পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ মোগলের সব্বনাশ ঘটিবার উপক্রম হইয়া আছে। রন্ধুমখ বন্ধ। রাত্রিতে রাজপত্যেরা সংখ্যাতীত মহামহীরােহ সকল ছেদন করিয়া পৰ্ব্বতশিখর হইতে রন্ধ্রুমখে ফেলিয়া দিয়াছে— পৰ্ব্ববতাকার সপল্লব ছিন্ন বাক্ষরাশি রন্ধুমখ একেবারে বন্ধ করিয়াছে; হস্তী অৰ্শব পদাতিক দরে থােক, শগােল-কুক্কারেরও যাতায়াতের পথ নাই। মোগল-সেনামধ্যে ঘোরতর আত্তনাদ উঠিল—স্ত্ৰীগণের রোদনধবনি শনিয়া, ঔরঙ্গজেবের পাষাণ নিশ্চিমত হৃদয়ও কম্পিত হইল। সৈন্যের পথপরিস্কারক সম্প্রদায় অগ্ৰে থাকে, কিন্তু এই সৈন্যকে বিপরীত গতিতে রন্ধে প্রবেশ করিতে হইয়াছিল বলিয়া তাহারা পশ্চাতে ছিল। ঔরঙগজেব প্রথমতঃ তাহাদিগকে সম্মখে আনিবার জন্য আজ্ঞা প্রচার করিলেন। কিন্তু তাহদের আসা কালবিলম্বের কথা । তাহাদের অপেক্ষা করিতে গেলে, হয় ত সে দিনও উপবাসে কাটিবে। অতএব ঔরঙগজেব হকুম দিলেন যে, পদাতিক সৈন্য, এবং অন্য যে পারে, বহা লোক একত্র হইয়া, গাছের প্রাচীরের উপর চড়িয়া, গাছ সকল ঠেলিয়া পাশে ফেলিয়া দেয়, এবং এই পরিশ্রমের সাহায্য জন্য হস্তী সকলকে নিযক্ত করিলেন। অতএব সহস্ৰ সহস্র পদাতিক এবং শত শত হস্তী ব্যক্ষপ্রাকার ভগন করিতে ছটিল। কিন্তু যখন এ সকল বােক্ষপ্রাকারমলে সমবেত হইল, তখন আমনই গিরিশিখর হইতে, যেমন ফালগানের বাত্যায় শিলাবটি হয়, তেমনই বহৎ প্রস্তরখন্ডের অবিশ্রান্ত ধারা পড়িতে লাগিল। পদাতিক সকলের মধ্যে কাহারও হসন্ত, কাহারও পদ, কাহারও মস্তক, কাহারও কক্ষ, কাহারও বক্ষ চাণীকৃত হইল—-কাহারও বা সমস্ত শরীর কন্দমপিন্ডবৎ হইয়া গেল। হস্তী সকলের মধ্যে কাহারও কুম্ভ, কাহারও দন্ত, কাহারও মেরাদন্ড, কাহারও পঞ্জীর ভগন হইয়া গেল; হস্তী সকল বিকট চীৎকার করিতে করিতে, পদাতিক সৈন্য পদতলে বিদলিত করিতে করিতে পলায়ন করিল, তদন্দ্বারা ঔরঙগজেবের সমস্ত সেনা বিত্রসন্ত ও বিধবািসত হইয়া উঠিল। সকলে উদ্ধর্বদন্টি করিয়া সভয়ে দেখিল, পৰ্ব্বতের শিরোদেশে সহস্ৰ সহস্ৰ রাজপত পদাতিক পিপীলিকার মত শ্রেণীবদ্ধ হইয়া আছে। যাহারা প্রস্তরখন্ডের আঘাতে আহত বা নিহত না হইল, রাজপতিগণের বন্দকের গলিতে তাহারা মরিল। ঔরঙ্গজেবের সৈনিকেরা বােক্ষপ্রাকারমলে ক্ষণমাত্র তিক্ৰিঠতে পারিল না। শনিয়া ঔরঙ্গজেব সৈন্যাধ্যক্ষগণকে তিরস্কৃত করিয়া পানববার বক্ষপ্রাচীরভঙেগর উদ্যম করিতে আদেশ করিলেন। তখন “দীন দীন” শব্দ করিয়া মোগল সেনা আবার ছটিল— আবার রাজপতিসেনাকৃত গলির বাল্টি এবং শিলাব, ভিটতে বাত্যা সমীপে ইক্ষক্ষেত্রের ইক্ষর মত ভূমিশায়ী হইল। এইরুপ পািনঃ পািনঃ উদ্যম করিয়া মোগল সেনা দাগ প্রাকার ভগন করিতে পারিল না। তখন ঔরঙ্গজেব হতাশ হইয়া, সেই বহতী সেনাকে রন্ধ্রুপথে ফিরিতে আদেশ করিলেন। রন্ধের যে মাখে সেনা প্রবেশ করিয়াছিল, সেই মাখে বাহির হইতে হইবে। সমস্ত সেনা ক্ষৎপিপাসায় ও পরিশ্রমে অবসন্ন, ঔরঙ্গজেবও তাঁহার জন্মে। এই প্রথম ক্ষৎপিপাসায় অধীর; বেগমরাও তাই। কিন্তু আর উপায়ান্তর নাই—পব্বতের সানদেশ আরোহণ করা যায় না; কেন না, পাহাড় সোজা উঠিয়াছে। কাজেই ফিরিতে হইল। ফিরিয়া আসিয়া অপরাহে, যে মাখে ঔরঙ্গজেব সসৈন্য রন্ধ্রুমধ্যে প্রবেশ করিয়াছিলেন, পানশাচ রন্ধের সেই মাখে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন, সেখানেও প্রত্যক্ষমাত্তি মাতৃ, তাঁহাকে সসৈন্য গ্রাস করিবার জন্য দাঁড়াইয়া আছে। রন্ধের সে মািখও, সেইরােপ অলঙঘ্য পৰ্ব্বব্যািতপ্ৰমাণ বােক্ষপ্রাকারে বন্ধ; নিগমের উপায় নাই। পািকবতোপরি রাজপতিসেনা পাকবাবৎ শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইয়া আছে। কিন্তু নিগতি না হইলে তা নিশ্চিত সসৈন্য মাতৃত্যু ৷ অতএব সমস্ত মোগল সেনাপতিকে ডাকিয়া ঔরঙ্গজেব সস্তুতি মিনতি, উৎসাহ বাক্য এবং ভয়প্রদর্শনের দ্বারা পথ মক্ত করিবার জন্য প্রাণ পৰ্য্যন্ত পতন করিতে স্বীকৃত করাইলেন। সেনাপতিগণ সেনা লইয়া পানশাচ বক্ষপ্রাকার আক্ৰমণ করিলেন। এবার একটি সংবিধাও ছিল—পথপরিস্কারক সেনাও উপস্থিত ছিল। মোগলেরা মরণ তৃণজ্ঞান করিয়া বাক্ষরাজি ছিন্ন ও আকৃষ্ট করিতে লাগিল। কিন্তু সে ক্ষণমাত্র। পৰ্ব্ববতশিখর হইতে যে লৌহ ও পাষাণ বন্টি হইতেছিল—ভাদ্রের বর্ষায় যেমন ধান্যক্ষেত্র ডুবিয়া যায়, মোগল সেনা তাহাতে তেমনই ডুবিয়া পেল। Ն Հ) Ծ