিয়া হস্তিদন্তনিমিত রত্নখচিত পালতেক শয়ন করিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। কৈ শাহজাদী ? হস্তিদন্তনিমিত রত্নদণ৬ভূষিত পালঙ্কে শাইলেও তা চক্ষর জল থামে না! তুমি যদি বাহিরে গিয়া দিল্লীর সহরতলীর ভগন কূটনীরমধ্যে প্রবেশ করিতে, তাহা হইলে দেখিতে পাইতে, কত লোক ছোড়া কাঁথায় শইষা কত হাসিতেছে। তোমার মত কান্না হেই কাঁদিতেছে না। জে ব্য-উন্নিসার প্রথমে কিছ, বোধ হইল যে, তাঁহার আপনার সখের হানি তিনি আপনিই করিয়াছেন। ক্ৰমশঃ বোধ হইল, সব সমান নহে-বাদশাহজাদীরাও ভালবাসে ; জানিয়া হউক, না জানিয়া হউক, নারীদেহ ধারণ করিলেই ঐ পাপকে হৃদয়ে আশ্রয় দিতে হয় ।” জেব-উন্নিসা আপনা। আপনি জিজ্ঞাসা করিল, “আমি তাকে এত ভালবাসিতাম, সে কথা এত দিন জানিতে পারি নাই কেন ?” কেহ তাহাকে বলিয়া দিল না যে, ঐশবষ্যমদে তুমি অন্ধ হইয়াছিলে, রাপের গব্বে তুমি অন্ধ হইয়াছিলে, ইন্দ্রিয়ের দাসী হইয়া তুমি ভালবাসাকে চিনিতে পার নাই। তোমার উপযন্ত দন্ড হইয়াছে—কেহ যেন তোমকে দয়া না করে। VC f°