পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Note) ব্ৰহ্মচারী, তুমি আমার কন্যা, তোমার এমন কি কথা আছে যে, আমাকে বলিবে না ? আমি যখন বন হইতে তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় তুলিয়া আনি, তৎকালে তোমাকে অত্যন্ত ক্ষৎপিপাসাপীড়িতা বোধ হইয়াছিল, তুমি না খাইলে বাঁচিবে কি প্রকারে ?” কল্যাণী তখন গলদশ্রলোচনে বলিলেন, “আপনি দেবতা, আপনাকে বলিব-—আমার স্বামী এ পয্যন্ত অভুক্ত আছেন, তাঁহার সাক্ষাৎ না পাইলে, কিংবা তাঁহার ভোজনসংবাদ না শনিলে, আমি কি প্রকারে খাইব ?” ব্ৰহ্মচারী জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার স্বামী কোথায় ?” কল্যাণী বলিলেন, “তাহা আমি জানি না।--তিনি দধের সন্ধানে বাহির হইলে পর দস্যরা আমাকে চুরি করিয়া লইয়া আসিয়াছে।” তখন ব্রহ্মচারী একটি একটি করিয়া প্রশন করিয়া, কল্যাণী এবং তাঁহার স্বামীর বক্তান্ত সমন্দিয় অবগত হইলেন। কল্যাণী স্বামীর নাম বলিলেন না, বলিতে পারেন না, কিন্তু আর আর পরিচয়ের পরে ব্রহ্মচারী বঝিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমিই মহেন্দ্রের পত্নী ?” কল্যাণী নিরািত্তর হইয়া যে অগ্নিতে দগ্ধ তপ্ত হইয়াছিল, অবনতম খে তাহাতে কাঠপ্ৰদান করিলেন। তখন ব্রহ্মচারী বলিলেন, “তুমি আমার বাক্য পালন কর, দন্ধ পান কর, আমি তোমার স্বামীর সংবাদ আনিতেছি। তুমি দধি না খাইলে আমি যাইব না।” কল্যাণী বলিলেন, “একটি জল এখানে আছে কি ?” ব্ৰহ্মচারী জলকলস দেখাইয়া দিলেন। কল্যাণী অঞ্জলি পাতিলেন, ব্রহ্মচারী অঞ্জলি পরিয়া জল ঢালিয়া দিলেন। কল্যাণী সেই জলাঞ্জলি ব্রহ্মচারীর পদমলে লইয়া গিয়া বলিলেন, “আপনি ইহাতে পদরেণ দিন৷” ব্ৰহ্মচারী অঙ্গন্ঠের দ্বারা জল সপশ করিলে কল্যাণী সেই জলাঞ্জলি পান করিলেন এবং বলিলেন, “আমি অমােত পান করিয়াছি—আর কিছল খাইতে বলিবেন না--স্বামীর সংবাদ না পাইলে আর কিছ খাইব না।” ব্রহ্মচারী তখন বলিলেন, “তুমি নিভয়ে এই দেউলমধ্যে অবস্থিতি কর, আমি তোমার স্বামীর সন্ধানে চলিলাম।” ষািঠ পরিচ্ছেদ রাত্রি অনেক । চাঁদ মাথার উপর। পণচন্দ্র নহে, আলো তত প্রখর নহে। এক অতি বিস্তীণ প্রান্তরের উপর সেই অন্ধকারের ছায়াবিশিস্ট অসপভ্ৰাট আলো পড়িয়ছে। সে আলোতে মাঠের এপার ওপর দেখা যাইতেছে না। মাঠে কি আছে, কে আছে, দেখা যাইতেছে না। মাঠ যেন অনন্ত, জনশন্য, ভয়ের আবাসস্থান বলিয়া বোধ হইতেছে। সেই মাঠ দিয়া মরিশিদাবাদ ও কলিকাতা যাইবার রাস্তা। রাস্তার ধারে একটি ক্ষদ্র পাহাড়। পাহাড়ের উপর অনেক আমাদি বােক্ষ। গাছের মাথাসকল চাঁদের আলোতে উত্তজবল হইয়া সর-সর করিয়া কাঁপিতেছে। তাহার ছায়া কালো পাথরের উপর কালো হইয়া তর-তর করিয়া কাঁপিতেছে। ব্ৰহ্মচারী সেই পাহাড়ের উপর উঠিয়া শিখরে দাঁড়াইয়া স্তবধ হইয়া শনিতে লাগিলেন—কি শনিতে লাগিলেন, বলিতে পারি না। সেই অনন্ততুল্য প্রান্তরেও কোন শবদ নাই—কেবল বাক্ষাদির মৰ্ম্মমরি শব্দ। এক স্থানে পাহাড়ের মলের নিকটে বড় জঙ্গল। উপরে পাহাড়, নীচে রাজপথ, মধ্যে সেই জঙ্গল। সেখানে কি শবদ হইল বলিতে পারি না-ব্রহ্মচারী সেই দিকে গেলেন। নিবিড় জঙ্গলমধ্যে প্রবেশ করিলেন ; দেখিলেন, সেই বনমধ্যে বাক্ষরাজির অন্ধকার তলদেশে সারি সারি গাছের নীচে মানষি বসিয়া আছে। মানষসকল দীর্ঘাকার, কৃষ্ণকায়, সশস্ত্র ; বিটপবিচ্ছেদে নিপতিত জ্যোৎস্নায় তাহাদের মাজিজত আয়ন্ধসকল জীবলিতেছে। এমন দই শত লোক বসিয়া আছে—একটি কথাও কহিতেছে না। ব্ৰহ্মচারী ধীরে ধীরে তাহাদিগের মধ্যে গিয়া কি একটা ইঙিগত করিলেন—কেহ।। উঠিল না, কেহ কথা কহিল না, কেহ কোন শবদ করিল না। তিনি সকলের সম্পমখ দিয়া সকলকে দেখিতে দেখিতে গেলেন, অন্ধকারে মািখপানে চাহিয়া নিরীক্ষণ করিতে করিতে গেলেন, যেন কাহাকে খাজিতেছেন, পাইতেছেন না। খাজিয়া খাজিয়া এক জনকে চিনিয়া তাহার অঙ্গ সপশ করিয়া ইণ্ডিগত করিলেন। ইঙিগত করিতেই সে উঠিল। ব্রহ্মচারী তাহাকে লইয়া দরে আসিয়া দাঁড়াইলেন। এই ব্যক্তি যাবা পরষ—ঘনকৃষ্ণ গম্মফশমশ্রতে তাহার চন্দ্ৰবদন আবিত— সে বলিষ্ঠকায়, অতি সন্দর পরিষ। সে গৈরিক বসন পরিধান করিয়াছে—সকবাঙ্গে চন্দনশোভা। ব্ৰহ্মচারী তাহাকে বলিলেন, “ভবানন্দ, মহেন্দ্ৰ সিংহের কোন সংবাদ রাখা ?” A NR NS SV