পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী সেখানে গেল। যে শয্যার উপর চঞ্চলকুমারী বসিয়া, তাহার উপর গিয়া দাঁড়াইল। তার পর ছিন্ন লতার মত সহসা চঞ্চলকুমারীর চরণে পড়িয়া গিয়া, চঞ্চলকুমারীর পায়ের উপর মািখ রাখিয়া পদ্মের উপর পদ্মখানি উলটাইয়া দিয়া, অশ্রশিশিরে তাহা নিষিক্ত করিল। বলিল, “আমার প্রাণ রক্ষা করা! নাহিলে আজি মারিব।” চঞ্চলকুমারী তাহাকে ধরিয়া উঠাইয়া বসাইলেন--তিনিও হিন্দ মসলমান মনে রাখিলেন না। তিনি বলিলেন, “শাহজাদী ! আপনি যেমন কাল রাত্ৰিতে দবার খালিয়া শইয়াছিলেন, আজিও তাই করিবেন। নিশ্চিত আপনার মনস্কামনা সিদ্ধ হইবে।” এই বলিয়া তিনি জেব-উন্নিসাকে বিদায় দিলেন। এ দিকে উদিপরেী জেব-উন্নিসার প্রতীক্ষা করিতেছিল। কিন্তু জেব-উন্নিসা তাহার সহিত আর সাক্ষাৎ করিল না। নিরাশ হইয়া উদিপরেী স্বয়ং চ৭gলকুমারীর কাছে যাইবার অনািমতি চাহিলেন । সাক্ষাৎ হইলে উদিপরেী চঞ্চলকুমারীকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, কত আশরাফি পাইলে চঞ্চলকুমারী তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া দিতে পারেন। চঞ্চলকুমারী বলিলেন, “যদি বাদশাহ ভারতবর্ষের সকল মসজীদ-মায় দিল্লীর জম্মমা মসজীদ ভাঙ্গিয়া ফেলিতে পারেন, আর ময়রতক্ত এখানে বহিয়া দিয়া যাইতে পারেন, আর বৎসর বৎসর আমাদিগের রাজকর দিতে স্বীকৃত হয়েনি, তবে তোমাদের ছাড়িয়া দিতে পারি।” বটে। উদিপত্রী ক্ৰোধে অধীর হইল। বলিল, “গাঁওয়ার ভূইঞার ঘরে এত সপদ্ধা আশ্চৰ্য্য יין এই বলিয়া উদিপরেী উঠিয়া চলিয়া যায়। চঞ্চলকুমারী হাসিয়া বলিল, “বিনা হকুমে যাও কোথায় ? তুমি গাঁওয়ার ভুইয়ারাণীর বাঁদী, তাহা মনে নাই?” পরে একজন পরিচারিকাকে আদেশ করিলেন, “আমার এই নািতন বাঁদনীকে আর আর মহিষীদিগের নিকট লইয়া গিয়া দেখাইয়া আসিও । পরিচয় দিও, ইনি দারাসেকোর খরিদা বাঁদনী ।” উদিপরেী কাঁদিতে কাঁদিতে পরিচারিকার সঙ্গে চলিল। পরিচারিকা রাজসিংহের আর আর মহিষীদিগের নিকট, ঔরঙগজেবের প্ৰেয়সী মহিষীকে দেখাইয়া আনিল । নিম্পমাল আসিয়া চঞ্চলকে বলিল, “মহারাণি! আসিল কথাটা ভুলিতেছ? কি জন্যে উদিপরীকে ধরিয়া আনিয়াছি ? জ্যোতিষীর গণনা মনে নাই ?” চঞ্চলকুমারী হাসিয়া বলিল, “সে কথা ভুলি নাই। তবে সে দিন বেগম বড় কাতর হইয়া ভুল বলিয়া আর পীড়ন করিতে পারিলাম না। কিন্তু বেগম আপনা হইতেই আমার দয়াটকু শকাইয়া তুলিতেছে।” ষম্পঠি পরিচ্ছেদ ঃ শাহজাদী ভস্ম হইল। অন্ধ রাত্রি অতীত ; সকলে নিঃশব্দে নিদ্ৰিত। জেব-উন্নিসা বাদশাহ-দহিতা সখশয্যায় আশ্রলোচনে বিবাশা, কদাচিৎ দাবাগিনপরিবেভিটত ব্যাস্ত্রীর মত কোপতীব্রা। কিন্তু তখনই যেন বা শরবিন্ধা হরিণীর মত কাতরা। রাত্রিটা ভাল নহে; মধ্যে মধ্যে গভীর হঙকারের সহিত প্রবল বায় বহিতেছে, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বাতায়নপথলক্ষ্য গিরি শিখরমালায় প্রগাঢ় অন্ধকার—কেবল যথায় রাজপতের শিবির, তথায় বসন্তকাননে কুস মরাজি তুল্য, সমন্দ্রে ফেননিচয় তুল্য, এবং কামিনীকমনীয় দেহে রত্নরাশি তুল্য, এক স্থানে বহসংখ্যক দীপ জীবলিতেছে—আর সববন্ত্র নিঃশব্দ, প্রগাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন, কদাচিৎ সিপাহীর হস্তমত্ত বন্দকের প্রতিধবনিতে ভীষণ । কখনও বা মেঘের “অদ্রিগ্রহণগরগিজিজািত,”---কখন বা একমাত্ৰ কামানের, শঙ্গে শঙ্গে প্রতিধবনিত তুমলি কোলাহল। রাজপরীর আশাবশালায় ভীত অশোবর হেসবা; রাজপরীর উদ্যানে ভীত হরিণীর কাতরোক্তি। সেই ভয়ঙ্করী নিশীথিনীর সকল শব্দ শনিতে শনিতে বিষগ্নীমনে জেব-উন্নিসা ভাবিতেছিল, “ঐ যে কামান ডাকিল, বোধ হয় মোগলের কামান—নহিলে কামান আমন ডাকিতে জানে না। আমার পিতার তোেপ ডাকিল—এমন শত শত তোেপ আমার বাপের আছে—একটাও কি আমার হৃদয়ের জন্য নহে? কি করিলে এই তোপের ম্যুখে বািক পাতিয়া দিয়া, তোপের আগমনে সকল জব্বালা জড়াই ? • কাল সৈন্যমধ্যে গজপঠে চড়িয়া লক্ষ সৈন্যের N