পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कsा ब्रा5नाबब्नी উদাসীন ব্রাহ্মণ বৈদ্যাদির বেশে নানা স্থানে ভ্ৰমণ করিয়া, পাঠান-সেনার গতিবিধির সন্ধান আনিয়া দিত। জগৎ সিংহ সংবাদ পাইবামাত্র অতি সাবধানে। অথচ দ্রুতগতি এমন স্থানে গিয়া সৈন্য সংস্থাপন করিতেন যে, যেন আগন্তুক পাঠান-সেনার উপরে সকৌশলে এবং অপবাদজ্জন্ট হইয়া আক্ৰমণ করিতে পারেন। যদি পাঠান-সেনা অধিকসংখ্যক হইত, তবে জগৎ সিংহ তাহাদিগকে আক্ৰমণ করার কোন সািপম্পট উদ্যম করিতেন-' : ; কেন না, তিনি জানিতেন, তাঁহার বাৰ্ত্তমান অবস্থায় এক যন্ধে পরাজয় হইলে সকল নন্ট হইবে। তখন কেবল পাঠান-সেনা চলিয়া গেলে সাবধানে তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গিয়া তাহাদিগের আহারীয় দ্রব্য, অশব কামান ইত্যাদি অপহরণ করিয়া লইয়া চলিয়া আসিতেন। আর যদি পাঠান-সেনা প্রবল না হইয়া সবলপসংখ্যক হইত, তরে যতক্ষণে সেনা নিজ মনোমত স্থান পৰ্য্যন্ত না আসিত, সে পৰ্যন্ত স্থির হইয়া গোপনীয় স্থানে থাকিতেন ; পরে সময় বঝিয়া, ক্ষধিত ব্যান্ত্রের ন্যায়। চীৎকার শব্দে ধাবমান হইয়া হতভাগ্য পাঠানদিগকে খন্ড খণড করিয়া ফেলিতেন। সে অবস্থায় পাঠানেরা শত্রর নিকটসিথতি অবগত থাকিত না; সতরাং রণ জন্য প্রস্তুত থাকিত না। অকস্মাৎ শত্র প্রবাহমাখে পতিত হইয়া প্রায় বিনা যন্ধে প্রাণ হারাইত। এইরপে বহতর পাঠান-সৈন্য নিপাত হইল। পাঠানেরা অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হইল, এবং সম্মখসংগ্রামে জগৎ সিংহের সৈন্য বিনষ্ট করিবার জন্য বিশেষ সযত্ন হইল। কিন্তু জগৎসিংহের সৈন্য কোথায় থাকে, কোন সন্ধান পাওয়া যায় না; কেবল যমদীতের ন্যায় পাঠান-সেনার মাতুত্যুকালে একবার দেখা দিয়া মাতৃকাৰ্য্য সম্পাদনা করিয়া অন্তধান করে। জগৎসিং কৌশল্যময়; তিনি পঞ সহস্ৰ সেনা সৰ্ব্ববােদা একত্র রাখিতেন না, কোথায় সহস্ৰ, কোথায় পণ8 শত, কোথায় দিবশত, কোথায় দিবসহস্র এইরনুপে ভাগে ভাগে, যখন যথায় যেরপে শত্ৰ সন্ধান পাইতেন, তখন সেইরাপ পাঠাইতেন ; কাৰ্য্য সম্পাদন হইলে আর তথায় রাখিতেন না। কখন কোন খানে রাজপত আছে, কোন খানে নাই, পাঠানেরা কিছই স্থির করিতে পারিত না। কতল খাঁর নিকট প্রত্যহই সেনানাশের সংবাদ আসিত। প্রাতে, মধ্যাহ্নে, সায়াহ্নে, সকল সময়েই অমঙগল সংবাদ আসিত । ফলে যে কায্যেই হউক না, পাঠান-সেনার অলপ সংখ্যায় দািগ হইতে নিঅক্সান্ত হওয়া দঃসাধ্য হইল। লািঠাপাট একেবারে বন্ধ হইল; সেনাসকল দগমধ্যে আশ্রয় লইল; অধিকন্তু আহার আহরণ করা সকঠিন হইয়া উঠিল। শত্রপীড়িত প্রদেশ এইরােপ সশাসিত হওয়ার সংবাদ পাইয়া মহারাজ মানসিংহ পত্রিকে এই পত্র লিখিলেন, “কুলতিলক ! তোমা হইতে রােজ্যাধিকার পাঠােনশন্য হইবে জানিলাম ; অতএব তোমার সাহায্যার্থে আর দশ সহস্র সেনা পাঠাইলাম।” যদুবরাজ প্রত্যুত্তরে লিখিলেন,- “মহারাজের যেরপে অভিপ্ৰায় ; আর সেনা আইসে ভাল ; নচেৎ ও শ্ৰীচরণাশীব্ববাদে এ দাস পঞ সহস্ৰে ক্ষত্ৰকুলোচিত প্ৰতিজ্ঞা পালন করিবেক।” কুমার বীরমদে মত্ত হইয়া অবাধে রণজয় করিতে লাগিলেন। শৈলেশবের ! তোমার মন্দিরমধ্যে যে সন্দরীর সরল দণ্টিতে এই যোদ্ধা পরাভূত হইয়াছিলেন, সে সন্দরীকে সেনা-কোলাহল মধ্যে কি তাঁহার একবারও মনে পড়ে নাই ? যদি না পড়িয়া থাকে, তবে জগৎ সিংহ তোমারই ন্যায় পাষাণ । দশম পরিচ্ছেদ ঃ মন্ত্রণার পর উদ্যোগ যে দিবস অভিরাম স্বামী বিমলার প্রতি ব্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে গহবহিস্কৃত করিয়া দেন, তাহার পরদিন প্রদোষকালে বিমলা নিজ কক্ষে বসিয়া বেশভূষা করিতেছিলেন। পঞ্চত্রিংশৎ বাষীয়ার বেশভূষা ? কেনই বা না করিবে ? বয়সে কি যৌবন যায় ? যৌবন যায় রাপে আর মনে ; যার রােপ নাই, সে বিংশতি বয়সেও বাদ্ধা ; যার রােপ আছে, সে সকল বয়সেই যাবতী। যার মনে রস নাই, সে চিরকাল প্রবীণ; যার রস আছে, সে চিরকাল নবীন। বিমলার আজও রপে শরীর ঢলঢল করিতেছে, রসে মন টলমল করিতেছে। বয়সে আরও রসের পরিপাক ; পাঠক মহাশয়ের যদি কিঞ্চিৎ বয়স হইয়া থাকে, তবে এ কথা অবশ্য সম্বীকার করিবেন। কে বিমলার সে তাম্বলরাগরক্ত ওঠাধর দেখিয়া বলিবে, এ যাবতী নয় ? তাহার কাজলনিবিড় প্রশস্ত লোচনের চকিত কটাক্ষ দেখিয়া কে বলিবে যে, এ চতুৰ্ব্বিংশতির পরপারে