পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

आनFनबले প্রাণত্যাগ করিল। তখন ক্ষধিত, রাস্ট, উত্তেজিত, জ্ঞােনশন্য দস্যদলের মধ্যে একজন বলিল, “শগােল-কুক্কারের মাংস খাইয়াছি, ক্ষধায় প্রাণ যায়, এস ভাই, আজ এই বেটীকে খাই ।” তখন সকলে “জয় কালী!” বলিয়া, উচ্চনাদ করিয়া উঠিল। “বামী কালী! আজি নরমাংস খাইব!” এই বলিয়া সেই ৱিশৰীণ দেহ কৃষ্ণকায় প্ৰেতবৎ মাত্তি সকল অন্ধকারে খাল-খল হাস্য করিয়া, করতালি দিয়া নাচিতে আরম্ভ করিল। দলপতির দেহ পোড়াইবার জন্য একজন অগিন জবালিতে প্রবত্ত হইল। শম্ভক লতা, কাঠ, তৃণ আহরণ করিয়া চকমকি সোলায় আগমন করিয়া, সেই তৃণকাঠ জবালিয়া দিল। তখন অলপ অলপ অগিন জীবলিতে জীবলিতে পার্শবােবত্তীর্ণ আম, জন্মবীর, পনস, তাল, তিন্তিড়ী, খজজ্যর প্রভৃতি শ্যামল পল্লবরাজি, অলপ অলপ প্রভাসিত হইতে লাগিল। কোথাও পাতা আলোতে জলিতে লাগিল, কোথাও ঘাস উত্তজবল হইল। কোথাও অন্ধকার আরও গাঢ় হইল। আপিন প্রস্তুত হইলে, একজন মতশবের পা ধরিয়া টানিয়া আগনে ফেলিতে গেল। তখন আর একজন বলিল, “রাখ, রাও রাও, যদি মহামাংস খাইয়াই আজি প্রাণ রাখিতে হইবে, তবে এই বাড়ার শক ন মাংস কেন খাই ? আজ যাহা লাঠিয়া আনিয়াছি, তাহাই খাইব ; এস, ঐ কচি মেয়েটাকে পোড়াইয়া খাই।” আর একজন বলিল, “যাহা হয় পোড়া বাপ, আর ক্ষধা সয় না।” তখন সকলে লোলািপ হইয়া যেখানে কল্যাণী কন্যা লইয়া শইয়া ছিল, সেই দিকে চাহিল। দেখিল যে, সে স্থান শান্য, কন্যাও নাই, মাতাও নাই। দস্যদিগের বিবাদের সময় সংযোগ দেখিয়া, কল্যাণী কন্যা কোলে করিয়া, কন্যার মখে সতনটি দিয়া, বনমধ্যে পলাইয়াছে। শিকার পলাইয়াছে দেখিয়া মার মার শব্দ করিয়া, সেই প্রেতিমাত্তি দস্যদল চারি দিকে ছটিল। অবস্থাবিশেষে মনষ্যে হিংস্র জন্তু মাত্র। চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ বন অত্যন্ত অন্ধকার, কল্যাণী তাহার ভিতর পথ পায় না। বাক্ষলতাকণাটকের ঘনবিন্যাসে একে পথ নাই, তাহাতে আবার ঘনান্ধকার। বাক্ষলতাকণাটক ভেদ করিয়া কল্যাণী বনমধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিলেন। মেয়েটির গায়ে কাঁটা ফটিতে লাগিল। মেয়েটি মধ্যে মধ্যে কাঁদিতে লাগিল, শনিয়া দস্যরা আরও চীৎকার করিতে লাগিল। কল্যাণী এইরনুপে রধিরাক্তকলেবর হইয়া অনেক দীর বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে চন্দ্রোদয় হইল। এতক্ষণ কল্যাণীর মনে কিছ ভরসা ছিল যে, অন্ধকারে তাঁহাকে দস্যরা দেখিতে পাইবে না, কিয়ৎক্ষণ খাজিয়া নিরস্ত হইবে ; কিন্তু এক্ষণে চন্দ্রোদয় হওয়ায় সে ভরসা গেল। চাঁদ আকাশে উঠিয়া বনের মাথার উপর আলো ঢালিয়া দিল——ভিতরে বনের অন্ধকার, আলোতে ভিজিয়া উঠিল। অন্ধকার উজজবুল হইল। মাঝে মাঝে ছিদ্রের ভিতর দিযা আলো বনের ভিতর প্রবেশ করিয়া উকিঝকি, মারিতে লাগিল। চাঁদ যত উচুতে উঠিতে লাগিল, তত আরও আলো বনে ঢাকিতে লাগিল, অন্ধকারসকল আরও বনেৰ ভিতর লঙ্কাইতে লাগিল। কল্যাণী কন্যা লইয়া আরও বনের ভিতর লকাইতে লাগিলেন। তখন দস্যরা আরও চীৎকার করিয়া চারি দিক হইতে ছটিয়া আসিতে লাগিল—কন্যাটি ভয় পাইয়া আরও চীৎকার করিয়া কাঁদিতে লাগিল। কল্যাণী তখন নিরসন্ত হইয়া আর পলায়নের চেস্টা করিলেন না। এক বহৎ বােক্ষতলে কণাটকশন্য তৃণময় সন্থানে বসিয়া, কন্যাকে ক্লোড়ে করিয়া কেবল ডাকিতে লাগিলেন, “কোথায় তুমি! যাঁহাকে আমি নিত্য পাঁজা করি, নিত্য নমস্কার করি, যাঁহার ভরসায় এই বনমধ্যেও প্রবেশ করিতে পারিয়াছিলাম, কোথায় তুমি, হে মধ্যসািন্দন!” এই সময়ে ভয়ে, ভক্তির প্রগাঢ়তায়, ক্ষধা-তৃষ্ণার অবসাদে, কল্যাণী ক্ৰমে বাহ্যজ্ঞানশকুন্য, আভ্যন্তরিক চৈতন্যময় হইয়া শনিতে লাগিলেন, অন্তরীক্ষে সবগৰীয় সবরে গীত 冬2仏N○(S2ー “হরে মর্যারে মধকৈটভারে। গোপাল গোবিন্দ মকুন্দ শৌরে। হরে মর্যারে মধকৈটভারে।” কল্যাণী বাল্যকালাবধি পরাণে শনিয়াছিলেন যে, দেবর্ষি গগনপথে বীণাযন্ত্রে হরিনাম করিতে করিতে ভুবন ভ্ৰমণ করিযা থাকেন; তাঁহার মনে সেই কলপনা জাগরিত হইতে লাগিল। CSN