পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী আজ রাত্রে কোন সর্বপন দেখিবেন। যদি স্বপন দেখেন, তবে আমাকে কাল তাহা বলিবেন, ইহা আপনার নিকট প্ৰাথ না । শনিয়া চিন্তিতভাবে জেব-উন্নিসা চঞ্চলকুমারীর নিকট বিদায় গ্রহণ করিলেন। নিম্পমালকুমারীর যত্নে তাঁহার আহার, শয্যা ও শয্যার পরিপাট্য যেমন দিল্লীর রঙমহালে ঘটিত, তেমনই ঘটিল। তিনি শয়ন করিলেন, কিন্তু নিদ্রা যাইলেন না। চঞ্চলকুমারীর আজ্ঞামত দবার খালিয়া রাখিয়া একাই শয়ন করিলেন; কেন না, অবাধ্য হইলে যদি চঞ্চলকুমারী উদিপরেীর দশার মত তাঁহারও কোন দন্দশা ঘটান, সে ভয়ও ছিল। কিন্তু একা সমস্ত রাত্ৰি দাবার খালিয়া রাখাতেও অত্যন্ত শঙ্কা উপস্থিত হইল। মনে ভাবিলেন যে, ইহাই সম্ভব যে, গোপনে আমার উপর কোন অত্যাচার হইবে, এই জন্য এমন বন্দোবস্ত হইয়াছে। অতএব স্থির করিলেন, নিদ্রা যাইবেন না সতক থাকিবেন। কিন্তু দিবসে অনেক কাল্ট গিয়াছিল, এজন্য নিদ্রা যাইব না, জেব-উন্নিসা। এরপ প্ৰতিজ্ঞা করিলেও, তন্দ্ৰা আসিয়া মধ্যে মধ্যে তাঁহাকে অধিকার করিতে লাগিল। যে নিদ্রা যাইব না। প্রতিজ্ঞা করে, তন্দ্ৰা আসিলেও মধ্যে মধ্যে নিদ্রা ভঙ্গ হয়; তন্দ্রাভিভূত হইলেও একটা বোধ থাকে যে, আমার ঘনমান হইবে না। জেব-উন্নিসা মধ্যে মধ্যে এই রােপ তন্দ্রাভিভূত হইতেছিলেন। কিন্তু মধ্যে মধ্যে চমকে চমকে ঘািম ভাঙিগতেছিল। ঘাম ভাঙিগলেই আপনার অবস্থা মনে পড়িতেছিল। কোথায় দিল্লীর বাদশাহজাদী, কোথায় উদয়পরের বন্দিনী! কোথায় মোগল বাদশাহীর রঙগভূমির প্রাধানা অভিনেত্রী, মোগল বাদশাহীর আকাশের পণচন্দ্র, তন্তে তাউসের সৰ্ব্বেব্যাক্তজবল রত্ন, কাবাল হইতে বিজয়পাের গোলকুণডা যাঁহার বাহবিলে শাসিত, তাঁহার দক্ষিণ বাহ-আর কোথায় আজ গিরিগহানিহিত উদয়পরের কোটরে মষিকবৎ পিঞ্জরাবন্ধা, রপনগরের ভূইঞার মেয়ের বন্দিনী, হিন্দরে ঘরে অস্পশীয়া শঙ্করী, হিন্দপরিচারিকামন্ডলীর চরণকলঙককারী কীট ! মরণ কি ইহার অপেক্ষা ভাল নহে? ভাল বৈ কি ! যে মরণ তিনি প্ৰাণাধিক প্রিয় মবারককে দিয়াছেন, সে ভাল না ত কি ? যা মবারককে দিয়াছেন, তাহা অমল্য —নিজে কি তিনি সেই মারণের যোগ্য ? হায় মবারক! মবারক! মবারক! তোমার অমোঘ বীরত্ব কি সামান্য ভুজঙ্গমগরলকে জয় করিতে পারিল না ? সে অনিন্দনীয় মনোহর মাত্তিও কি সাপের বিষে নীল হইয়া গেল! এখন উদয়পরে কি এমন সাপ পাওয়া যায় না যে, এই কালভুজঙ্গীকে দংশন করে ? মানষিী কালভূজঙগী কি ফণিনী কালভূজঙ্গীর দংশনে মরিবে না! হয় মবারক! মবারক! মবারক! তুমি একবার সশরীর দেখা দিয়া, কালভুজঙগী দিয়া আমায় একবার দংশন করাও ; আমি মারি কি না দেখি । ঠিক এই কথা ভাবিয়া যেন মবারককে সশীরর দশন করিবার মানসেই জেব-উন্নিসা নয়ন উন্মীলিত করিলেন। দেখিলেন, সম্মখে সশরীর মবারক! জেব-উন্নিসা চীৎকার করিয়া, চক্ষ পাননি মীলিত করিয়া অজ্ঞান হইলেন। পঞ্চম পরিচ্ছেদ ঃ অগিনিতে ইন্ধনক্ষেপ—জবালা বাড়িল পরদিন যখন জেব-উন্নিসা শয্যাত্যাগ করিয়া উঠিলেন, তখন আর তাঁহাকে চেনা যায় না। একে ত পকেবই মাত্তি শীর্ণ বিবর্ণা, কাদম্পিবানীচ্ছায়াপ্রচ্ছন্নাবৎ হইয়াছিল—আজ আরও যেন কি হইয়াছে, বোধ হইতে লাগিল। সমস্ত দিনরাত্র আগমনের তাপের নিকট বসিয়া থাকিলে মানষে যেমন হয়, চিন্তারোহণ করিয়া, না পড়িয়া কেবল ধর্ম ও তাপে অদধ্য দগধা হইয়া চিতা হইতে নামিলে যেমন হয়, জেব-উন্নিসাকে আজ তেমনই দেখাইতেছিল। জেব-উন্নিসা মহত্তে মহত্তে পড়িতেছিল। বেশভূষা না করিলে নয় ; জেব-উন্নিসা অত্যন্ত অনিচ্ছায় বেশভূষা করিয়া, নিয়ম ও অন্যুরোধ রক্ষার্থ জলযোগ করিল। তার পর প্রথমে উদিপরেীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে গেল। দেখিল, উদিপরেী একা বসিয়া আছে-সম্মখে কুমারী মেরীর প্রতিমাত্তি এবং একটি যিশর ক্রস। অনেক দিন উদিপরেী যিশকে এবং তাঁর মাতাকে ভুলিয়া গিয়াছিলেন। আজ দাদিনে তাঁহাদের মনে পড়িয়াছিল। খিণ্টিয়ানির চিহ্নস্বরপ এই দাইটি সঙ্গে সঙ্গে ফিরিত; বান্টির দিনে দঃখীর পরাণ ছাতির মত আজ তাহা • বাহির হইয়াছিল। জেব-উন্নিসা দেখিলেন। WS W