পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊानकभछे গোঁসাই। প্রবেশ করিয়াছ ত বাহির হইতে পারিতেছ না কেন ? এই বলিয়া বৈষ্ণব। আবার হাসিতে লাগিল। রন্ট হইয়া মহেন্দ্ৰ বলিলেন, “তুমি হাসিতেছ, তুমি বাহির হইতে পাের ?” বৈষ্ণব বলিল, “আমার সঙ্গে আইস, আমি পথ দেখাইয়া দিতেছি। তোমরা অবশ্য কোন সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারীর সঙ্গে প্রবেশ করিয়া থাকিবে। নচেৎ এ মঠে আসিবার বা বাহির হইবার পথ আর কেহই জানে না।” শনিয়া মহেন্দ্ৰ বলিলেন, “আপনি সন্তান ?” বৈষ্ণব বলিল, “হাঁ, আমিও সন্তান, আমার সঙ্গে আইস । তোমাকে পথ দেখাইয়া দিবার জন্যই আমি এখানে দাঁড়াইয়া আছি।” মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনার নাম কি ?” বৈষ্ণব বলিল, “আমার নাম ধীর।ানন্দ গোস্বামী।” এই বলিয়া ধীর।ানন্দ অগ্ৰে অগ্ৰে চলিল; মহেন্দ্র, কল্যাণী পাশচাং পশ্চাৎ চলিলেন । ধীর।ানন্দ অতি দগম পথ দিয়া তাঁহাদিগকে বাহির করিয়া দিয়া, একা বনমধ্যে পানঃপ্রবেশ করিল। আনন্দারণ্য হইতে তাঁহারা বাহিরে আসিলে কিছ দরে সবােক্ষ প্রান্তর আরম্ভ হইল। প্রান্তর এক দিকে রহিল, বনের ধারে ধারে রাজপথ। এক স্থানে অরণ্যমধ্য দিয়া একটি ক্ষদ্র নদী কল-কল শব্দে বহিতেছে। জল অতি পরিভাকার, নিবিড় মেঘের মত কালো। দই পাশে শ্যামল শোভাময় নানাজাতীয় বক্ষ নদীকে ছায়া করিয়া আছে, নানাজাতীয় পক্ষী বক্ষে বসিয়া নানাবিধ রব করিতেছে। সেই রব—সেও মধর- মধ্যর নদীর রবের সঙ্গে মিশিতেছে। তেমনি করিয়া ব্যুক্ষের ছায়া আর জলের বর্ণ মিশিয়াছে। কল্যাণীর মনও বঝি সেই ছায়ার সঙেগ মিশিল। কল্যাণী নদীতীরে এক বক্ষমতুলে বসিলেন, স্বামীকে নিকটে বসিতে বলিলেন। স্বামী বসিলেন, কল্যাণী স্বামীর কোল হইতে কন্যাকে কোলে লইলেন। স্বামীর হাত হাতে লইয়া কিছফক্ষণ নীরবে: বসিয়া রহিলেন। পরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমাকে আজি বড় বিমর্ষ দেখিতেছি! বিপদ যাহা, তাহা হইতে উদ্ধার পাইয়াছি-এখন এত বিষাদ কেন ?” মহেন্দ্ৰ দীঘ নিশবাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন,-“আমি আর আপনার নহি, --আমি কি করিব বঝিতে পারি না।” ক । কেন ? মহে। তোমাকে হরাইলে পর আমার যাহা যাহা ঘটিয়াছিল শন। এই বলিয়া যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, মহেন্দ্র তাহা সবিস্তারে বলিলেন। কল্যাণী বলিলেন, “আমারও অনেক কম্পট, অনেক বিপদ গিয়াছে। তুমি শনিয়া আর কি করিবে ? অতিশয় বিপদেও আমার কেমন করে ঘািম আসিয়াছিল, বলিতে পারি না—কিন্তু আমি কাল শেষ রাত্ৰে ঘামাইয়াছিলাম। ঘামাইয়া স্বপন দেখিয়াছিলাম। দেখিলাম--কি পণ্যবলে বলিতে পারি না।--আমি এক অপব্ব স্থানে গিয়াছি। সেখানে মাটি নাই। কেবল আলো, অতি শীতল মেঘভাঙগা আলোর মত বড় মধর আলো। সেখানে মনষ্যে নাই, কেবল আলোময় মাত্তি, ——সেখানে শবদ নাই, কেবল অতিন্দরে যেন কি মধ্যর গীতবাদ্য হইতেছে, এমনি একটা শবদ । সৰ্ব্ববােদা যেন নািতন ফটিয়াছে, এমনি লক্ষ লক্ষ মল্লিকা, মালতী, গন্ধরাজের গন্ধ। সেখানে যেন সকলের উপরে সকলের দর্শনীয় স্থানে কে বসিয়া আছেন, যেন নীল পৰ্ব্ববত অগিনপ্রভ হইয়া ভিতরে মন্দ মন্দ জীবলিতেছে। অগিনময় বহৎ কিরীটি তাঁহার মাথায় । তাঁর যেন চারি হাত । তাঁর দই দিকে কি আমি চিনিতে পারিলাম না-বোধ হয় স্ত্রীমত্তি, কিন্তু এত রােপ, এত জ্যোতিঃ, এত সৌরভ যে, আমি সে দিকে চাহিলেই বিহবল হইতে লাগিলাম ; চাহিতে পারিলাম না, দেখিতে পারিলাম না যে কে। যেন সেই চতুভুজের সম্মখে দাঁড়াইয়া আর এক সন্ত্রীমত্তি । সেও জ্যোতিমময়ী ; কিন্তু চারি দিকে মেঘ, আভা ভাল বাহির হইতেছে না, অসপল্‌ট: বঝা যাইতেছে যে, অতি শীর্ণা, কিন্তু অতি রপবতী মৰ্ম্মম পীড়িত কোন স্ত্রীমত্তি কাঁদিতেছে। আমাকে যেন সগন্ধি মন্দ পবন বহিয়া বহিয়া, ঢেউ দিতে দিতে, সেই চতুভূজের সিংহাসনতলে আনিয়া ফেলিল। যেন সেই মেঘমণিডতা শীর্ণ সত্ৰী আমাকে দেখাইয়া বলিল, “এই সে-ইহােরই জন্য মহেন্দ্র আমার কোলে আসে না।” তখন যেন এক অতি পরিস্কার সমধর বাঁশীর শব্দের মত শব্দ হইল। সেই চতুভূজ যেন আমাকে বলিলেন, “তুমি স্বামীকে ছাড়িয়া আমার কাছে ○ ○ >